রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
জলবায়ু পরিবর্তন, ফারাক্কার বিরুপ প্রভাব ও বড়াল নদীর উৎসমুখে সুইসগেট নির্মাণের কারণে পলি জমে ভরাট হয়ে শত বছরের ঐতিহ্যের ধারক চলনবিল এখন অস্তিত্ত¡ সঙ্কটে ভূগছে। অপরিকল্পিত বাঁধ, সড়কসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণ, দখল ও দূষণে বিলের অস্তিত্ব হুমকির মুখে। শুস্ক মওসুমে বিলের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ৭৭টি নদী, বিল, খাড়ি ভরাট হয়ে আবাদী জমিতে রুপান্তরিত হয়েছে। এতে বিল-নদী নির্ভর প্রায় ২১ হাজার হেক্টর জমির সেচ কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। ফলে দিগন্ত বিস্তীর্ণ বিলাঞ্চলের ফসল আবাদ গভীর-অগভীর নলকুপ নির্ভর হয়ে পড়েছে।
বড়াল নদীর উৎসমুখে সুইসগেট ও শতাধিক ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করায় চলনবিলের নদী-বিল-খাড়ির অস্তিত্ব হারিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া শতাধিক ফ্লাসিং ইনলেটের জালে জড়িয়ে অখন্ড চলনবিল এখন বহুধাবিভক্ত। এতে চলনবিলের মৎস্য সম্পদ ও জলজ প্রাণী বিলুপ্তির পথে। অন্যদিকে প্রভাবশালী ভূমিগ্রাসীরা জাল দলিল তৈরি করে দখলে নিয়েছে বিলের কয়েক হাজার একর খাস জমি।
সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসের রেকর্ড থেকে জানা গেছে, চলনবিলের তিনটি জেলার বেশিরভাগ খাসজমি ও জলাশয় এখন এলাকার প্রভাবশালীদের দখলে।
জানা যায়, এক সময় বড়াল, নন্দকুজা, ভদ্রাবতী, সরস্বতী, ইছামতি, গুমানী, আত্রাই, গুড়নদী, করতোয়া, ফুলজোর, তুলসী, চেঁচুয়া, ভাদাই, চিকনাই, বানগঙ্গা ও গোয়ালা নদী, ছয়আনি, বাঁইড়ার, সাধুগাড়ী, সাঁতৈল, কুড়ালিয়া, ঝাকড়া, কচুগাড়ী, চাতরা, নিহলগাড়ী, চেচুয়া, টেঙ্গরগাড়ি, কুমীরাগাড়ি, কৈগাড়ি, বৃগরিলা, দিগদাড়িয়া, খুলুগাড়ি, কাশীয়া, ধলা, ধরইল, বড়বিলা, বালোয়া, আমদাকুরী, বাঙ্গাজালী, হুলহুলিয়া, কালামকুরী, রঘুকদমা, কুমীরা, বোয়ালিয়া, খোলারবিল, তাড়াশের বড়বিল, বিদ্যাধর ঠাকরুনের বিল, নলুয়াকান্দি, ঘরগ্রাম, বেরল, কুচিয়া, কাতল , বাঘমারা, চিরল, ডিকশী, রুখলী ডাঙ্গা, রউল শেওলা, পাতিয়া, আইড়মারী, কৈখোলা, কানচগাড়ী, গলিয়া, চিনাডাঙ্গা, মেরীগাছা ও খলিশাগাড়ীর বিল ছিল চলনবিলের গর্ব ও ঐতিহ্য।
এছাড়া নবী হাজীর জোলা, হক সাহেবের খাল, নিয়ামত খাল, সাত্তার সাহেবের খাল, কিনু সরকারের ধর, পানাউল্লার খাল, নিমাইচরা-বেশানী, বেশানী-গুমানী ও উলিপুর-মাগুড়া, দোবিলা খাল, বেহুলার খাড়ি, বাঁকাই খাড়ি, গাঁড়াবাড়ী-ছারুখালী খাল, জানিগাছার জোলা ছিল চলনবিলের প্রাণ। কিন্তু ধীরে ধীরে এসব নদী-বিল ও খাড়ি ভরাট হয়ে যাওয়ায় মৎস্য ও জলজ সম্পদে ভরপুর চলনবিলেই বর্তমানে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে।
এক সময় চলনবিরের মাছ স্থানীয় অর্থনীতি ও জীবনযাত্রায় দারুণ প্রভাব ফেলেছিল। মাছ বিক্রি করে আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়ে উঠেছিল এ অঞ্চলের মানুষ। ১৯১৪ সালে চলনবিলের মাঝ দিয়ে প্রথম ঈশ্বরদী-সিরাজগঞ্জ রেল পথ নির্মিত হলে চলনবিলের সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ওই সময় উত্তরাঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে এ বিলের মাছ ট্রেনে ভারতে রফতানি হতো। ১৯৭৭ সালে চলনবিলের মাঝ দিয়ে বাঘাবাড়ী থেকে সিংড়া পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ তৈরি করা হয়। ২০০২ সালে চলনবিলের বুক চীরে নির্মাণ করা হয় ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়ক।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমানে নাটোরের বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর, সিংড়া, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর এবং সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ও রায়গঞ্জ উপজেলার ৬২টি ইউনিয়ন ও আটটি পৌরসভার এক হাজার ৬০০টি গ্রাম নিয়ে চলনবিলের অবস্থান।
মোট লোক সংখ্যা প্রায় ২০ লক্ষাধিক। চলনবিলে জমির পরিমাণ প্রায় এক লাখ ৬৬ হাজার ৫৩৫ হেক্টর। চলনবিলে মোট প্রায় এক হাজার ৭৫৭ হেক্টর আয়তনের ৩৯টি বিল, চার হাজার ২৮৬ হেক্টর আয়তন বিশিষ্ট ১৬টি নদী এবং ১২০ বর্গকিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট ২২টি খাল রয়েছে। শুস্ক মওসুমে চলনবিলের নদী বিল শুকিয়ে জেগে ওঠা দিগন্ত বিস্তীর্ণ মাঠ। স্থানীয় কৃষকরা মাঠে ধান, পাট, সরিষা, রসুন, পেঁয়াজসহ নানা রকমের ফসল আবাদ করছেন। এসব নদী বিল শুকিয়ে যাওয়ায় এক সময়ের অতি পরিচিত দেশী ৬৫ প্রজাতির মাছ আজ বিলুপ্তির পথে। কোন কোন মাছ বংশসহ নিশ্চিহৃ হয়ে যাচ্ছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. মোঃ রেদওয়ানুর রহমানের প্রবন্ধ থেকে জানা যায়, ২৫ বছর আগেও চলনবিলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদী ও বিলে বছরজুড়েই ৬ থেকে ১২ ফুট পানির গভীরতা থাকতো। ফলে সারা বছরই নৌ চলাচল করতো। কিন্তু বছরের পর বছর পলি জমে এসব নদী-বিল ভরাট হয়ে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণ, ফারাক্কা বাঁধের প্রভাবে এবং ১৯৮০’র দশকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বড়ালের (পদ্মা) উৎসমুখে স্লইসগেট নির্মাণের ফলে চলনবিলের বিভিন্ন নদী বিল জলাশয় ও খাড়িগুলোয় পলি জমে ক্রমে ভরাট হয়ে গেছে। তাছাড়া বিলের মাঝ দিয়ে যথেচ্ছভাবে সড়ক, ব্রীজ-কালভার্ট নির্মাণ, ভূমি দখল করে বসতি ও দোকানপাট স্থাপন করায় নদী ও বিলগুলো সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।