পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছরই অসংখ্য শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই পড়াশোনা শেষ করে সেখানে চাকরিতে প্রবেশ করে পরবর্তী সময়ে সেখানকার স্থায়ী নাগরিক হয়ে যান। এতে করে বাংলাদেশ প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক মেধাবী শিক্ষার্থী হারাচ্ছে। একজন মেধাবী দেশে যখন তাঁর যোগ্যতা অনুসারে চাকরি না পান, তখন তিনি হতাশ হবেন, এটাই স্বাভাবিক। সে ক্ষেত্রে নিরাপদ, স্বচ্ছল জীবনযাপনের জন্য তিনি যদি বিদেশে গমন করেন, তাহলে তাঁকে দোষ দেওয়া যায় না। কাজেই বিদেশে মেধা পাচার রোধে দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষকে এখনই সচেতন হতে হবে। এ দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের যথাযোগ্য মূল্যায়নের মাধ্যমে তাঁদের দেশের কল্যাণে নিয়োজিত করতে হবে।
উচ্চ শিক্ষালয়গুলোর নিয়ন্ত্রক বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য দিয়ে শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণে ব্যয় সামঞ্জস্য করার ক্ষেত্রে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। একজন উচ্চ শিক্ষার্থী মেডিকেল, বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং, পিএইচডি ও অন্যান্য শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত তহবিল ছাড়াও সরকারের রাজস্ব খাত থেকে বড় একটা অংশ ব্যয় করতে হয়। এই শিক্ষার্থী তার শিক্ষা জীবন শেষে দেশের কল্যাণে কাজ করবে এটাই দেশ চায়। অথচ বড় বড় ডিগ্রি অর্জন করে তারা বিদেশে পাড়ি জমিয়ে ঐদেশের সেবা করছে। আমাদের গরিব দেশের মানুষের করের টাকায় অর্জন করা মেধা চলে যাচ্ছে অন্য দেশে। কিন্তু কেন চলে যাচ্ছে মেধাবীরা, এই প্রশ্ন সবার।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, নিরাপত্তাহীনতাসহ বিকশিত হওয়ার অপর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবে মেধাবী তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশ উন্নত দেশে পাড়ি জমায়। উন্নত দেশের গবেষণা, প্রযুক্তি আর স্থিতিশীলতাকে কাজে লাগিয়ে এই মেধাবীরাই সেসব দেশকে করেন আরও শক্তিশালী, পরাক্রমশালী। এটা মেধা পাচার বা ব্রেইন ড্রেইন। বাংলাদেশে সরকারি অথবা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সবখানেই আছেন মেধাবীরা। চোখেমুখে তাঁদের জানার আগ্রহ অপরিসীম। সজীব তারুণ্যে ভরা এসব মেধাবী শিক্ষায় নিজেদের তৈরি করে অনেকেই কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেন। ছাত্রাবস্থায় অথবা কর্মজীবনের শুরুতেই তাঁদের এক বিশাল অংশ বিদেশে যাওয়ার চেষ্টায় থাকে। একসময় চলেও যায়। মেধার বিকাশ ঘটাতে গুণগত শিক্ষা আর উন্নত গবেষণার দরকার আছে। তা ছাড়া প্রতিযোগী না থাকলে প্রতিযোগিতা জমে না।
বিশ্বায়নের যুগে তাল মেলাতে বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে ঠিকই। তবে তাদের অনেকেই দেশ থেকে চলে যাচ্ছে বাইরে। দেশের মাটিতে বড় হয়ে, সেখানে উচ্চশিক্ষা নিয়ে, পরে শিক্ষকতাসহ প্রথম সারির বিভিন্ন পেশার কর্মক্ষেত্র ছেড়ে বিদেশে গমন করছে। ভিন দেশের উন্নত গবেষণা ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের আরও যোগ্য করছে। অনেকেই বাইরে গিয়ে সফল হলেও কেউ কেউ হয়তো সেটা পারছে না। তবু যেন হাল ছাড়া নয়, থিতু হয়ে পড়ে থেকে সেসব দেশে স্থায়ী হয়ে যায় তারা।
উন্নত বিশ্বে শিক্ষা ও গবেষণায় রাজনীতির ভিন্ন ভিন্ন রং নেই। জাতি তৈরির মহান পেশা শিক্ষক হতে হলুদ-বেগুনি, সাদা দল নয়, যোগ্যতা ও গবেষণার মানই মুখ্য। বিশ্ববিদ্যালয় আর বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গবেষকেরা দিনরাত কাজ করেন আবিষ্কারের নেশায়। শিক্ষা ও গবেষণায় অর্জিত ফসল ছড়িয়ে যাচ্ছে সবার কাছে। কৃষি, শিল্পকারখানায় সব জায়গায়। বিদেশের মাটিতে ওদের সঙ্গে মিশে প্রতিযোগিতায় আমরাও পারি। দেশেও সম্ভব। নিজ জায়গায় স্বচ্ছতা ও দায়িত্ববোধের খুব দরকার। সে পরিবেশ তৈরির জন্য রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে। তুখোড় মেধাবীদের সুবিধা দিয়ে দেশের জন্য কাজে লাগাতে হবে।
সম্প্রতি দেখা যায় বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার হত্যার পর সারাদেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠির হৃদয়ে একটি ঝাঁকুনি দিয়েছে। শিক্ষাঙ্গণে সন্ত্রাস, ছাত্র রাজনীতি, শিক্ষদের রাজনীতি, অতি দলাদলী, যৌন হয়রানিসহ নানাবিধ কারণে মেধাবীরা নিরাপদ আশ্রয়ে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে। এতে করে তারা শুধু বিদেশ পাড়ি দিচ্ছে না সাথে নিয়ে যাচ্ছে অপার সম্ভবনা মেধা। ১৯৯১ সালে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের সেরা ছাত্র এসএসসি ও এইচএসসি-তে সারাদেশের সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অর্জনকারী আরিফুল হক নিহত হওয়ার পর তৎকালীণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি পদত্যাগ করে শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করার সুপারিশ করেছিলেন যা বর্তমান সময়ে ভাবাও যায় না। কিন্তু দেশের স্বার্থে মেধাপাচার রোধ করতে হলে প্রয়োজনে যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।