পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সাধারণ মানুষ এখন এমন একটা অবস্থায় রয়েছে যে, তাদের সুখ-দুঃখের হিসাব সরকার করছে বলে মনে হচ্ছে না। তারা কেমন আছে, কীভাবে চলছেÑএসব খোঁজ-খবর কতটা রাখে তা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ রয়েছে। সরকারের মধ্যে এমন একটা প্রবণতা রয়েছে, দেশ এখন উন্নতির শিখরে অবস্থান করছে এবংসাধারণ মানুষও এই উন্নতির মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে। কাজেই তাদের খোঁজ-খবর নেয়ার দারকার কি! তবে সাধারণ মানুষের প্রকৃত অবস্থা কি, তা কেবল পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদনে যা একটু আধটু দেখা যায়। জিনিসপত্রের আকাশ ছোঁয়া দাম, জীবনযাপনের টানাপড়েনসহ তাদের কষ্টের জীবনচিত্র মাঝে মাঝে তুলে ধরা হয়। গত সপ্তাহে একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে সাধারণ মানুষের মনের কথাসহ জিনিসপত্রের দামের অস্বাভাবিক মূল্যের কথা তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যয় বাড়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে সীমিত আয়ের পরিবারের নতুন বছর। জিনিসপত্রের বাড়তি দাম তাদের টানাপড়েনের জীবনে আরো টান ধরিয়েছে। শুধু জিনিসপত্রের দামই নয়, বাড়িওয়ালারাও বাড়ি ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিবেদনে একজন বেসরকারি চাকরিজীবীর কথা উল্লেখ করে বলা হয়, বাড়িওয়ালা বছরের শুরুতে এক হাজার টাকা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন তিনি বাড়তি খরচ পোষাতে রিকসায় চলা বাদ দিয়ে হেঁটে চলা শুরু করেছেন। খরচ কমাতে আরও দুয়েকটি উপায় খুঁজছেন। তিনি বলেন, শুনছি গ্যাস-বিদ্যুতের দামও নাকি বাড়বে। তাই এখন খরচ কমানোর উপায় বের করা শুরু করেছি। নিশ্চিতভাবেই সীমিত আয়ের এই মানুষটির মতো এমন হিসাব আরও কোটি মানুষ করছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে সরকার যে উন্নতির জোয়ারের কথা বলছে, এ উন্নতি এসব মানুষকে কতটা ছুঁয়েছে? সরকার যে জিডিপির ঊর্ধ্বগতির কথা বলছে, তা সাধারণ মানুষকে কতটা স্বস্তি দিতে পারছে? গত সপ্তাহে একটি টেলিভিশন চ্যানেলে সপ্তাহের বাজারের হালচাল বিষয়ক এক প্রতিবেদনে ক্রেতাদের বক্তব্য তুলে ধরে। ক্রেতাদের বক্তব্য হচ্ছে, বাজারে এসে বাজেটের সাথে তাল মেলাতে পারছে না। একটি পণ্য কিনলে আরেকটি কিনতে পারছে না। বাজারে জিনিসপত্রের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। একজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন, আমরা কার কাছে কষ্টের কথা বলব? কে শুনবে আমাদের কথা? আমাদের কথা শোনার কেউ নেই। সরকার কি আমাদের কষ্টের কথা উপলব্ধি করছে? তার এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই। সাধারণ মানুষ দেখছে, সরকার জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না, উল্টো নিজের খরচ পোষাতে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করার ঘোষণা দিয়েছে। সাধারণ মানুষের পকেট থেকে পয়সা বের করে নিজের আরামের ব্যবস্থা করছে। অথচ সরকারের কাজ হচ্ছে, জনগণকে আরাম দেয়া এবং আরামে রাখা। নিজে কষ্ট করে হলেও এ ব্যবস্থা করতে হয়। দেখা যাচ্ছে, সরকার তার খরচ পোষাতে এবং নিজের স্বস্তির জন্য জনগণের কাছ থেকেই পয়সা আদায় করছে। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়? কে তাদের স্বস্তি দেবে?
যে কোনো গণতান্ত্রিক সরকারের প্রধান কাজ হচ্ছে, জনগণের সেবা করা। তাদের সুখ-দুঃখ বিবেচনা করে পদক্ষেপ নেয়া। দেখা যাচ্ছে, আমাদের সরকারের মধ্যে জনগণের দুঃখ-দুর্দশা বোঝার মতো অনুভূতি খুব একটা কাজ করছে না। সরকার ব্যস্ত উন্নতির বিভিন্ন ফিরিস্তি তুলে ধরতে। কথার ফুলঝুরি দিয়ে মানুষের দুঃখ-কষ্টকে ঢেকে রাখতে। অথচ দেশের উন্নতির মূল সূচক হচ্ছে, সাধারণ মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন এবং মৌলিক চাহিদা পূরণ করে তারা কতটা স্বস্তিতে রয়েছে। সরকার জিডিপি বৃদ্ধিসহ যেসব অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচক তুলে ধরছে, সেগুলো সাধারণ মানুষের উন্নয়নে কতটা ভূমিকা রাখছে, তা ভাবছে না। অর্থনীতিবিদরাই বলছেন, দেশে যে উন্নয়ন হচ্ছে, তা একটি শ্রেণী কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। সেখানে সাধারণ মানুষের অবস্থান গৌণ। ধনী আরও ধনী হচ্ছে, দরিদ্র আরও দরিদ্র হচ্ছে। এমনকি নি¤œ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী তাদের অবস্থান হারিয়ে দারিদ্র্যতার দিকে চলে যাচ্ছে। যে শ্রেণীটি ফুলেফেঁপে ধনী হয়েছে, সরকারের উন্নয়ন সূচকে সেই শ্রেণীটিই প্রাধান্য পাচ্ছে। এদের বেশিরভাগই সরকারি দলের কিংবা সরকারের আনুকূল্যে রয়েছে। সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের দিকে যদি তাকানো যায়, তবে দেখা যাবে, তাদের চেহারা-সুরত ও চলন-বলনের ধারাটা একেবারে বদলে গেছে। ঢাকা শহরে যে দীনহীন হয়ে একসময় চলাফেরা করত, ক্ষমতার দাপটে স্বল্প সময়েই গাড়ি-ফ্ল্যাট, ব্যবসা-বাণিজ্যের মালিক হয়ে গেছে। বিরোধী দলে যারা আছে, তারাও একসময় এরকমই হয়েছিল। তারা এখন ক্ষমতায় নেই বলে তাদের চকচকে ভাব দেখা যায় না। অর্থাৎ এখন উন্নয়ন হয়ে পড়েছে ক্ষমতার রাজনীতি কেন্দ্রিক এবং তা কেবল ক্ষমতাসীনদের কেন্দ্র করেই আবর্তিত হচ্ছে। সেখানে সাধারণ মানুষের সুবিধা নেই বললেই চলে। বরং সাধারণ মানুষের অর্থ লোপাটের মাধ্যমেই ক্ষমতাসীনদের অনেকের রাজনীতি চলছে। বিগত এক দশকের রাজনীতির বিবেচনা করলে দেখা যাবে, ক্ষমতার কাছাকাছি একদল লোক বেসুমার অর্থকড়ির মালিক হয়েছে। তাদের অর্থের সীমা-পরিসীমা নেই। বলা বাহুল্য, এসব অর্থ হয়েছে ক্ষমতার জোরে। ব্যাংক লোপাট, বড় বড় প্রকল্পের দুর্নীতি, কমিশন ব্যবসা, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে হেন কোনো উৎস নেই যেখানে থেকে অর্থ কেড়ে নেয়া হয়নি। এই কিছু লোকের বড় লোক করতে গিয়ে অনেক সাধারণ লোক নিঃস্ব হয়েছে, জীবনে টানাপড়েনে পড়েছে, সরকারও নব্য এই ধনীক শ্রেণীকে দেখিয়ে বলছে, মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি অনেক হয়েছে।
দুই.
এ কথা ঠিক, গত এক দশকে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তবে পরিবর্তনটা কিভাবে হয়েছে, তা নিয়ে ব্যাখ্যার অবকাশ রয়েছে। একজন দিনমজুরের কথা যদি বিবেচনা করা হয়, তবে তার মজুরি বেড়েছে। একজন রিকশাওয়ালার আয়ও বেড়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এ আয় দিয়ে কি তার জীবন চলে? আগের চেয়ে সে কি ভাল আছে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে দেখা যাবে, আগের চেয়ে এখন তিন গুণ আয় করছে ঠিকই, সেই সাথে ব্যয়ও বেড়েছে তার চেয়ে বেশি। জিনিসপত্রের দাম এতটাই বেশি যে আয়কৃত অর্থ দিয়ে প্রয়োজনীয়তা মেটানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এমন হতো আয় বেড়েছে, জিনিসপত্রের দাম এ তুলনায় বাড়েনি, তবে বলা যেত উন্নতি হয়েছে। আয় দিয়ে ব্যয় মিটিয়ে সঞ্চয় করাসহ অন্যান্য সাধ-আহলাদ মেটানো গেলে বলা যেত মানুষ স্বাচ্ছন্দে আছে। আমাদের দেশের মানুষের কি এখন এ অবস্থা আছে? অথচ সাধারণ মানুষকে এ অবস্থার মধ্যে রাখা যেত, যদি সরকার তাদের টানাপড়েনের জীবন উপলব্ধি করত। পাশাপাশি নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যাপক দুর্নীতির বিষয়টি সামাল দিতে পারত। কতটা দুর্নীতি হলে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক কয়েক বছর আগে চট্টগ্রামে এক সভায় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ক্ষমতা হারালে দেশ ছেড়ে পালাতে হবে। পিঠের চামড়া থাকবে না। ক্ষমতাসীন দলের একশ্রেণীর নেতা-কর্মী বা সরকারের আনুকূল্যের লোকজন যেভাবে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন, ক্ষমতা হারালে তারা হয়তো কেউ দেশ ছেড়ে পালাবেন, কেউ হয়ত দেশেই থেকে যাবেন। তবে ক্ষমতায় থাকতে থাকতেই যারা বিদেশে অর্থ পাচার করে দিচ্ছে, তাদের ধরবে কে? বলা হচ্ছে, প্রতি বছরই হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। পাচারকারিরা সেখানেই বসবাসের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করছে। অর্থাৎ আমার দেশের মানুষের অর্থ লোপাট করে নিচ্ছে ক্ষমতাশালী কিছু লোক। তারা এই অর্থ পাচার করতে পারছে ক্ষমতার কাছাকাছি লোকদের আশ্রয় ও প্রশ্রয় এবং প্রশাসনের উদাসীনতায়। তা নাহলে এত অর্থ পাচার হওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না। দেশের অর্থ যদি বিদেশে পাচার হয়ে যায় এবং সাধারণ মানুষ টানাপড়েনে থাকে, তবে দেশের উন্নতির বিষয়টি প্রশ্নবোধক হয়ে পড়ে। শুধু বড় বড় স্থাপনা ও প্রকল্পই উন্নতির মানদÐ নয়। দেখা যাচ্ছে, এসব করতে গিয়ে মানুষের কাছ থেকে যে অর্থ আদায় করা হচ্ছে, তাতে মানুষ আরও কষ্টে পড়ে যাচ্ছে। যদি এমন হতো দেশের মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা সন্তোষজনক রেখে এগুলো করা হচ্ছে, তাহলে এসব উন্নয়ন অর্থবহ হতো। যেখানে মানুষের চলাই দায় হয়ে পড়েছে, সেখানে এসব উন্নয়ন তাদের কাছে পরিহাস ছাড়া কিছুই নয়। সরকারের তরফ থেকে প্রায়ই বলা হয়, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। হ্যাঁ, বেড়েছে, তবে তা একটি শ্রেণীর, যাদের সম্পদের হিসাব করে কূল পাওয়া যায় না। চালের কেজি যদি ১০০ টাকাও হয়, তাতেও তাদের কিছু যায় আসবে না। এ শ্রেণীটি জানেই না বাজারে কোন জিনিসের দাম কত? চাল, ডাল, তেল, নুন, চিনি, গরম মসলার কেজি কত তা তারা বলতে পারবে না। এ শ্রেণীর লোকজনের ক্রয়ক্ষমতাকে যদি সরকার বিবেচনায় নেয়, তবে তা মাথাপিছু গড় আয়ের মতোই শুভংকরের ফাঁকি হয়ে থাকবে। মাথাপিছু আয়কে যেভাবে হিসাব করা হয়, তা যে একটা ফাঁকা বুলি তা মানুষ বুঝে গেছে। কাজেই মাথাপিছু আয়ের হিসাবটি বাস্তবতার মধ্যে পড়ে না। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে, এ হিসাবটিও মাথাপিছু গড় আয়ের মতোই। সরকারি হিসাব বাদ দিলে বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি সংস্থার হিসাবে দেশে চার থেকে পাঁচ কোটি মানুষ বেকার। তাহলে এই কোটি কোটি বেকারের কি ক্রয়ক্ষমতা আছে? যার আয়ই নেই, তার ব্যয় করার কী ক্ষমতা থাকে? কাজেই সরকার যে বলে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে, তা পুরোপুরি সঠিক নয়। একটা কথা বুঝতে হবে, বাঁচতে হলে কিনতে হবে, এটা চিরন্তন। প্রশ্ন হচ্ছে, মানুষ তার মৌলিক চাহিদানুযায়ী ক্রয় করতে পারছে কিনা? এ প্রশ্নের উত্তর যদি সাধারণ মানুষের কাছে করা হয়, তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের উত্তর হবে, মৌলিক চাহিদা অনুযায়ী তারা ক্রয় করতে পারছে না। এ একটি প্রশ্ন নিয়ে সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে গেলেই বাংলাদেশের মানুষের প্রকৃত অর্থনৈতিক চিত্র পাওয়া যাবে।
তিন.
একটি সরকার যখন জনগণের দিকে যথাযথ দৃষ্টি না দিয়ে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকে, তখন তার লক্ষ্যই হয়ে উঠে উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরা। মানুষের উন্নতি করছি, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, উন্নয়নের মহাসড়কেÑএসব মুখরোচক শ্লোগান তার হাতিয়ার হয়ে উঠে। রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক ব্যর্থতা আড়াল করতে এসব শ্লোগান মুখ্য হয়ে উঠে। কেউ এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে বিভিন্নভাবে তাকে হেনস্থার পন্থা অবলম্বন করা হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, দীর্ঘ সময় ধরে যদি এ ধরনের সরকার থাকে, তখন অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় উন্নয়নের যত কথাই বলা হোক না কেন, তা মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয় না। কোনো না কোনোভাবে অর্থনীতির করুণ চিত্র বের হয়ে আসে। ইতোমধ্যে আমদানি-রপ্তানি থেকে শুরু করে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের নি¤œগামী হওয়ার মধ্য দিয়ে তা প্রকাশিত হচ্ছে। অথচ সরকার যেভাবে উন্নতির কথা বলছে, সেভাবে হলে দেশ এতদিনে সিঙ্গাপুরের কাছাকাছি চলে যেত। আমরা যদি বিনিয়োগের দিকে তাকাই তবে দেখব, সেখানে আশানুরূপ উন্নতি নেই। বিনিয়োগ হলে কর্মসংস্থান হয়, উৎপাদন বাড়ে, আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধি পায়Ñএভাবে ধাপে ধাপে অর্থনীতি এগুতে থাকে এবং পরিব্যাপ্ত হয়। দেশে অর্থনীতির এ ধারাটা ধীর হয়ে রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে, উন্নতির জোয়ারের কথা বলা যৌক্তিকতার পর্যায়ে পড়ে না। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ৪০ হাজার টাকা। অর্থাৎ এই মুহূর্তে যে শিশুটির জন্ম হবে তার মাথার উপর ৪০ হাজার টাকা ঋণ ধার্য হয়ে রয়েছে। এটা কী ভাবা যায়, যে ব্যক্তি ৪০ হাজার টাকা বা এক টাকাও আয় করতে পারে না, তার ঋনের পরিমাণ ৪০ হাজার টাকা এবং এ ঋণ তাকে শোধ করতে হবে! এছাড়া যে বাজেট দেয়া হয়, তাতে ঘাটতিও থাকে। এ ঘাটতি সরকারকে মিটাতে হয় বিভিন্ন স্থান থেকে ঋণ করে। বিশেষ করে ব্যাংক থেকে। ইতোমধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোতে সরকারের ঋণের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। সরকারকে এ ঋণ পরিশোধ করতে হয় জনগণের টাকায়। ফলে জনগণের কাছ থকে সরকারকে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিসহ বিভিন্নভাবে অর্থ আদায় করতে হয় এবং হচ্ছে। এতে জনগণের মধ্যে যে টানাপড়েন সৃষ্টি হয়, তাতে তাদের নাভিশ্বাস উঠছে। পরিস্থিতি যদি এই হয়, তাহলে আমরা উন্নতি করছি, এ কথা বলা কতটা যৌক্তিক? সরকার আমাদের কী স্বপ্ন দেখাচ্ছে, কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? সরকার কী করে উন্নতি দাবী করছে? আমরা তো দেখছি, উন্নয়নের মহাসড়কে চলা দূরে থাক, উন্নয়নের গতি হ্রাস পেয়েছে। ঋণের এই ভয়াবহতার মাঝে উন্নয়নের কথা বলা বেমানান ছাড়া কিছুই নয়। দেশের জনগণের মাথার উপর ঋণের বোঝা আগেও ছিল। তবে তা যে দিনে দিনে বেড়ে এত হবে, তা কেউ কল্পনা করেনি। এই সময়ে এসে তা অসহনীয় অবস্থার সৃষ্টি করেছে। যে সরকারকে ঋণ নিয়ে চলতে হয় বা ঋণের উপর নির্ভর করতে হয়, সে সরকার উন্নতি করছেÑতা বলা যুক্তিযুক্ত কিনা এ প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক। আবার এ ঋণ পরিশোধ করার জন্য সাধারণ মানুষের কাছ থেকে যেভাব পারা যায় সেভাবে অর্থ আদায় করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এতে ঋণগ্রস্ত মানুষের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়ছে। এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো কেন? এর সরল উত্তর, সরকার পরিচালনায় সরকারের যথাযথ উদ্যোগ ও দক্ষতার অভাব। এ উদ্যোগের অন্তরায় হয়ে রয়েছে দুর্নীতি। ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট এবং তাদের প্রশ্রয়প্রাপ্তদের অনেকের বড় দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া, অর্থনীতিকে স্থবিরতার দিকে নিয়ে গেছে। ক্ষমতা সংশ্লিষ্টদের কমিশন বাণিজ্যের ব্যাপকতাও অর্থনীতির গতি পথ রুদ্ধ করে দিচ্ছে।
চার.
এখন রাজনীতি অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে হলেও রাজনীতি অর্থনীতিকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। আমাদের রাজনীতিতে অর্থনৈতিক উন্নতির বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে রয়েছে। রাজনীতিবিদদের কথায় অর্থনীতি এবং সাধারণ মানুষের উন্নতি কথার কথায় পরিণত হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের দৃষ্টি কীভাবে ক্ষমতায় থাকা যায়। বিরোধী দলের দৃষ্টি কীভাবে ক্ষমতায় যাওয়া যায়Ñএটাই মুখ্য হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষের জীবনমানের উন্নতির বিষয়টি আড়ালে থেকে যাচ্ছে। অথচ উভয় দলেরই উচিত দেশের সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতির বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রণয়ন করা এবং এ অনুযায়ী কথা বলা। দুঃখের বিষয়, রাজনৈতিক দলগুলোকে তা করতে দেখা যায় না। সাধারণ মানুষ কতটা দুঃখ-দুর্দশা ও অভাবের মধ্যে রয়েছে, তা কেউই উপলব্ধি করছে না। সাধারণ মানুষ যে ধুঁকে ধুঁকে দিনাতিপাত করছে, সেদিকে কারো খেয়াল নেই।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।