মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
গত ৪২ বছরে মধ্যে ভারতের অর্থনীতির অবস্থা এখন সবচেয়ে খারাপ সময় অতিক্রম করছে। প্রকৃত ও নমিনাল, দরকম বৃদ্ধির হারই ব্যাপক কমেছে, এখন যা অবস্থা তা বেশ কিছু দশকের মধ্যে নিম্নতম। রোজগারদায়ী আর্থিক বৃদ্ধির হার তার চেয়েও খারাপ, এবং যেসব ক্ষেত্র থেকে বেশি কর্মসসংস্থানের ঐতিহ্য রয়েছে, সেগুলির দুর্বলতাও ধরা পড়তে শুরু করেছে। বর্তমানে বেকারত্বের হারও কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। বেশ কিছু হিসাব থেকে দেখা যাচ্ছে ২০১২ থেকে ১৮ সালের মধ্যে ভারতে রোজগারকারী মানুষের সংখ্যা ক্রমহ্রাসমান- যা ভারতের ইতিহাসে আগে কখনও ঘটেনি। অথচ বিপুল কর্মসংস্থানসহ ভালো দিনের প্রতিশ্রুতি দিয়েই ক্ষমতায় এসেছিল নরেন্দ্র মোদির সরকার।
আরেকটি বড় সমস্য হচ্ছে ভারতে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক বৈষম্য। গতকাল অক্সফামের এক অর্থনৈতিক সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, ভারতের মোট ৬৩ জন ধনকুবের বিলিওনিয়ারের মোট সম্পদের পরিমাণ দেশের ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের কেন্দ্রীয় বাজেটের বরাদ্দ অর্থ বা ২৪,৪২,২০০ কোটির চেয়েও বেশি। ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের পাঁচদিন ব্যাপী বৈঠকের ঠিক আগে প্রকাশিত ওই সমীক্ষার ফলাফলে আরও জানানো হয়েছে, ভারতের ১ শতাংশ ধনী ব্যক্তির সম্পদের পরিমাণ দেশের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ মানুষের মোট সম্পদের চারগুণ।
এমন পরিস্থিতিতেই আগামী ১ ফেব্রুয়ারি আবার ভারতের আরেকটি বাজেট পেশ হতে চলেছে। কিন্তু মোদি সরকার কি পারবে এবারের বাজেটের মাধ্যমে দেশের আর্থিক সংকট মোচন করতে? শুধু একটা বাজেটের মাধ্যমেই দেশের অর্থনীতির সংকট কেটে যাবে, এমনটা কখনোই মনে হয় না। কিন্তু ভারতে নানা সময়ে নানা ধরনের বাজেট দেশের আর্থিক অভিমুখ নির্ধারণ করেছে, এ ব্যাপারে তো কোনো সন্দেহ নেই।
কিছুদিন আগে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তুলনা তো দূরের কথা, দক্ষিণ এশিয়ায়ও কাজের সুযোগ তৈরিতে পিছিয়ে পড়েছে ভারত। শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও এমনকি আফগানিস্তান, পাকিস্তানের মতো দেশে জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ (প্রায় ৩৩ শতাংশ) শিক্ষা, কাজ বা কোনো প্রশিক্ষণে যুক্ত নয়। অথচ ভারতে সেই হার ৪০ শতাংশের বেশি। অর্থাৎ প্রতি পাঁচজনে দুজন আক্ষরিক অর্থেই বেকার। সম্প্রতি কাজের বাজারের এমন বিপন্ন ছবি ফুটে উঠেছে ভারত সরকারের পরিসংখ্যানেও। এনএসএসও রিপোর্ট জানিয়েছে, বেকারত্ব ৪৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
কর্মসংস্থান না হলে মানুষের হাতে টাকা আসে না। এতে স্বাভাবিকভাবেই মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়। কমে যায় তাদের কেনার ক্ষমতা। সে কারণে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ ব্যানার্জি গরিব মানুষের হাতে বেশি বেশি টাকা তুলে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ভারতের সরকারকে। তার মত, গরিব মানুষের হাতে টাকা এলে প্রথমেই তারা জীবনমান উন্নয়নে ব্যয় করবে। এতে অর্থনীতির গতি খুব স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে।
প্রতিবেদনে উঠে আসা নানা সমস্যা উল্লেখ করে জাতিসংঘের আর্থিক ও সামাজিক কমিশনের (দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া) প্রধান নাগেশ কুমার বলেন, শ্লথ বিশ্ব অর্থনীতির ছায়া থেকে নিজেদের দেশকে বের করতে ২০১৯ সালে সুদ কমিয়েছে ৬৪টি শীর্ষ ব্যাংক। কিন্তু এতে বিশেষ লাভ হয়নি। ভারতও এর ব্যতিক্রম নয়। রিজার্ভ ব্যাংক টানা সুদ কমালেও চাহিদা চাঙা হয়নি। হাল ফেরেনি অর্থনীতির। এ জন্য অবকাঠামো ও শিক্ষার মতো ক্ষেত্রে বিপুল সরকারি বিনিয়োগ প্রয়োজন। এতে ঘাটতির লক্ষ্য আপাতত শিথিল করতে হলেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু সম্প্রতি ভারত সরকার রাজস্ব ঘাটতি কমাতে সামাজিক প্রকল্প থেকে শিক্ষা-স্বাস্থ্যে খরচ ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, বিজনেস স্টান্ডার্ড।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।