Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘সেক্স চ্যাট’ থেকে ফ্রি নেটফ্লিক্স, সিএএ’র সমর্থন জোগাড়ে বিজেপির টোপ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ জানুয়ারি, ২০২০, ৫:৩০ পিএম

‘একা আছি, সেক্স করতে চাই। ফোন করুন ৮৮৬৬২ ৮৮৬৬২ নম্বরে।’ টুইটারে সুন্দরী মহিলার এমন আবেদনে ফাঁদে পা দিয়েছেন অনেকে। কিন্তু নম্বরে ফোন করতেই তা কেটে গেল। কেউ আবার লিখেছেন, ‘আমার ফোন হারিয়ে গিয়েছে। ৮৮৬৬২ ৮৮৬৬২ নম্বরে ফোন করে কেউ সাহায্য করুন।’ রক্ষাকর্তা হিসাবে এগিয়ে এসে নম্বরে ফোন করতেই সেই একই ব্যাপার। কেটে যাচ্ছে ফোন। এইভাবেই বিভিন্ন সোশ্যাল সাইটে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে নম্বরটি। কিন্তু এই নম্বরটি কার? আসলে বিজেপির দ্বারা প্রচারিত এই নম্বরটিতে মিসড কল দিলেই সিএএ’র সমর্থন জোগাড় হবে। অভিযোগ, বিজেপির আইটি সেল নানা প্রলোভন দেখিয়ে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের সমর্থন জোগাড়ে মরিয়া। তাই নম্বরটি এইভাবে টুইটার, ফেসবুক-সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ও এনআরসি’র প্রতিবাদে ভারতজুড়ে বিক্ষোভের ঢেউ। পালটা নাগরিকত্ব আইনের সমর্থন জোগাড়ে নেমেছে গেরুয়া শিবির। দলের পক্ষ থেকে ৮৮৬৬২ ৮৮৬৬২ এই টোল ফ্রি নম্বর প্রচার করা হচ্ছে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের সমর্থনে এই নম্বরে মিসড কল দেয়ার জন্য প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু দ্রুত বেশি সংখ্যক সমর্থন জোগাড়ে মরিয়া বিজেপি। তাই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে মানুষকে বিভ্রান্ত করার। সুন্দরী মহিলাদের ছবি দিয়ে ফেক প্রোফাইল তৈরি করে কখনও সেক্স চ্যাট, কখনও ফোন হারিয়ে গিয়েছে আবার কখনও বিনামূল্যে নেটফ্লিক্সের সাবস্ক্রিপশনের লোভ দেখিয়ে মানুষকে ওই টোল ফ্রি নম্বরে ফোন করার জন্য বলা হচ্ছে। ফোন করলেই কলটি কেটে যাচ্ছে। আর কাজ হাসিল হয়ে যাচ্ছে গেরুয়া শিবিরের।

শনিবার থেকে এমন হাজারো ভুয়া প্রোফাইল থেকে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে নম্বরটি ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এর সঙ্গে বিজেপি কোনও যোগ নেই বলে দাবি করেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা। তিনি জানিয়েছেন, এটা দলের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করার ষড়যন্ত্র। এর বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু যেভাবে নম্বরটি ছড়িয়ে পড়েছে তা মোটেই স্বস্তিতে রাখবে না গেরুয়া শিবিরকে।

নতুন নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) সমর্থন চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ টুইটারে একটি নম্বর শেয়ার করার পরেই এই নানা রূপের আবির্ভাব। অমিত জানান, ওই নম্বরে মিসড কল দিলেই এই আইনের পক্ষে সমর্থন নথিভুক্ত হবে। বিজেপির তরফেও ওই নম্বর প্রচার করা হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সেই একই নম্বর থেকে একাকিত্ব কাটাতে বন্ধুত্ব-যৌনতার আমন্ত্রণ, নিখরচায় বিনোদন অ্যাপের সাবস্ক্রিপশন, এমনকি চাকরির প্রস্তাব দিয়ে বলা হচ্ছে ওই নম্বরে ফোন করতে। টুইটারেই সিএএ-বিরোধী অনেকে অভিযোগ তুলেছেন, ভুয়া পরিচয়ে সিএএ-র পক্ষে বিপুল সমর্থন জোগাড় করতেই এমন কৌশল নিয়েছে বিজেপির আইটি সেল। অর্থাৎ, সম্পূর্ণ অন্য কারণে ওই নম্বরে কেউ মিসড কল দিলে তা সিএএ-র পক্ষেই যাবে। হু হু করে বাড়বে সিএএপন্থী সমর্থকের সংখ্যা।

এই অভিযোগ অস্বীকার করে দিল্লিতে বিজেপি সূ্ত্রে বলা হয়েছে, কারা ওই প্রচার চালাচ্ছে, তা তদন্তসাপেক্ষ। বিরোধীরাও ওই কাজ করে থাকতে পারে। একই সঙ্গে অবশ্য দলের পক্ষ থেকে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে, অনেক সময়ে উৎসাহী সমর্থকেরা দলের লক্ষণরেখার বাইরে গিয়ে কাজ করে ফেলে। যা অনুচিত। তবে সিএএ-র বিরুদ্ধে যে ভাবে বিরোধীরা পথে নেমেছেন, তাতে অস্বস্তিতে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। যার মোকাবিলায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিষয়টি বোঝানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল।

অমিত শুক্রবার নম্বরটি শেয়ার করার পর শনিবারই টুইটারে দেখা যায়, ওই একই নম্বর থেকে আসছে নানা রকম প্রস্তাব। শর্ত একটাই, ওই নম্বরে ফোন করতে হবে। যেমন মহিলার ছবি দেওয়া একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে ওই নম্বর দিয়ে ‘বন্ধুত্বের’ প্রস্তাব দেওয়া হয়। কোনওটি থেকে লেখা হয়, ‘কেউ আমাকে ভালবাসতে চাইলে বা ডেটে যেতে চাইলে ফোন করুন।’ কোনও টুইটার হ্যান্ডল থেকে আবার সরাসরি যৌনতার আমন্ত্রণ জানানো হয় ওই নম্বর দিয়েই!

দামি ঘড়ি, আইফোন, বিনোদন অ্যাপের সাবস্ক্রিপশনের অফারও দেওয়া হয় একই নম্বর থেকে। একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে টুইট করা হয়, ‘ছ’মাসের নেটফ্লিক্স সাবস্ক্রিপশন চাই? এই নম্বরে ফোন করুন। এই সুযোগ কেবল প্রথম ১০০ জনের জন্য। নিজের ভাগ্য পরীক্ষা করুন।’ কোথাও আবার নেটফ্লিক্সের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে বিনামূল্যে হাজার জিবি ডেটা অথবা অ্যামাজন প্রাইম, হটস্টারের সাবস্ক্রিপশনের প্রলোভনও। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে নেটফ্লিক্স ইন্ডিয়া তাদের অফিশিয়াল অ্যাকাউন্ট থেকে টুইট করে জানায় যে এমন অফারের খবর একেবারেই মিথ্যে।

সিএএ-বিরোধীদের দাবি, যে কোনও উপায়ে জনসমর্থন টানতেই বিজেপি এই রাস্তা নিয়েছে। তাদের দাবি, প্রকাশ্যে ‘গণভোটে’ হেরেই মরিয়া বিজেপি এই কৌশল নিয়েছে বলে সিএএ-বিরোধীদের দাবি। সূত্র: টাইমস নাউ, টিওআই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ