Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উত্তর প্রদেশ সরকার বিক্ষোভে নিহতদের জানাযা ও দাফনেও হস্তক্ষেপ করছে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০২০, ১১:৩৯ এএম

ভারতের উত্তর প্রদেশে বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনবিরোধী বিক্ষোভে অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। সংবাদমাধ্যম হাফিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিক্ষোভ দমনে উত্তর প্রদেশের যোগী সরকার চরম দমনপীড়ন চালাচ্ছে। অত্যন্ত কঠোর অবস্থান নেওয়ার পর এখন নিহতদের জানাযা-দাফনেও বিধি-নিষেধ আরোপ করছে। অনেক পরিবারকে বাধ্য করছে গোপনে দ্রুত দাফন করতে।

২০ বছরের মোহাম্মদ সুলেমান গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় ২০ ডিসেম্বর। ওই দিন মধ্যরাতে নিহতের বাবাকে কাছের পুলিশ স্টেশনে ডেকে নিয়ে দাফনের বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। সুলেমানের মরদেহ পাওয়া গিয়েছিল বিজনর জেলার ব্যস্ত এলাকায় নেহতাউর চৌমুহনীতে। নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে মুসলমানদের বিক্ষোভ ও স্লোগানে পুলিশ গুলি চালানোর অল্প কিছু সময় তার লাশ পাওয়া হয়।

মৃত্যুর পর সুলেমানের মরদেহ বিজনর জেলা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশ তা আটকে রাখে। এক পুলিশ কর্মকর্তা নিহতের বাবা জাহিদ হুসাইনের বাবাকে জানায়, পরদিন (২১ ডিসেম্বর) সুলেমানের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হবে। কিন্তু পরিবারের কাছে লাশ এক শর্তে হস্তান্তর করা হবে, তা হলো নেহতাউর থেকে দূরে কোথাও দ্রুতই দাফন করতে হবে। জানাজায় কোনও বন্ধু বা শোকাহতকে আমন্ত্রণ জানানো যাবে না। কঠোর পুলিশি বন্দোবস্তের মধ্যে দাফন সম্পন্ন করতে হবে।
সুলেমানের বড় ভাই শোয়েব পুলিশ স্টেশনে গিয়েছিলেন বাবার সঙ্গে। তিনি বলেন, পুলিশ বলে তোমরা দাঙ্গাকারী। দাফনেও তোমরা দাঙ্গা শুরু করবে। তারা আরও বলে যে কোনও জায়গায় গর্ত খুড়ো এবং পুঁতে ফেলো।

শোয়েব জানান, পরিবারের পক্ষ থেকে নিহতের দাফনের ধর্মীয় রীতি ধৈর্য্য ধরে পুলিশকে বুঝিয়ে বলেছেন তারা।
২১ ডিসেম্বর সকাল ৭টার কিছুক্ষণ পর সুলেমানের মরদেহ পুলিশের একটি গাড়িতে তোলা হয়। গাড়িটি পুলিশ প্রহরায় বিজনর থেকে বাগদাদ আনসার এলাকার একটি গোরস্থানে নিয়ে যাওয়া যায়। সেখানে তার নানি বাস করতেন।

একই দিন রাতে, নেহতাউর এলাকার আরেকটি নিরুপায় পরিবারকেও পুলিশের সঙ্গে একই ধরনের সমঝোতা করতে হয়েছে। ৮ মাসের শিশুর বাবা ২১ বছরের আনাস হোসাইন একটি সরু গলিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এই ঘটনাতেও পুলিশ দূরে কোথাও দাফনে রাজি না হওয়ার পূর্বে মরদেহ পরিবারকে হস্তান্তরে রাজি হয়নি।

আনাসের দাফনের সময় মিথান নামের গ্রামে একটি কবরস্থানে পুলিশ পাহারা দেয়, নিহতের ভাই কবর খুড়েন, বাবা ছেলের মরদেহকে গোসল করান। আর তার চাচা কবরে লাশের উপরে দেওয়ার জন্য কাঠ ও বাঁশের ব্যবস্থা করেন। বাবা আরশাদ হোসাইন বলেন, আমাদের পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যই আনাসকে শেষবার দেখার সুযোগ পায়নি।

বিজনর এলাকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিশ্বজিত শ্রিবাস্তব নিশ্চিত করেছেন, সুলেমান ও আনাসের মরদেহ দূরে কোথাও দাফন করার নির্দেশনা দেওয়ার বিষয়ে। নেহতাউরের পরিস্থিতি উত্তেজনাকর থাকায় এই নির্দেশ দেওয়া হয়। তিনি বলেন, পরিবার সম্মত হয়েছে।

উল্লেখ্য, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্থান থেকে ভারতে গিয়ে বসবাস করা অমুসলিমদের দেশটির নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বৈষম্যমূলক এ আইনের বিরুদ্ধে ভারতজুড়ে বিক্ষোভে অন্তত ২৬ জন নিহত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে উত্তর প্রদেশে। বন্দি করা হয়েছে ছয় হাজারেরও বেশি মানুষকে।



 

Show all comments
  • jack ali ১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৩৪ পিএম says : 1
    O' Allah no muslim country is helping muslim in India and kasmir from Modi Barbarian..... O' Allah You destroy Modi and his associates. Ameen
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ