Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দ্রুত বন্ধু হারাচ্ছে ভারত

সিএএ কেউ সমর্থন করছে না : হুঁশিয়ারি বিদেশি কূটনীতিকদের

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

ভারতে সিটিজেনশিপ (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট পাসের প্রেক্ষিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার পর এক পক্ষকালের বেশি সময় চলে গেছে এবং বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের এই পদক্ষেপ নিয়ে রাজধানীর বিদেশী কূটনৈতিক মহলে এখন অস্বস্তি বাড়তে শুরু করেছে।

কূটনীতিকরা প্রকাশ্যে বলছেন যে, সিএএ একটি ‘অভ্যন্তরীণ ইস্যু’। তবে, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বিগত কয়েক দিন ধরে সব মহাদেশের অন্তত ১৬টি দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকদের সাথে নতুন আইন ও বিক্ষোভ নিয়ে কথা বলেছে এবং তারা সবাই পরিস্থিতি নিয়ে ‘উদ্বেগ’ জানিয়েছেন।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো: সরকার এর আগে বিভিন্ন ইস্যুতে কূটনীতিকদের ব্রিফ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে পুলওয়ামা হামলা, বালাকোট বিমান হামলা, জম্মু ও কাশ্মিরের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল, এবং এমনকি অযোধ্যা মামলার রায়। কিন্তু সিএএ এবং এর বিভিন্ন দিক নিয়ে এখন পর্যন্ত একবারও তাদের ব্রিফিং করা হয়নি।

জি-২০ভুক্ত একটি দেশের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, “ভারত সরকার আমাদেরকে কাশ্মির এবং এমনকি অযোধ্যা রায় নিয়ে ব্রিফিং করেছিল, যদিও এগুলোকে তারা অভ্যন্তরীণ ইস্যু হিসেবে উল্লেখ করেছিল। কিন্তু সিএএ নিয়ে তারা ব্রিফ করার কথায় গুরুত্ব দেয়নি। অথচ, এই ইস্যুটির একটা আন্তর্জাতিক দিক রয়েছে, বিশেষ করে এই আইনে যেহেতু ভারতের তিন প্রতিবেশী দেশের বিষয় যুক্ত রয়েছে”।
নতুন আইনে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈন এবং পার্সি ধর্মের অভিবাসীদেরকে ভারতের নাগরিকত্ব দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে।
জি-২০ এবং পি-৫ গ্রুপ এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতিনিধিসহ কূটনীতিকরা পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেছেন, কারণ এই ইস্যুটি স্পর্শকাতর এবং এটা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপর ‘প্রভাব ফেলতে পারে’।

তারা মনে করিয়ে দেন যে পুরো ২০১৯ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বেশ কতগুলো ব্রিফিং করেছিল। বিশেষ করে ফেব্রুয়ারি-মার্চে পুলওয়ামা-বালাকোট হামলার পর, আগস্ট থেকে অক্টোবরে কাশ্মিরের সিদ্ধান্তের পর এবং এমনকি সুপ্রিম কোর্টের অযোধ্যা মামলার রায়ের পরও তারা ব্রিফিং করেছিল, যেটাতে তারা অবাকই হয়েছিলেন।
দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়েছে সত্য, কিন্তু তারা জানিয়েছেন এখন পর্যন্ত যৌথ বা গ্রুপ ধরে কোন ব্রিফিং করা হয়নি, যেটা এর আগে অন্যান্য ঘটনায় করা হয়েছে। তারা কিছু লিখিত কাগজপত্র দিয়েছে, যেগুলো মূলত সিএএ’র বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রশ্নোত্তর ধরনের এবং এগুলো দূতাবাসগুলোকে দেয়া হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে অধিকাংশ কূটনীতিক এই উপসংহারে এসেছেন যে, বিক্ষোভ শুধু মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমিত নেই। তারা এখন এটা বোঝার চেষ্টা করছেন যে, নতুন আইনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমালোচনার ব্যাপার সরকারের আদৌ কোন মাথাব্যাথা আছে কি না।

অন্যদিকে, সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভের প্রথম বড় ধরনের কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে বাংলাদেশ তাদের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর বাতিল করেছে এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে তার সফর বাতিল করেছেন।
অনেক বিদেশী কূটনীতিক এমনটা ভাবছেন যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হয়তো আন্তর্জাতিক সমালোচনার ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছেন, কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ব্যাপারে তারা নিশ্চিত নন। এক কূটনীতিক বলেছেন, “আমাদের সদর দপ্তর থেকে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার উপর নজর রাখা হচ্ছে, এবং তারা আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করছেন যে, মোদি সরকার কতটা রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ঝুঁকি নিতে পারবে”।

বিভিন্ন মহাদেশের কূটনীতিকরা বলেছেন যে, বিদেশী মিডিয়াতে যেভাবে বিক্ষোভ ও সরকারের সাঁড়াশি অভিযানের ছবি ও প্রতিবেদন ছাপা হচ্ছে, সেটা ভারতের ‘বন্ধু’ রাষ্ট্রগুলোর উপর কঠিন চাপ সৃষ্টি করছে, এবং এসব দেশের অনেকেই ‘অভিন্ন মূল্যবোধ’ নিয়ে সরকারের প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন।
সম্প্রতি, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর মার্কিন কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠক বাতিল করেছেন যাতে কংগ্রেস সদস্য প্রমিলা জয়পালের সাথে তাকে কথা বলতে না হয়। জয়পাল কাশ্মিরে ভারত সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে যথেষ্ট সমালোচনা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের দুজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী এলিজাবেথ ওয়ারেন ও পিটার বাট্টিগিগ জয়পালকে সমর্থন করেছেন।

এক কূটনীতিক বলেছেন, “সরকার তার মিত্রদের জন্য তাদেরকে সমর্থন দেয়ার বিষয়টি কঠিন করে তুলছে। আগে যেখানে ভারতের পক্ষে সম্মিলিত সমর্থন ছিল, সেখানে এখন বন্ধু হারাচ্ছে তারা”।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, এই আইন সেক্যুলার জাতি হিসেবে ভারতের চরিত্র দুর্বল করে দিতে পারে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন এই আইনের কারণে ‘মানুষ মারা যাচ্ছে’। নয়াদিল্লী অবশ্য এই মন্তব্যের দ্রুত জবাব দিয়েছে এবং এটাকে তথ্যগতভাবে ‘ভুল’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র এর আগে ভারতের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছিল যাতে ‘সংবিধান ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের’ প্রতি সম্মান দেখিয়ে দেশের ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার’ রক্ষা করা হয়। এর আগে মার্কিন হাউজ ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি বলেছিল যে, নাগরিকত্বের জন্য ধর্মীয় পরিচয় দেখা হলে সেখানে বহুত্ববাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের হাই কমিশনার বলেছেন, এই আইনটি ‘মৌলিকভাবে বৈষম্যমূলক’ এবং এতে ‘সাম্যতার প্রতিশ্রুতিকে অবজ্ঞা করা হয়েছে’ বলে মনে হয়।

ভারতের ‘বন্ধুরা’ অবশ্য তাদের অবস্থান বজায় রেখেছেন। ফরাসী দূত এমানুয়েল লেনাইন এবং রাশিয়ান মিশনের ডেপুটি প্রধান রোমান বাবুশকিন এই আইনকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে মন্তব্য করেছেন।
ভারতে তিন বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন, এমন একজন কূটনীতিক বলেছেন যে, সরকারের পুনর্নির্বাচিত হওয়া নিয়ে যে একটা ‘সুধারণা’ জন্ম নিয়েছিল, সেটা পুরোপুরি চলে গেছে। তিনি বলেন, “বছরের শুরুর দিকে, পুলওয়ামা সন্ত্রাসী হামলার পর নয়াদিল্লী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বড় একটা সমর্থন পেয়েছিলৃ তারা কাশ্মিরের সিদ্ধান্ত নিয়েও সমর্থন দিয়েছে, যদিও মার্কেল ও ম্যাক্রনের মতো নেতারা মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কিছু মন্তব্য করেছেন। কিন্তু নাগরিকত্ব আইন ও বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের ব্যাপারে সুধারণাটি পুরোপুরি চলে গেছে”। সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর।

 

 



 

Show all comments
  • Gobinda Neogi ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১:০৫ এএম says : 0
    হাস্যকর প্রতিবেদন!
    Total Reply(0) Reply
  • Gourav Duary ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১:০৫ এএম says : 0
    তাই বুঝি!
    Total Reply(0) Reply
  • N F Aronnya ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১:০৬ এএম says : 0
    ভারতের পরমাণু অস্ত্রের তৈরির ওপরও কারো সমর্থন ছিল না। আমেরিকার আর্থিক নিষেধাজ্ঞাও ছিল। কিন্তু!
    Total Reply(0) Reply
  • Kamran Kamu ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১:০৬ এএম says : 0
    Good
    Total Reply(0) Reply
  • Belaeat Hossain ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১:০৬ এএম says : 0
    Very Good news for us
    Total Reply(0) Reply
  • Sabbir Ahme ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ৭:৫৮ এএম says : 0
    মোদি সাম্প্রদায়িক লোক।যা কোন রাষ্ট্রের জন্য মহা বিপদ।গোজরাট দাঙ্গা থেকে আরম্ভ করে একেরপর এক সাম্প্রদায়িক নীতি গ্রহণ করে সাম্য ও ন্যায় নীতি কে ধূলিসাৎ করে দিয়ে সংঘাতের দিকে এগুচ্ছে এটা ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা নীতি নির্ধারকদের ভেবে দেখা জরুরি মনে করি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ