মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
যেভাবে অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরসহ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় লাগাতার ১৪৪ ধারা প্রয়োগ করা হচ্ছে তা আসলে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’। গতকাল মোদি সরকারকে ভর্ৎসনা করে এই কথা বলেছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। পাশাপাশি ইন্টারনেট-সহ জম্মু-কাশ্মীরে সমস্ত নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রশাসনকে এক সপ্তাহের মধ্যে পর্যালোচনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে রাখা হয়েছে অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে।
অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরে কেন নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছে সরকার এ নিয়ে মামলা দায়ের করেন কাশ্মীর টাইমস-এর সম্পাদক অনুরাধা ভাসিন এবং কংগ্রেস সাংসদ গুলাম নবি আজাদ। বিচারপতি এন ভি রামানা, আর সুভাষ রেড্ডি এবং বি আর গাভাইয়ের তিন সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চে সেই মামলার শুনানি ছিল গতকাল। এদিন মামলায় ঐতিহাসিক রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। ‘যে কোনও গণতান্ত্রিক অধিকারের বৈধ অভিব্যক্তি বা অভিযোগের বিরোধিতা’ লঙ্ঘন আটকাতে যেভাবে জম্মু ও কাশ্মীরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে সেই বিষয়টি পর্যালোচনা করার জন্যে জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সব বিধিনিষেধ পুনর্বিবেচনা করার আদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট বলে, তথ্য আদানপ্রদানের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ইন্টারনেট। এবং এটি মত প্রকাশের স্বাধীনতারই একটি অংশ। সুতরাং এ বিষয়ে দ্রæত পর্যালোচনা করতে হবে। শীর্ষ আদালত আরও বলে, অনির্দিষ্ট কালের জন্য ইন্টারনেট বন্ধ রাখা যায় না। এটা ক্ষমতার অপব্যবহার বলেই মনে করছে তারা। সরকারি সিদ্ধান্তের সঙ্গে মতবিরোধ ইন্টারনেটে নিষেধাজ্ঞার কারণ হতে পারে না। এটা বাক্স্বাধীনতার অংশ। ইন্টারনেটের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত প্রশাসনের।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এনভি রামানা বলেন, ‘সংবিধানের ১৯ ধারায় যে মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে ইন্টারনেট পরিষেবাও রয়েছে।’ এই বিষয়টি সাধারণ মানুষকে জানানোর কথাও বলেন বিচারপতি। কারণ অধিকার জানার পরেই তারা আইনত চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন এই ধরনের নিষেধাজ্ঞাকে। কারণ ভিন্নমতকে দমন করার জন্য এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা অনন্তকাল চাপিয়ে রাখা যেতে পারে না। তিনি এই প্রসঙ্গে চার্লস ডিকেন্সের বিখ্যাত উপন্যাস ‘আ টেল অফ টু সিটিজ’-এর খানিকটা অংশ উদ্ধৃত করে বলেন, ‘সুরক্ষা ও জনতার স্বাধীনতার মধ্যে সমতা রক্ষা করাই আদালতের উদ্দেশ্য।’ জম্মু-কাশ্মীরেও সাধারণ নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষিত করার কথা বলেন তিনি।
এর পাশাপাশি আদালত বলে, সমস্ত নির্দেশ এবং ফোন পরিষেবার উপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ১৪৪ ধারার অধীনে যে সব নির্দেশ রয়েছে সরকারকে সেগুলোও প্রকাশ করতে হবে। এমনকি আজকাল বিভিন্ন জায়গার বিক্ষোভ প্রতিরোধেও যেভাবে কেন্দ্রীয় সরকার এই আইনটি প্রয়োগ করছে তা নিয়েও রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করল ভারতের সর্বোচ্চ আদালত।
ইন্টারনেট পরিষেবা সহ জম্মু ও কাশ্মীরের সমস্ত নিষেধাজ্ঞার নির্দেশকে পুনর্বিবেচনার নির্দেশ দিয়ে শীর্ষ আদালত বলে, ‘১৪৪ ধারাকে কোনও গণতান্ত্রিক অধিকারের বৈধ মতামত বা অভিযোগ রোধ করার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা যাবে না। সংবিধান সবসময় বিভিন্ন ধরণের দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশকে স্বাগত জানিয়েছে ... কিন্তু সহিংসতা বা জননিরাপত্তার ক্ষেত্রে আশঙ্কা এড়াতে কোনওভাবেই দিনের পর দিন ১৪৪ ধারা জারি রাখাকে মেনে নেওয়া যায় না। লাগাতার ১৪৪ ধারা জারি করে রাখা আসলে ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া আর কিছু নয়।’
প্রসঙ্গত, গত বছরের আগস্ট মাসের ৫ তারিখে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে প্রত্যাহার করা হয় ৩৭০ ধারা। দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করা হয় রাজ্যকে। রাজ্যের এই বিশেষ অধিকার তুলে নেওয়ার পর থেকেই অশান্তির আশঙ্কায় ইন্টারনেট বন্ধ রয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরে। ১৪৪ ধারা জারি ছিল দীর্ঘদিন ধরে। যে কোনও জমায়েত নিষিদ্ধ ঘোষণা হয়েছে, বন্দি করে রাখা হয়েছে রাজনৈতিক নেতাদের। রয়েছে আরও বহু নিষেধাজ্ঞাও। নিষেধাজ্ঞাকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে একাধিক পিটিশন জমা করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে। দীর্ঘ দিন ধরে চলা এই অচলাবস্থায় আশার আলো দেখাল সুপ্রিম কোর্ট। এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্ত নিষেধাজ্ঞা নিয়ে পর্যালোচনার নির্দেশ দেওয়ায় আপাতত স্বস্তির হাওয়া জম্মু-কাশ্মীরে। উল্টো দিকে, আদালতের এই নির্দেশ কেন্দ্রের কাছে একটা বড়সড় ধাক্কা বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। সূত্র : এনডিটিভি, ইন্ডিয়া টুডে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।