Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

টেলিযোগাযোগে কাঙ্ক্ষিত সেবা নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম | আপডেট : ১২:০৭ এএম, ১৭ জানুয়ারি, ২০২০

সরকার গ্রাহকদের ফাইভজি সেবা প্রদানের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশে প্রথমবারের মতো ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা’ শুরু হয়েছে গতকাল থেকে। তিনদিন স্থায়ী মেলায় ফাইভজি প্রযুক্তির বিভিন্ন দিক প্রদর্শন করা হবে। মেলায় আগত দর্শনার্থীরা ফাইভজি প্রযুক্তি ব্যবহার করে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারবেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার গত বুধবার সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, মেলার বড় বিশেষত্ব হচ্ছে, দর্শকরা স্বচক্ষে ফাইভজি দেখবেন, ব্যবহার করবেন, নিজেদের হাতে নিয়ে দেখে বুঝতে পারবেন ফাইভজি কী জিনিস। ফাইভজির সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য প্রযুক্তিগুলো প্রদর্শিত হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ডিজিটাল প্রযুক্তির নিত্যনতুন উদ্ভাবন পৃথিবীকে বদলে দিচ্ছে। প্রযুক্তির নতুন প্রজন্মের উদ্ভাবন উন্নতর সেবা নিশ্চিত করছে। মানুষের জীবনব্যবস্থা সহজ ও দ্রæতায়িত করছে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে ফোরজি থেকে ফাইভজি সেবা দেয়ার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। কারণ, আমরা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সমান তালে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। প্রশ্ন উঠতে পারে, ফোরজি সেবা কি দেশে নিশ্চিত হয়েছে এবং মানুষ কি ফোরজি সেবা ভোগ করতে পারছে? এ প্রশ্নের উত্তর নেতিবাচক এবং হতাশাজনক। বিটিআরসি ও অপারেটরদের কাছে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটগ্রাহকদের যে বিপুল সংখ্যক অভিযোগ জমা পড়েছে এবং প্রতিনিয়ত পড়ছে, তা থেকে বুঝা যায়, অধিকাংশ গ্রাহক প্রতিশ্রæত সেবা পাচ্ছেন না। অভিযোগে প্রকাশ, ফোরজি সেবা কিনে গ্রাহকরা টুজির সেবাও পাচ্ছেন না। ইন্টারনেটে ধীর গতি, ফোনের কল ড্রপ, মিউট কলের উপদ্রব ইত্যাদিতে তারা বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ। নি¤œসেবার কারণে মন্ত্রী-এমপিরাও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। বিটিআরসির জরিপেও দেখা গেছে, ফোরজি সেবায় মানসম্পন্ন যে গতিসীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে তিন অপারেটর: গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক। কোনো অপারেটরই নির্ধারিত গতিসীমার ধারে কাছে নেই। কল সেটআপেও ব্যর্থতার বৃত্তে রয়েছে তিন অপারেটর: গ্রামীণফোন, বাংলালিংক ও টেলিটক। আর কল ড্রপে বেঞ্চমার্কে নেই গ্রামীণফোন। খোদ রাজধানীতে ফোরজি সেবা থেকে বঞ্চিত গ্রাহকরা। জেলা, উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে এই সেবার অবস্থা কী, তা সহজেই অনুমেয়। বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কিছুদিন আগে জানিয়েছিলেন, ৯০ শতাংশ গ্রাহক এখনো ফোরজি সেবা গ্রহণই করেনি। তার মতে, ফাইভজির ডিভাইস দেশে পর্যাপ্ত নয়; দামও খুব বেশি। নেটওয়ার্কব্যবস্থা খুবই দুর্বল। এখন পর্যন্ত অপারেটারদের স্পেকট্রাম আছে ৩৫ মেগাহার্জ। অথচ ফাইভজিতে থাকতে হবে প্রায় ১০০ মেগাহার্জ। এই যদি অবস্থা, তবে তড়িঘড়ি করে ফাইভজি সেবা দেয়ার পদক্ষেপ কেন?

যেখানে ফোরজি সেবার স্থলে টুজির সেবাও গ্রাহকরা পাচ্ছেন না, সেখানে ফাইভজি সেবা দেয়ার পদক্ষেপ কতটা যুক্তিসঙ্গত, সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। অনেকেরই জানা, ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনী ইশতেহারে ২০২১-২৩ সালের মধ্যে ফাইভজি সেবা দেয়ার প্রতিশ্রæতি আছে। নির্বাচনী ইশতেহারে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রæতি থাকলে তা পূরণ করার নৈতিক বাধ্যবাধকতা থাকে। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এ জন্য অবশ্যই উপযুক্ত সামর্থ ও অনুকূল বাস্তবতা বিদ্যমান থাকতে হবে। সেটা কি আছে? নেই যে, সেটা তো বুঝাই যাচ্ছে। শুধু ‘প্রচারে থাকা’ কিংবা ‘কৃতিত্ব জাহির’ করার জন্য এটা করতে হবে, তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এজন্য সময় এবং ভালোভাবে প্রস্তুতি গ্রহণের সুযোগ নেয়া প্রয়োজন ছিল। নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যায়নি। যথেষ্ট সময় রয়েছে। লোক দেখানোর জন্য চটজলটি তাই কিছু করা সমীচীন নয়। এতে জনগণের কোনো লাভ হয় না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ ফাইভজি সেবা পেয়ে উপকৃত হয়েছে। তাদের উন্নয়ন, অগ্রগতি, জীবনযাত্রার মান ও গতি বেড়েছে। আমরা যতদূর জেনেছি, ফাইভজি সেবা নেটওয়ার্কক্ষমতাকে অনেক বাড়িয়ে দেয়। এই প্রযুক্তির একটি বড় সেবা হলো, আইওটি, যেখানে যন্ত্র থেকে যন্ত্রে যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসগুলোকে গ্রাহক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। উন্নত ও বাড়তি সুবিধার জন্য এই প্রযুক্তিকে গ্রাহকদের স্বাগত জানানোর কথা। কিন্তু আমাদের দেশের গ্রহাকরা এই সেবাসুবিধা গ্রহণ ও পাওয়ার ক্ষেত্রে নিঃসংশয় হতে পারছেন না। যেমনটা ফোরজির ক্ষেত্রে দেখা গেছে: গ্রাহকদের অনেকেই সেটা গ্রহণ করতে পারেননি। আবার যাদের তা দেয়ার কথা, তারাও দিতে পারেনি। ফাইভজির ক্ষেত্রেও যদি এরকমই হয়। তবে সেটা এক ধরনের প্রতারণার শামিল বলে গণ্য হবে।

অনেকে মনে করেন, ফাইভজির লাইসেন্স দিয়ে টাকা আদায়ের জন্যই এই সেবা প্রদানের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বাস্তবে এই সেবা দেয়ার সামর্থ সংশ্লিষ্টদের নেই। মোবাইল ফোন অপারেটরদের বিরুদ্ধে কল ড্রপ, মিউট কল, ও কল সেটআপে দীর্ঘ সময় নেয়া ইত্যাদি অভিযোগ তো আছেই, সেই সঙ্গে রয়েছে ইচ্ছমত অর্থ কেটে নেয়ার অভিযোগ। ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে ধীরগতি, অব্যবহৃত ডাটা পরবর্তীতে যোগ না হওয়া, টাকা কেটে নিয়ে ডাটা না দেয়া ইত্যাদি অভিযোগ রয়েছে। দেশে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করছে লাইসেন্সধারী ১৭০০ ইন্টানেট সার্ভিস প্রোভাইডার। অভিযোগ আছে, সক্ষমতা যাচাই না করেই অধিকাংশ লাইসেন্স দেয়া হয়েছে এবং এখনো দেয়া হচ্ছে। অভিজ্ঞতাহীন, আন্তরিকতাহীন লাইসেন্সধারীর কাছ থেকে কাক্সিক্ষত সেবা পাওয়া সম্ভব নয়, সেটা বলাই বাহুল্য। উন্নততর সেবা কে না চায়? সবাই চায়। তার আগে এখনকার প্রাপ্য সেবা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিশ্রæত সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে অপারগতা, ব্যর্থতা, দুর্নীতি ও প্রতারণার ন্যয়সঙ্গত প্রতিকার করতে হবে। লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে সক্ষমতা ও অভিজ্ঞতার বিষয়টি যাচাই-বাচাই করতে হবে। টেলিযোগাযোগের সকল ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলেই গ্রাহকদের প্রাপ্য সেবা পাওয়া সম্ভবপর হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টেলিযোগাযোগ


আরও
আরও পড়ুন