মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
গণতন্ত্র সূচকে দশধাপ নীচে নেমে গেল ভারত। ২০০৬ সালের পর থেকে ভারত কখনো এত নীচে নামেনি। এই রিপোর্ট এলো এমন এক সময়ে যখন সিএএবিরোধী আন্দোলনে দেশ উত্তাল। রিপোর্ট নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক।
ডেমোক্রেসি ইনডেক্স ২০১৯। সেখানে দশ ধাপ নেমে গেল ভারত। যারা এই তালিকা তৈরি ও প্রকাশ করেছে, সেই ইকনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের মতে, ভারতের নীচে নামার মূল কারণ তিনটি। জম্মু ও কাশ্মীর, এনআরসি এবং সিএএ। সেই সূত্র ধরে নাগরিক অধিকার দমন করা। ফলে দশ এর স্কেলে ভারত পেয়েছে ৬.৯। সবমিলিয়ে ১৬৫টি দেশ ও দুটি অঞ্চলের মধ্যে ভারতের স্থান ৫১। ভারতের পক্ষে অস্বস্তির কথা হল, সংগঠনটি জানিয়েছে, ২০২০ সালে গণতন্ত্রের সূচকে ভারত আরও নামবে। কারণ, ডিসেম্বরে সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধন বিল পাস হয়েছে। এখন তা আইনে পরিণত হয়েছে। এই আইন বিভেদকামী বলে মনে করছে সংগঠনটি। আর ২০১৯ এর ক্ষেত্রে ভারতের নীচে নামার প্রধান কারণ হল, কাশ্মীর ও এনআরসি। সারা বিশ্বে ৫৪টি দেশের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা খারাপ হয়েছে বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে। তালিকায় এক নম্বরে আছে নরওয়ে। জার্মানি ১৩ নম্বরে, বাংলাদেশ ৮০, পাকিস্তান ১০৮, চীন ১৫৩ ও দক্ষিণ কোরিয়া ১৬৭ তম স্থানে আছে।
বিরোধী দলগুলির মতে, কারণ শুধু এই তিনটিই নয়, আরও আছে। রাজ্যসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশজুড়ে বিষাক্ত প্রচার চালাচ্ছেন। তারা ছাত্রদের কন্ঠস্বর রুদ্ধ করে দিতে চাইছেন, কোনও প্রতিবাদই তারা বরদাস্ত করতে রাজি নন। সংসদ সহ সব প্রধান প্রতিষ্ঠানকে হত্যা করতে চাইছেন। সব চেয়ে বড় কথা, যে গণতান্ত্রিক ধারণা ও মূল্যবোধ, যা আমরা স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে পেয়েছি, তাকেও নষ্ট করে দিতে চাইছেন। পশ্চিমবঙ্গ দেশকে দেখিয়ে দিয়েছে, কী ভাবে সিএএ নিয়ে প্রতিবাদ করতে হয়। দেশজুড়ে ছাত্রছাত্রীরা সরকারের ওপর ক্রুদ্ধ। এরকম অবস্থা হলে সরকার কতটা সঙ্কটে পড়ে তা সকলেই জানেন।’
এ বিষয়ে সন্দেহ নেই যে, ছাত্রছাত্রীরা দেশজুড়ে সিএএ, এনআরসি নিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। যেভাবে জামিয়া, আলিগড়, জেএনইউতে বিক্ষোভ দমন করা হয়েছে তার প্রতিবাদ হচ্ছে। ছাত্রদের রোষ বাড়লে তার প্রভাব পড়ে। প্রবীণ সাংবাদিক ও পিইউডিআর নেতা আশিস গুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, '‘আমার ফোন তো সরকার ট্যাপ করে। ভারতে কার কার ফোন ট্যাপ করা হয়, তা নিয়ে কানাডার সংস্থা তালিকা দিয়েছিল, তার মধ্যে আমার নামও ছিল। আর নাগরিক আন্দোলন দমন করার চেষ্টা আগের আমলেও হয়েছে। আন্দোলনে লাঠি, গুলি চলেছে। কিন্তু পরে তারা কিছু দাবি মেনে নিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আন্দোলনের ফলে সরকারের সিদ্ধান্তে বদল এসেছে। কিন্তু বর্তমান সরকার অনড় মনোভাব নিয়ে চলছে। ফলে গণতন্ত্র সূচকে ভারত আরও নীচে নামতে পারে।’
বিজেপি অবশ্য এই সমীক্ষার স্বচ্ছ্বতা নিয়ে, বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘কিছু পশ্চিমী সংস্থা এই ধরনের সমীক্ষা করে। তাদের স্বচ্ছ্বতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে। আমি যা দেখেছি, কাশ্মীরের জন্যই মূলত ভারত নীচে নেমে এসেছে। ওদের মনে রাখতে হবে, কাশ্মীরে ৪৫ হাজার মানুষ সন্ত্রাসবাদের শিকার হয়েছেন। সরকার সেখানে স্বাভাবিকতা আনার জন্য কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। তাতেই আপত্তি ওই সংস্থার। এটা দুর্ভাগ্যজনক।’ তবে এই বিজেপি নেতাও প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিচ্ছেন, কাশ্মীরে সাময়িকভাবে সরকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ওপর বিধিনিষেধ চাপিয়েছিল। সায়ন্তন বলেছেন, ‘এক মাসের জন্য কাশ্মীরে খুবই কড়া ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। তাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে ও হচ্ছে। কিন্তু সরকার কোথাও গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও ব্যবস্থার ওপর হাত দিচ্ছে, এমন উদাহরণ নেই।’
কিন্তু সুপ্রিম কোর্টই সম্প্রতি কাশ্মীরে ইন্টারনেট দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রাখা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছিল, নেট পরিষেবা পাওয়া লোকের মৌলিক অধিকার। যখন তখন, যত্রতত্র ১৪৪ ধারা জারিকে ঔপনিবেশিক শাসনের কথা মনে পড়িয়ে দেয় বলেও জানিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। উত্তর প্রদেশে এখনও বারবার করে অভিযোগ উঠছে, জোর করে সেখানে প্রতিবাদ থামাবার চেষ্টা হচ্ছে। সে কারণে এই রিপোর্ট সরকারের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সূত্র: ডয়চে ভেলে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।