Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি ছাপিয়ে উঠছে ‘আজাদি’ স্লোগান

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০২০, ৩:৪৭ পিএম

ভারতে এখন বিচ্ছিন্ন, অথচ দৃঢ়ভাবে শোনা যাচ্ছে একটি স্লোগান, সেটি হল— ‘আজাদি’! এখনও তেমন উচ্চকিত না হলেও সম্ভাবনাময়। ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি যখন গ্রাস করছে ধর্ম নিরপেক্ষ ভারতের একতা, তখন এর বিরুদ্ধে এই স্লোগান আস্তে আস্তে জোরালো হচ্ছে, পাল্টে দিচ্ছে হিন্দুত্ববাদিদের হিসাব-নিকাশ। যে দেশে প্রতিবেশী এখন শুধুই প্রতিবেশী নন, তিনি হিন্দু না মুসলিম—সেই পরিচয়টাও গুরুত্ব পাচ্ছে, তখন বিভাজনের সেই সরণির মধ্যেই এই নতুন স্লোগান আশা দেখাচ্ছে বলে মনে করছেন সমাজের বিশিষ্টজনেরা।

বিশ্লেষকদের মতে, উগ্র হিন্দুত্ববাদ থেকে মুক্ত হওয়ার এই ডাক ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে দেশে। যদিও ‘জয় শ্রীরামে’র প্রতিস্পর্ধী হিসেবে এই ‘আজাদি’ স্লোগান কতটা জায়গা করে নেবে, তা আগামী ভারতই বলবে বলে মনে করছেন অনেকে।

ইতিহাসবিদ রজতকান্ত রায় মনে করেন, এই মুহূর্তে যারা ‘আজাদি’ স্লোগান দিচ্ছেন তারা মূলত শিক্ষিত, সচেতন মানুষ। কিন্তু ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান যারা ব্যবহার করছেন, সংখ্যায় তারা অনেক বেশি এবং মূলত একটি রাজনৈতিক দলের সমর্থক। ফলে ‘জয় শ্রীরাম’ এবং ‘আজাদি’ স্লোগানের মধ্যে কোনটা শেষ পর্যন্ত জিতবে, তা বলা কঠিন। রজতকান্তর কথায়, ‘আজাদি যারা বলছেন, তারা যদি জয়লাভ না করতে পারেন, তা হলে কিন্তু শ্রীরামের ভারতবর্ষ নষ্ট হয়ে যাবে। রাম যা-যা করতে চাইতেন না, সেই না-করতে-চাওয়াগুলি নিয়েই বর্তমানে একটা কুশ্রী ভারতবর্ষ জন্মাবে। এমনিতে আজাদি ভিন্ন প্রেক্ষিতে ব্যবহার হতে পারে। কিন্তু বর্তমান ভারতের ক্ষেত্রে এই স্লোগানের একটা বড় সম্ভাবনা রয়েছে।’

ভাষাবিদদের একাংশ বলেছেন, এটা মূলত ফারসি শব্দ, পরবর্তী কালে উর্দু শব্দভাণ্ডারে তা জায়গা পায়। ভাষাবিদ পবিত্র সরকার জানান, ১৯৪০-এর সময় থেকে যখন সাম্রাজ্যবাদ আস্তে আস্তে গুটিয়ে যেতে থাকে, তখন থেকেই আজাদ হিন্দ ফৌজ, আজাদি— এই শব্দগুলো এ দেশে জনপ্রিয় হতে থাকে। তার কথায়, ‘ব্যবহারগত দিক যদি দেখি, তা হলে বলতে হয় স্লোগানে একটা ক্রিয়াপদ থাকলে তার জোর অনেক বেশি হয়। সেখানে এটা বিশেষ্য, তাই এর জোর কিছুটা কম। তবে বারবার বলতে থাকলে এটা জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে।’

বিদ্বজ্জনেদের একাংশ আবার বলছেন, ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি যেখানে উগ্র হিন্দুত্ববাদের প্রতীক হয়ে উঠেছে, সেখানে আদতে ফারসি শব্দ ‘আজাদি’র বহু-ব্যবহার এ দেশের বৈচিত্র্যকেই মনে করিয়ে দিচ্ছে। শিক্ষাবিদ সৌরীন ভট্টাচার্য বলেন, ‘জয় শ্রীরাম ধ্বনির মাধ্যমে দেশকে এক বিশেষ দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আর সেই দিকটা আরোপ করা হচ্ছে আমাদের উপরে। এমনিতে রাম নিয়ে তো কোনওকালেই সমস্যা নেই, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে রামকে যে ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে তা নিয়ে। জয় শ্রীরামের মধ্যে একটা উগ্র হিন্দুত্ববাদের আস্ফালন রয়েছে, সেখানে আজাদি কিন্তু দেশের বৈচিত্র্যের কথা বলছে।’

বর্তমান পরিস্থিতিতে ‘আজাদি’ স্লোগানের ব্যবহার যেন দেশের ‘স্বাধীনতা আন্দোলন’ হয়ে উঠেছে, যেখানে ছাত্র-যুবসমাজ বর্তমান ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা, উগ্র হিন্দুত্ববাদের হাত থেকে স্বাধীনতা চাইছে। এমনটাই মনে করছেন প্রখ্যাত কবি জয় গোস্বামী। তার কথায়, ‘জয় শ্রীরাম ধ্বনি একটা হিংসাত্মক স্লোগান। কিন্তু আজাদি স্লোগানটির মাধ্যমে একটা বড় অভ্যুত্থান হবে বলেই আমি বিশ্বাস করি।’

‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি যারা বলছে, তারা অনেক সংগঠিত, সংখ্যায় অনেক বেশি। কিন্তু তার মধ্যেই তৈরি হচ্ছে ‘আজাদি’-র বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড। যেগুলি এক হলে ভারত ফিরে যাবে তার পুরনো পরিচয়ে, যেখানে ধর্মান্ধতা বা সাম্প্রদায়িকতা নয়, মুখ্য হয়ে উঠবে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য— এই বিশ্বাস দৃঢ় হচ্ছে বলেই মনে করছেন অনেকে। সূত্র: এবিপি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ