পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মোবায়েদুর রহমান : গুলশানের আর্টিসান বেকারিতে ভয়াবহ হত্যাকান্ড ঘটেছে ১ জুলাই। শোলাকিয়ায় ঘটেছে ৭ জুলাই। গুলশানের ঘটনার পর ১ মাস ১০ দিন এবং শোলাকিয়ার ঘটনার পর ১ মাস ৪ দিন অতিবাহিত হলো। ভবিষ্যতে এ ধরনের ভয়াবহ ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য সরকার যেসব পদক্ষেপকে সঠিক মনে করেন সেসব পদক্ষেপই তারা গ্রহণ করছেন। দেশের কোনো প্রান্ত থেকেই কেউ এসব পদক্ষেপের বিরোধিতা করেনি। কিভাবে ঘটল, ঘটার পর কি হচ্ছে, এগুলো নিয়ে প্রতিটি সংবাদপত্র এবং টেলিভিশনে অসংখ্য রিপোর্ট ও ভাষ্য লেখা হচ্ছে এবং অসংখ্য বক্তা টকশোতে কথা বলছেন। ঐসব টকশো এবং ভাষ্যকে অ্যাপ্রিসিয়েট করেও বলা যায় যে, কিভাবে এ ধরনের ঘটনার পুনারাবৃত্তি রোধ করা যায় সেগুলো নিয়ে যে ধরনের লেখালেখি হচ্ছে সেসব লেখালেখি সমস্যার সঠিক কারণ নির্ণয় করতে পারছে বলে আমার মনে হচ্ছে না। পাশাপাশি কী করলে ভবিষ্যতে আর এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না সেটিও যুক্তিতর্ক ও তথ্য দিয়ে বোঝানো সম্ভব হচ্ছে বলে আমার মনে হচ্ছে না। আমার অভিমত এই যে, জঙ্গিবাদ দমনের জন্য ল অ্যান্ড অর্ডার ফ্রন্টে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে সেগুলো চলতে থাকবে কি না সেটি ভালো বুঝবে প্রশাসন। কারণ তারা এসব ব্যাপারে অভিজ্ঞ এবং দক্ষ।
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এখনো বন্ধ
কিন্তু পাশাপশি এটিও দেখতে হবে যে, দেশের অসংখ্য ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল আজো বন্ধ আছে কেন? ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো ব্রিটিশ কাউন্সিল। হামলার পর থেকে ব্রিটিশদের এই সংস্থাটি বন্ধ রয়েছে। কত দিন এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ থাকবে? IELTS পরীক্ষা দেয়ার সময় আগত। অবশ্য তারা বলেছে যে, ঐ পরীক্ষাটি যথাসময়েই অনুষ্ঠিত হবে। তার পরও ছাত্র-ছাত্রী এবং অভিভাবকরা চান, অতিসত্বর এটি খুলে যাক। ইংলিশ মিডিয়ামের বৃহত্তম স্কুলের নাম স্কলাস্টিকা। হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী পড়ে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। ৯ আগস্ট যখন এই ভাষ্যটি লিখছি তখন পর্যন্ত স্কলাস্টিকা স্কুল বন্ধই রয়েছে। কবে খুলবে সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট করে কোনো কিছু বলতে পারেননি। এভাবে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অত্যন্ত নাম করা স্কুলগুলো অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি একটি জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির ওপর বসে আছে। এখানে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা নাকি ২০ হাজারেরও ওপরে। এই প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ নিয়েও মানুষ অস্থির চিন্তার মধ্যে সময় কাটাচ্ছেন।
হোলি আর্টিসান, শোলাকিয়া এবং কল্যাণপুর অপারেশনে যেসব সন্ত্রাসী মারা গেছে তাদের অধিকাংশই এক সময় স্কলাস্টিকা বা নর্থ সাউথে পড়ত। সরকার যদি অভয় দেয় তাহলে একটি কথা বলা যায়। সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে যে কয়জন সন্ত্রাসী জড়িত ছিল তাদের সংখ্যা কত? আর স্কলাস্টিকা এবং নর্থ সাউথে যত ছাত্রছাত্রী পড়েছে বা পড়ছে তাদের সংখ্যা কত? মোট ছাত্র-ছাত্রীর তুলনায় সন্ত্রাসীদের সংখ্যা এতই ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ যে, তাদেরকে অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও খুঁজে পাওয়া সম্ভব কি না তাতে সংশয় রয়েছে। তাহলে হাতেগোনা মাত্র এ ক’টি ছাত্র বা প্রাক্তন ছাত্রের জন্য হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর ভবিষ্যৎ বিপন্ন হবে কেন? আমি কিন্তু স্কলাস্টিকা বা নর্থ সাউথকে আলাদাভাবে আইডেন্টিফাই করছি না। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল, যেখানে প্রধানত ধনাঢ্য ব্যক্তির সন্তানরাই পড়ে এবং যেখানকার লেখাপড়ার মান উন্নত তাদের মধ্যে নমুনা হিসেবে এই দু’টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করেছি। আসলে বন্ধ রয়েছে সব ক’টি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল।
বিদেশমুখী প্রবণতা
আজ সরকার, শিক্ষাবিদ, সমাজবিজ্ঞানী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ভাবতে হবে যে, আমরা কি এক এক্সট্রিম থেকে আরেক এক্সট্রিমে যাচ্ছি কি না। এর আগে উচ্চস্বরে এবং সম্মিলিতভাবে বছরের পর বছর বলা হয়েছে যে, মাদ্রাসাগুলো, বিশেষ করে কওমি মাদ্রাসা, জঙ্গিবাদের প্রজনন ক্ষেত্র। যারা এই দেশটিকে নিয়ে ভাবেন তারা সেদিনও ভেবেছিলেন যে, জঙ্গিদের সংখ্যা আর কত হবে? ২৫, ৫০ বা ১০০? আর কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী হলো ২০ লাখ। এই ১০, ২০, ৫০ বা ১০০ জনের জন্য ঐ ২০ লাখ ছাত্র-ছাত্রী এবং কয়েক হাজার শিক্ষক কলঙ্কিত হবেন কেন? যারা দেশ নিয়ে ভাবেন, তারা আজো ভাবছেন যে, সেদিন যেমন কওমি মাদ্রাসাগুলোকে দায়ী করা হয়েছিল আজ তেমনি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোকে দায়ী করা হচ্ছে। অর্থাৎ এক এক্সট্রিম থেকে জাম্প করে আরেক এক্সট্রিমে আসা হচ্ছে। এটি কোনো সুস্থ চিন্তাধারা নয়। এটি কোনো Saner thinking নয়। সব জায়গাতেই ভালো আছে। আবার সব জায়গাতেই মন্দ আছে। যারা রাষ্ট্রের ডিসিশন মেকিং পর্যায়ে আছেন তারা পাবলিক স্কুল-কলেজ, প্রাইভেট স্কুল-কলেজ বা মাদ্রাসা নির্বিশেষে প্রকৃত সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করবেন।
তা না করে যদি ঢালাওভাবে শ্রেণী বিশেষকে চিহ্নিত করা হয় তাহলে অভিভাবকদের মধ্যে মারাত্মক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়বে। ইতোমধ্যেই সেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এমনিতেই সন্তান-সন্তদিদের বিদেশে পড়ানোর একটি প্রবণতা অর্থনৈতিকভাবে সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে। সাধারণত গ্র্যাজুয়েশনের পর সামর্থ্যবানরা পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের জন্য ছেলে-মেয়েদরকে বিদেশে পাঠান। কিন্তু এখন অনেক পরিবারের মধ্যেই দেখা যাচ্ছে যে ‘এ’ লেভেলের পরই তাদের ছেলে-মেয়েদের তারা বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। সর্বশেষ অবস্থায় দেখা যায় যে, অনেক পিতা-মাতা ‘ও’ লেভেল কমপ্লিট করে ‘এ’ লেভেল পড়ার জন্য বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আমার ঘনিষ্ঠজনদের মধ্যে তিনজনকে জানি যারা এদেশে ক্লাস এইট কমপ্লিট করার পর ‘ও’ লেভেল পড়ার জন্য ছেলে-মেয়েদের বিদেশ পাঠিয়েছেন।
একটি সময় ছিল যখন ছেলে-মেয়েদের ইংল্যান্ডে লেখাপড়ার জন্য পাঠানো হতো। তারপর আমেরিকায় পাঠানো হয়। তারপর কানাডায়। কিন্তু এখন ঝাঁকে ঝাঁকে ছেলে-মেয়েদের অস্ট্রেলিয়া পাঠানো হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এসব দেশ শিক্ষার্থীদের উদারভাবে গ্রহণ করছে। কোনো একটি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডমিশন সিকিউর করতে পারলে এবং ভর্তি ফিসহ কয়েক সেমিস্টারের ফি জমা দিতে পারলে ভিসা পাওয়া যায়। বিদেশে লেখাপড়া শেষ করে চাকরি নিয়ে দুই বা তিন বছর থাকতে পারলে পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট হওয়া যায়। দুই থেকে চার বছর পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট থাকতে পারলে নাগরিকত্ব লাভ করা যায়। দেশের বর্তমান আতঙ্ক যদি অব্যাহত থাকে তাহলে সব মেধা অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং মালয়েশিয়ায় পাচার হবে বলে সমাজবিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন।
১০ দিন অনুপস্থিত থাকা
যেসব ছাত্র একনাগাড়ে ১০ দিন ক্লাসে অনুপস্থিত থাকে তাদের তালিকা পাঠানোর জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিয়েছে। এই ১০ দিন তো অসুস্থতার কারণেও হতে পারে। হতে পারে দেশের মধ্যেই কোথাও তারা বেড়াতে গেছে। হতে পারে দেশের বাইরে বেড়াতে গিয়ে ১০ দিনের বেশি সময় পার হয়েছে। এই ১০ দিনের টাইম লিমিট একটি বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে।
ইংলিশ মিডিয়ামে জুলাই থেকে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু স্কুল বন্ধ থাকায় সেটি সম্ভব হয়নি। তারা এমনিতেই পিছিয়ে গেছে। আরো কত দিন পিছিয়ে থাকতে হবে সেটিও তারা জানে না। স্কলাস্টিকা, হার্ডস, ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড, হোপ ইন্টারন্যাশনালসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কয়েক দফা খোলার তারিখ দিয়েও এখনো খোলেনি। সিডনি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল, সানিডেল স্কুলসহ কয়েকটি স্কুল ঈদের পর ক্যাম্পাস খুলছে। তবে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। তাদের বক্তব্য, ইংলিশ মিডিয়ামগুলো একসঙ্গে শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হয়।
অনুমোদনহীন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত
ওদিকে প্রায় ৪৭টি পিস স্কুল বন্ধের পর সরকার অনুমোদনহীন সব স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রি-ক্যাডেট মাদরাসা, সাধারণ স্কুলসহ যারা বাংলা সিলেবাস পড়ান এরকম কয়েক হাজার প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনহীন। এ রকম যারা অনুমোদন ছাড়া চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন শুরু হবে। যেসব স্কুল ঢাকায় নিবন্ধন নিয়েছে কিন্তু মফস্বলে নেয়নি সেগুলোও বন্ধ করা হবে। এভাবে অনিবন্ধিত স্কুলের সংখ্যাও হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যেসব ঘটনার কথা ওপরে উল্লেখ করা হলো সেগুলোর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব দেশের শিক্ষা এবং ছাত্রদের ওপর কতখানি অনুকূল বা প্রতিকূল হবে সেটি বলবে অনাগত দিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।