Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্রিটিশ রাজপরিবারে তোলপাড়

সঙ্কট জিইয়ে রেখেই কানাডায় হ্যারি-মেগান

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

ব্রিটেনের রাজ পরিচয় ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছেন প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মর্কেল। রাজপরিবারে ঝড় তুলে ইতোমধ্যে কানাডার চলে গেছেন রাজদম্পতি। এ সিদ্ধান্তে রীতিমতো ক্ষুব্ধ রাজ পরিবারের অন্য সদস্যরা। ‘হঠকারী’ এই সিদ্ধান্তের জেরে তাদের বড়সড় শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে বলেই সূত্রের খবর। যদিও ঘরোয়া সমস্যা সমাধানের জন্য বিশ্বস্ত আধিকারিকদের মেগান ও প্রিন্সের সঙ্গে কথা বলার নির্দেশ দিয়েছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তবে সেই আলোচনার আগেই সাসেক্স ছেড়ে কানাডায় পাড়ি দেন মেগান মর্কেল। পরে রওনা দেন প্রিন্স হ্যারিও। ফলে ব্রিটেনের রাজ পরিবারের এই সমস্যা আদৌ মিটবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এদিকে মেগান ও হ্যারির এই ঘোষণার পরই মাদাম ত্যুসোর মিউজিয়াম থেকে সরিয়ে ফেলা হয় তাদের মোমের মূর্তি। রাজ পরিবারের মূর্তির সারিতে তাদের মোমের স্ট্যাচু আর থাকবে না বলে মাদাম ত্যুসো মিউজিয়াম থেকে টুইট করে জানানো হয়েছে।

চার্লস-ডায়নার দুই ছেলে প্রিন্স উইলিয়ম এবং প্রিন্স হ্যারির মধ্যে সদ্ভাব বিশেষ না থাকলেও, কোনও শত্রুতা সেভাবে চোখে পড়েনি। তবে রাজপরিবার ঘনিষ্ঠদের অনেকের মতে, প্রিন্স হ্যারির বিয়ের পর মেগান মর্কেল তাদের পরিবারে পা রাখতেই নাকি সমস্ত কোন্দলের শুরু। দু’ভাইয়ের পরিবারে এমনই ঝাগড়ঝাঁটি হতে থাকে যে মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত একটা সময় বন্ধ হয়ে যায়। সেই বিবাদ থামাতে আসরে নামেন স্বয়ং রানি। কিন্তু শেষপর্যন্ত ভাঙন ঠেকানো গেল না। প্রিন্স হ্যারি এবং মেগান মর্কেল বাড়ি থেকে বেরিয়েই গেলেন। এর জন্য পরোক্ষে পাপারাজিদের দায়ী করে গেলেন। বাকিংহাম প্যালেস থেকে একটি বিবৃতি দিয়ে তারা জানিয়ে গেছেন যে, প্রচারের আলো থেকে সরে আসতে তাদের অনেক লড়তে হচ্ছে। অনেক নেতিবাচক খবরাখবর হচ্ছে তাদের ঘিরে, যা তাদের জীবনে প্রভাব ফেলছে। বিবৃতিতে আরও লেখা - ‘আমরা আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হতে চাই। এই রাজপরিবারের বাইরে বেরিয়ে সাধারণের সঙ্গে মেলামেশার যে পরিবেশ, তা উপভোগ করতে চাই। ভেবেছি, ইংল্যান্ড এবং উত্তর আমেরিকায় ঘুরেফিরে সময় কাটাব। এও চাই যে রানি নিজের রাজত্ব সামলে শান্তিতে থাকুন’।

রাজ পরিবার সূত্রে খবর, গোটা ঘটনা সম্পর্কে পরিবারের বাইরে কথা বলার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। খোদ রানি নিজের বিশ্বস্ত কর্মকর্তাদের মধ্যস্থতার দ্বায়িত্ব দিয়েছেন। প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে তাদের বৈঠক করার কথা। কিন্ত তার আগেই মেগান ও হ্যারির দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমানোয় পরিস্থিতি আরও জটিল হল বলেই মনে করা হচ্ছে।

রানির অবাধ্য হয়ে রাজকুমার হ্যারি ব্রিটিশ রাজপরিবারে যে সঙ্কট তৈরি করেছেন, তা কার্যত দুই মহাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। মা রাজকুমারী ডায়ানা ব্রিটিশ রাজপরিবারে যে ধরনের টানাপড়েনের জন্ম দিয়েছিলেন, তার পুত্র সম্ভবত তার চেয়েও বড় সঙ্কটের জন্ম দিলেন। বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন রাজপরিবার আধুনিক ব্রিটেনের বহুজাতিক সংস্কৃতির রূপান্তরের সঙ্গে কতটা তাল মেলাতে পারছে, এটি হচ্ছে সেই পরীক্ষারই একটি স্মারক। নবতিপর রানি এলিজাবেথ তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঝামেলা মিটিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। রানি রাজপ্রাসাদের কর্মকর্তা, যুবরাজ চার্লস, রাজকুমার উইলিয়াম ও হ্যারির ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের আগামী সপ্তাহের মধ্যেই একটা বোঝাপড়ায় পৌঁছানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

সিংহাসনের উত্তরাধিকারের তালিকায় আছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের দুই নাতি প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্স হ্যারি। সে অনুযায়ী প্রিন্স উইলিয়াম ও তার স্ত্রী কেট, প্রিন্স হ্যারি ও তার স্ত্রী মেগান রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্য হিসেবে বিবেচিত হন। তাদের নির্দিষ্ট কিছু রাজকীয় দায়িত্ব পালন করার বাধ্যবাধকতা থাকে। হ্যারি-মেগান এই জ্যেষ্ঠ সদস্যের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছেন। এর অর্থ তাঁদের ওপর থাকা রাজকীয় দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চাইছেন তারা।

গণমাধ্যমের বাড়াবাড়ি নিয়ে কিছুটা বিরক্ত ছিলেন হ্যারি-মেগান। ২০১৮ সালের মে মাসে হ্যারি-মেগানের বিয়ে হয়। এর এক বছরের মাথায় ছেলে আর্চির জন্ম। যে উত্তরাধিকারের তালিকায় রয়েছে সপ্তম নম্বরে। হ্যারি-মেগানকে নিয়ে গণমাধ্যমে অনেক সময়ই নেতিবাচক খবর প্রকাশ করা হয়েছে। ভিন্ন দেশের ও শ্বেতাঙ্গ না হওয়ায় নানা ধরনের নেতিবাচক কথা শুনতে হয়েছে মেগান মার্কেলকে। গণমাধ্যমের আলো থেকে নিজেদের ও সন্তান আর্চিকে আড়ালে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন তারা। ধারণা করা হচ্ছে, এরই অংশ হিসেবে এবারের বড়দিন তারা যুক্তরাজ্যে রাজপরিবারের সঙ্গে না কাটিয়ে কানাডায় কাটান। ছয় সপ্তাহ পর গত মঙ্গলবার হ্যারি ও মেগান যুক্তরাজ্যে ফিরে আসেন। সাবেক অভিনেত্রী মার্কিন নাগরিক মেগান কানাডার টরন্টোয় বসবাস করতেন। সেখানেই তিনি জনপ্রিয় মার্কিন ধারাবাহিক নাটক ‘স্যুটস’এ অভিনয় করেছিলেন।

তবে রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যের পদ থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া সত্তে¡ও হ্যারি সিংহাসনের উত্তরাধিকারের সারিতে ষষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে থাকবেন বলে জানা গেছে।
হ্যারি ও মেগান ঘোষণা দেন, পদ ছেড়ে দেয়ায় তারা রাজপরিবারের আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব পালনের জন্য সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দকৃত অর্থ আর গ্রহণ করবেন না। রাজপরিবারের সদস্যদের আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব পাালনের জন্য ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সোভেরেইন গ্র্যান্ট হিসেবে ৮ কোটি ২০ লাখ পাউন্ড (৯০৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকার বেশি) বারদ্দ দেওয়া হয়। সূত্র : ওয়েবসাইট।



 

Show all comments
  • Luca Trevisan Tulio ১২ জানুয়ারি, ২০২০, ২:৫৯ এএম says : 0
    It is utterly different feelings to live where there is no boundaries, restrictions and limitations. You can fly freely like an uncaged bird. It seems to me that this royal couple is very fed up with the monarchic rules and regulations
    Total Reply(0) Reply
  • Iqbal Hasan ১২ জানুয়ারি, ২০২০, ২:৫৯ এএম says : 0
    অনেক অর্থ, সুখ, প্রভাব মর্যাদা অনেকের স্বপ্ন -আশা , আবার অনেকের কাছেই একঘেয়েমি! কেউ তা পেতে চায়, কেউ হাফ ছেড়ে বাঁচতে চায়৷
    Total Reply(0) Reply
  • Barun Malakar ১২ জানুয়ারি, ২০২০, ২:৫৯ এএম says : 0
    হ্যারি বেচারা মনে হচ্ছে ধরা খাবে। টাকা পয়সা ভাগজোক শেষে, মেগান হ্যারিকে ডিভোর্স না ধরিয়ে দিলে হয়।।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Gafor ১২ জানুয়ারি, ২০২০, ৩:০০ এএম says : 0
    সুখী জীবনে ওরা বোধহয় একঘেয়েমিতে ভুগছে তাই আলাদা হওয়ার বাসনা! একেই বলে নীয়তি -ভাগ্য! কেউ সুখ চায়না আর কেউ সুখ পায়না!
    Total Reply(0) Reply
  • Totten Khamen ১২ জানুয়ারি, ২০২০, ৩:০০ এএম says : 0
    ভালোই করেছেন, গত বছর মেহগান রাণীর সামনে একটু উল্টা পাল্টা করে বসাতেই ভাইরাল হয়ে যায় গঠনাটি, গন্যমাধ্যম গুলো নিউজ শুরু করে দেয়,,,শুধু টাকা পয়সাই সব কিছু না স্বাধীনতাই বড় এটার এক জ্বলন্ত পরিচয়
    Total Reply(0) Reply
  • Yamin M Karim ১২ জানুয়ারি, ২০২০, ৩:০০ এএম says : 0
    মেগানের মাথায় ব্যবসা চেপে বসেছে। রাজ পরিবার থেকে এসব করা সম্ভব না; তাই মেগানের পরামর্শে হ্যারি রাজ পরিবার ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে রানীর শেষ বয়সে তাকে এভাবে দুঃখ দেওয়া উচিত ছিল না।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্রিটেন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ