Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ভারতে ২৪ ঘণ্টার ধর্মঘট চলছে, রণক্ষেত্র মালদহ, পুলিসের গাড়িতে আগুন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০২০, ৪:৫৬ পিএম

কেন্দ্রের বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের ‘জনবিরোধী’ নীতির প্রতিবাদে আজ বুধবার কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের (সিটিইউ) ডাকে ভারতব্যাপী ধর্মঘট চলছে। সোমবার মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া এই প্রতিবাদে নাগরিক সমাজকে অংশ নেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তারা। প্রায় ২৫ কোটি মানুষ এই সর্বভারতীয় ধর্মঘটে অংশ নিচ্ছে বলে জানা গেছে। এদিকে ধর্মঘট কেন্দ্র করে রণক্ষেত্র হয়ে উঠেছে মালদহ জেলা। সেখানে সংঘর্ষ ও পুলিসের গাড়িতে আগুন দেয়ার খবর পাওয়া গেছে।

৮ জানুয়ারি দেশব্যাপী ধর্মঘটের জন্য ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরেই বামেদের ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছিল বিভিন্ন ক্ষেত্রের স্বাধীন শ্রমিক সংগঠনগুলিও।

আইএনটিইউসি, আইআইটিইউসি, এইচএমএস, সিটিইউ, এআইইউটিইউসি, টিইউসিসি, সেওয়া, আইসিসিটিউ, এলপিএফ, ইউটিইউসি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের স্বাধীন শ্রমিক সংগঠনগুলো দেশব্যাপী ধর্মঘটে যাওয়ার জন্য গত সেপ্টেম্বরে একমত হয়েছিল।

বুধবারের ধর্মঘট এবং ব্যাংকিং পরিষেবাগুলিতে এর প্রভাব সম্পর্কে বেশ কয়েকটি ব্যাংক ইতিমধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জগুলিকে জানিয়েছে। এআইবিইএ, অল ইন্ডিয়া ব্যাংক অফিসারসহ বিভিন্ন ব্যাংক কর্মচারী সমিতি এই ধর্মঘটে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে আছে অল ইন্ডিয়া ব্যাংক কর্মচারি সমিতি (আইআইবিইএ), আইআইবিওএ, বেফআই, আইএনবিইএফ, আইএনবিওসি এবং ব্যাংক কর্মচারী সেনা মহাসংঘ।

দশটি সেন্ট্রাল ট্রেড ইউনিয়নের দেওয়া বিবৃতিকে উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা পিটিআই জানায়, ‘আমরা আশা করছি ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারী আসন্ন জাতীয় সাধারণ ধর্মঘটে কমপক্ষে ২৫ কোটি মানুষ অংশগ্রহণ করবেন। সরকারের জনবিরোধী, দেশবিরোধী নীতিগুলির বিরুদ্ধেও বেশ কিছু পদক্ষেপও গ্রহণ করা হবে। ২ জানুয়ারী শ্রমিকদের ডাকা বৈঠকে যে দাবি রাখা হয়েছিল সরকারের কাছে সেই আশ্বাস পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে শ্রম বিভাগ। সরকারের নীতি ও কর্মপদ্ধতিতে শ্রমিকদের প্রতি সরকারের অবজ্ঞার মনোভাবই প্রকাশ পেয়েছে।’

শ্রমিক ইউনিয়নের পাশাপাশি বর্ধিত ফি কাঠামো ও শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের বিরুদ্ধে ধর্মঘটে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদের ৬০টি প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও এই ধর্মঘটকে সমর্থন জানিয়ে এবং নিজেদের দাবি তুলে ধরতে ১৭৫টিরও বেশি কৃষি শ্রমিক ইউনিয়ন ৮ জানুয়ারি গ্রামীণ ভারত বনধ হিসেবে পালন করবে। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া থেকে জেএনইউ-এর মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুলিশ, এবিভিপির হামলার নিন্দা জানিয়ে তাঁদের লড়াইয়ের প্রতি সমর্থনও প্রকাশ করেছে ট্রেড ইউনিয়ন। এছাড়াও বেকারত্ব, অর্থনীতির হাল ফেরানো, শিল্প স্থাপন, নারী সুরক্ষা, এনআরসি, সিএএ, অবসরকালীন পেনশন এবং সমকাজে সমবেতনের দাবীতেও কাল ধর্মঘটে নামছেন ইউনিয়নগুলি।

রেল, ব্যাঙ্ক, প্রতিরক্ষা ইউনিটের বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়েছেন ইউনিয়নগুলি। বিবৃতিতে তারা জানান, ‘এখনও পর্যন্ত ১২টি বিমানবন্দরকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বিমানসংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার ১০০ শতাংশই বিক্রি করার কথা ঠিক হয়ে গিয়েছে। এমনকী বিএসএনএলও বিক্রি হতে চলেছে। ইতিমধ্যেই ৯৩৬০০ হাজার টেলিকম কর্মীকে একপ্রকার জোর করেই ভিআরএস দিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ সেন্টার অফ ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এলামারাম করিম বলেন, ‘বুধবার ১২টা থেকে দেশের সব ট্রেড ইউনিয়নদের ২৪ ঘন্টার ধর্মঘট চলবে। জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন, সরকারি কর্মচারী, ব্যাঙ্ক, বীমা কর্মচারীদের সংগঠনগুলিকে নিয়েই জাতীয় ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে। এটি মোদি সরকারের শ্রম বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে লড়াই। সকল শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি প্রতি মাসে ২১ হাজার টাকার দাবি-সহ আরও অনেক দাবি উত্থাপন করছি আমরা।’

এদিকে, ধর্মঘট কেন্দ্র করে বুধবার সকাল থেকেউ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল মালদহ। সকালে শহরে একটি সরকারি বাসে ভাঙচুর চালায় বনধ সমর্থকরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একাধিক জায়গা থেকে অশান্তির খবর আসতে শুরু করে। বিশেষ করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল কালিয়াচক। সকাল থেকেই কালিয়াচক, সুজাপুরে দোকান পাট বন্ধ ছিল। যানচলাচলও করছিল না রাস্তায়। সকাল ১০টা নাগাদ বাম এবং কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। প্রায় ঘণ্টা খানেক সেখানে অবরোধ চলার পর পুলিস আসে ঘটনাস্থলে। ধর্মঘট সমর্থকদের ওঠানোর চেষ্টা করে পুলিস। তাতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

অভিযোগ ধর্মঘট সমর্থকদের অবরোধ তুলতে কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটায় পুলিস। কয়েক রাউন্ড গুলিও চালানো হয় বলে অভিযোগ। তারপরেই উত্তেজিত ধর্মঘট সমর্থক এবং সেখানকার জনতা চড়াও হয় পুলিসের উপর। পুলিসকে লক্ষ্য করে ইট ছুড়তে থাকে উত্তেজিত জনতা। পুলিসের দুটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। সূত্র: টিওআই, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ