Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিরোধী দলের হরতাল, প্রভাব পড়েছে পশ্চিমবঙ্গেও

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০২০, ১১:৪০ এএম

বাম-কংগ্রেসসহ বিভিন্ন বিরোধীদলের সংগঠনগুলির ভারতজুড়ে ডাকা সকাল সন্ধ্যা হরতালের প্রভাব পড়েছে পশ্চিমবঙ্গেও। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা, মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, নদীয়া, কোচবিহার, দিনাজপুর, মালদা, জলপাইগুড়ি জেলার বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ, কোথাও রেলের ওভারহেড তারে কলাপাতা ফেলে রেল অবরোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি জোর করে দোকান বন্ধ, সিএনজি, বাস থামিয়ে যাত্রীদের গাড়ী থেকে নামানোর অভিযোগও উঠেছে।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন, জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) সহ কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের 'শ্রমিক বিরোধী নীতির' বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এ হরতাল ডাকা হয়েছে।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে সকাল থেকেই ধর্মঘট সফল। সকাল ছয়টা থেকে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল জুড়ে একাধিক জুট মিলে শ্রমিক না আসায় মিল বন্ধ হয়ে যায়।
ব্যারাকপুর অতীন্দ্র সিনেমা হলের সামনে ঘোষপাড়া রোডে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে সিপিআইএম এবং কংগ্রেস নেতা কর্মী এবং সমর্থকরা।

ব্যারাকপুর ও পলতার মাঝখানে লালকুঠি এলাকায় রেললাইন অবরোধ করে সিপিএম এবং কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা রেললাইনে স্লোগান দিতে থাকেন তারা ঘটনাস্থলে আরপিএফ এর সাথে বচসায় জড়িয়ে পড়েন। হাবড়াতে রেল অবরোধ হয়।

এরই মধ্যে এদিন সকালে জেলার বারাসাতের হেলাবটতলা মোড়ের কাছে বেশ কয়েকটি তাজা বোমা উদ্ধারকে কেন্দ্র করে তীব্র উত্তেজনা ছড়ায়। প্রকাশ্য রাস্তায় বোমা-গুলি পড়েছিল। পরে ঘটনাস্থলে বিশেষ বোম স্কোয়াড বাহিনী পৌঁছায় এবং তিনটি হাতবোমা উদ্ধার করে। মালদার রথবাড়িতে বাস ভাঙচুর করা হয়, কোচবিহারের জোর করে বাস থামানো হয়, জলপাইগুড়িতে সরকারি বাস ডিপোতে বিক্ষোভ দেখানো হয়। কোচবিহারের তুফানগঞ্জে বাসে ভাঙচুর করা হয়। এক সময় পুলিশের সঙ্গে হরতালকারীদের বচসা বাঁধে।

এদিন সকালে সিপিআইএম'এর বিরুদ্ধে জোর করে দমদম রেল স্টেশনে বুকিং কাউন্টার বন্ধ করে দেয় বলে জানা গেছে। বারাসাতেও জোর করে অটো, বাস, দোকান বন্ধ করার খবর পাওয়া গেছে।

সল্টলেক করুণাময়ী বাসস্ট্যান্ড, শিলিগুড়িতে বাস চালকদের হেলমেট পড়ে গাড়ি চালাতে দেখা যায়। তাদের দাবি, অপ্রীতিকর ঘটনার হাত থেকে বাঁচতেই এই অভিনব পদ্ধতি। ধর্মঘটের সমর্থনে রাজ্যজুড়ে একাধিক জায়গায় মিছিল বের করে ধর্মঘটীরা। কলকাতা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনেও ধর্মঘটের সমর্থনের মিছিল বের হয়। অশান্তির আশঙ্কায় শিয়ালদহ ও হাওড়া রেল স্টেশনেও ট্রেন সেবা বিঘ্নিত হয়েছে ফলে চরম অসুবিধায় পড়েছে যাত্রীরা।

তবে বন্ধের প্রভাব পড়েনি কলকাতা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে। অন্যদিনের মতো এখনো পর্যন্ত বিমান সেবা স্বাভাবিক আছে। বিভ্রাট এড়াতে যদিও যাত্রীরা নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই বিমানবন্দরে পৌঁছে যায়।

তবে ধর্মঘটের ইস্যুকে সমর্থন জানালেও এই হরতালকে কোনমতেই সমর্থন জানায়নি রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, এই ইস্যুতে আমার দল গণতান্ত্রিক আন্দোলন করছে। সেই ভাবে করা যেতে পারত। কিন্তু ধর্মঘটের মধ্যে দিয়ে প্রতিবাদ জানানোর পদ্ধতি সঠিক নয়। কারণ তাতে দেশের কোটি কোটি রুপির ক্ষতি হয়। সেই কারণে গত আট বছর এই রাজ্যে কোনো হরতাল ডাকা হয়নি।

হরতালের বিরোধিতায় রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এক নির্দেশ জারি করে বলা হয়েছে বুধবার হরতালের দিন কোন রাজ্য সরকারি কর্মচারী অনুপস্থিত থাকলে একদিনের বেতন কাটা যাবে। অনুপস্থিত থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্মীকে শোকজ করা হবে। শোকজের জবাব না মিললে শৃঙ্খলা ভঙ্গের ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।

হরতালে রাজ্যকে সচল রাখতে রাজ্যে গণপরিবহন সচল রাখতে বাস-ট্যাক্সি-ট্রাক মালিক সংগঠন এবং অটো রুট এর বিভিন্ন ইউনিয়নের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিল পরিবহন দফতরের কর্তারা। কিন্তু অশান্তি এড়াতে এদিন সকাল থেকেই রাস্তায় যানবাহন ছিল খুবই কম। স্কুলগুলিতে আগাম ছুটি ঘোষণা করা হয়।

এই হরতালে ব্যাংকিং সেবা বিঘ্নিত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সেবা সম্ভবত বিঘ্নিত হবে না। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই) জানিয়েছে, এ হরতালে তাদের কার্যক্রমে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না।

বাম-কংগ্রেসের সহ সংগঠনগুলোর ডাকা 'ভারত বনধ'কে সমর্থন জানিয়েছে শিবসেনা। হরতালকে কেন্দ্র করে কর্ণাটকের মাদিকেরিতে বাসে পাথর ছোড়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া বেঙ্গালুরুর পরিস্থিতি এখনো পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ রয়েছে। রাস্তায় অন্য দিনের মতন যানবাহন স্বাভাবিক রয়েছে। ভারত বনধকে সমর্থন জানিয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী টুইট করে বলেছেন, মোদী-অমিত শাহের জনবিরোধী ও শ্রমিক নীতি গোটা দেশে বেকারত্ব সৃষ্টি করেছে। আজ ২৫ কোটি শ্রমিক দিবস পালন করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ