Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শুকিয়ে যাচ্ছে চলনবিল

সিরজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম শিরাজী : | প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

শীতের শুরুতেই শুকিয়ে গেছে চাটমোহরসহ চলনবিল অঞ্চলের নদ-নদী ও খাল-বিল। এক সময়ের চলনবিল এখন মরা বিলে পরিণত হয়েছে। নদ-নদী, খাল-বিল ভুগছে নাব্য সঙ্কটে। ফলে সেচকার্য ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি দেশি মৎস্য সম্পদ বিলুপ্ত হচ্ছে।
প্রভাব পড়ছে পরিবেশ, কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনীতির ওপর। দীর্ঘদিন যাবৎ খনন কাজ না করায় চলনবিল এলাকার নদ-নদী হারাচ্ছে তার স্বকীয়তা। বর্ষার পানি নদ-নদী হয়ে বিল থেকে নেমে যাবার পর চলনবিলের মাঠে এখন চলছে বোরো আবাদের প্রস্তুতি। অনেকে বাড়তি ফসল হিসেবে জমিতে ছিটিয়েছেন সরিষা বীজ। কিছুদিন পর জমি থেকে সরিষা উত্তোলন করে বোরো ধানের চারা রোপণ করা হবে। বিলের সঙ্গে নদ-নদীর সংযোগ খালগুলোও শুকিয়ে গেছে। চলতি মৌসুমে পৌষের শুরুতেই অধিকাংশ নদী শুকিয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে নৌ-চলাচল। নদীপথের ব্যবসাও তাই বন্ধ। নদী ও বিলে পানি না থাকায় এ এলাকার হাটবাজারে দেশি মাছ সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
প্রিন্সিপাল মো. আব্দুল হামিদ রচিত চলনবিলের ইতিকথা গ্রন্থসূত্রে জানা যায়, জলপাইগুড়ির পাহাড় থেকে উৎপন্ন হওয়া আত্রাই ও গুড় নদী রাজশাহীতে এসে কয়েকটি শাখায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। এর একটি শাখা কয়রাবাড়ি, নন্দনালী ও আত্রাই হয়ে আত্রাই ঘাটের এক মাইল নিম্ন হতে গুড় নামে সিংড়া, একান্ন বিঘা, যোগেন্দ্রনগর ও কালাকান্দরের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়ে চাঁচকৈড় ত্রিমোহনায় নন্দকুজার সঙ্গে মিশেছে।
দক্ষিণ চলনবিলের বড়াইগ্রামের চিনাডাঙ্গা বিলের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়ে চাটমোহরের মূলগ্রাম ফৈলজানা হয়ে ফরিদপুরের ডেমরার কাছে চিকনাই নদী বড়াল নদীতে মিশেছে। ডেমরা এলাকায় সøুইসগেট থাকায় ফরিদপুর থেকে নদীটি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বর্ষা মৌসুমে মাস চারেক এ নদীতে পানি থাকলেও বাকি আট মাস পানিশূন্য থাকে নদীটি। এগুলো ছাড়াও বানগঙ্গা, তুলশী নদী, ভাদাই নদী, মরা আত্রাই নদীর অবস্থা অত্যন্ত করুণ। এ নদীগুলো ছাড়াও নবীর হাজীর জোলা, হক সাহেবের খাল, নিয়ামত খাল, সাত্তার সাহেবের খাল, কিনু সরকারের ধর, পানাউল্লাহ খাল, নিমাইচড়া-বেশানী খাল, বেশানী-গুমানী খাল, উলিপুর-মাগুড়া খাল, দোবিলা খাল, কিশোরখালী খাল, বেহুলার খাড়ি, বাঁকাইখাড়ি, গাড়াবাড়ি-ছারুখালী খাল, জনিগাছার জোলা, খলিশাগাড়ি বিল, ধলাইর বিল, ছয়আনির বিল, বাঁইরার বিল, সাধুগাড়ী বিল, মহিষা হালটসহ চলনবিলাঞ্চলের অন্যান্য শাখানদী, খাল, বিল, খাড়ি এখন একেবারে শুকিয়ে গেছে।
একসময় এ এলাকার ব্যবসায়ীরা যমুনা নদী হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কম খরচে নৌপথে তাদের পণ্য পরিবহন করতেন। নদী, খাল-বিল, খাড়ি শুকিয়ে যাওয়ায় চলনবিলের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা শুষ্ক মৌসুমে এখন তা পারছেন না। বছর দুয়েক আগে আত্রাই নদী খনন শুরু হলেও প্রথম থেকেই এ খনন কাজ প্রশ্নবিদ্ধ হতে থাকে। এর সুফল পাওয়া নিয়ে এখনো সন্দিহান এ এলাকার মানুষ। সড়কপথে পণ্য পরিবহনে তাদের বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে। জলাশয়গুলো শুকিয়ে যাওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মৎস্যজীবী। পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
শুষ্ক মৌসুমে একেবারেই শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলের খাদ্য শৃঙ্খলা ব্যাহত হচ্ছে। মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন ও ফসল উৎপাদনসহ পানি সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সকল কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ফলে বিপর্যয় ঘটছে সার্বিক পরিবেশের।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চলনবিল

১১ জানুয়ারি, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ