মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
মুম্বাই-ভিত্তিক কপিরাইটার সারা সৈয়দ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অধীনে ভারতে হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থান নিয়ে তিনি অনেক আগেই উদ্বিগ্ন হয়েছিলেন তবে এখন পর্যন্ত এই পরিস্থিতি পরিবর্তন হবার মত কোন সম্ভাবনা তিনি দেখছেন না।
এনআরসি ইস্যুতে এই বিক্ষোভে শুরু হলেও বর্তমানে তা দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ার কারণ হচ্ছে, মোদির নতুন নাগরিকত্ব আইন এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সময় শিক্ষার্থীদের উপর টিয়ার-গ্যাস আক্রমণের দৃশ্য।
২৭ বছরের সারা মুসলমান হলেও সারা বিয়ে করেছেন একজন ক্যাথলিক ক্রিস্টানকে। বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেয়া সাক্সাৎকারে তিনি বলেন, ‘এমন নয় যে কেউ জানত না যে, মেরুকরণের ব্যাপারগুলো ঠিক হচ্ছে না। তবে আমদের মত বেশিরভাগই মানুষের কাছেই রাজনীতি নিয়ে চিন্ত-ভাবনা করাটা খুব হতাশাজনক বিষয়।’ তিনি বলেন, ‘তবে এখন এই বিক্ষোভে যোগ না দেয়ায় ও প্রতিবাদ না করায় নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।’
তিনটি প্রতিবেশী দেশ থেকে অমুসলিম নাগরিকদের দ্রুত নাগরিকত্ব দেয়ার নতুন আইনটি হচ্ছে মোদি সরকারের সর্বশেষ নীতি। সমালোচকরা এই আইনকে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারত থেকে মুসলমানদের বিতাড়ন করার অস্ত্র হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন।
মোদির দল প্রায় ছয় বছর ধরে ভারতে ক্ষমতায় রয়েছে। এ সময়কালে তারা কিংবদন্তী মুসলিম নেতাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতে ইতিহাসের পাঠ্যপুস্তকগুলোকে বিকৃত করে নতুনভাবে লিখেছে ও ইসলামের স্মৃতি বিজড়িত অনেক ঐতিহাসিক স্থানের নাম পরিবর্তন করেছে এবং মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরের অধিকৃত অঞ্চলটির বিশেষ স্বায়ত্তশাসন ছিনিয়ে নিয়েছে।
মোদি জোর দিয়ে বলেছেন যে, এই আইনটি ভারতীয় মুসলমানদের উপর কোনও প্রভাব ফেলবে না। তবে ২০১৯ সালের নির্বাচনে তার দলের অবৈধ অভিবাসীদের শনাক্ত করার জন্য দেশব্যাপী জরিপ চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়ে মুসলমানদের ভেতরে রাষ্ট্রহীন হওয়ার আশঙ্কা জাগিয়ে তুলেছে, কারণ নাগরিকত্ব হারিয়ে তারা অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত হলে তাদের জন্য ভারতে থাকার কোন বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয়নি।
এই আইনের প্রয়োগ সম্পর্কে উদ্বিগ্ন লোকদের বিনামূল্যে আইনী পরামর্শ দিয়ে চলেছেন মুম্বাইয়ের আইনজীবি মোমিন মুসাদ্দিক। তিনি এএফপিকে বলেন, বছরের পর বছর ধরে মুসলমানদের মধ্যে জমতে থাকা উদ্বেগ শেষ পর্যন্ত দেশজুড়ে বিক্ষোভ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘সরকারের হিন্দু জাতীয়তাবাদী এজেন্ডার কারণে এত দিন ধরে মানুষ ভয় পেয়েছে, তবে তারা এখন উপলব্ধি করছে যে তাদের আর হারানোর কিছুই নেই।’ তিনি জানান, যেহেতু এখন ভারতে তাদের বেঁচে থাকাটাই হুমকির মুখে পড়েছে, তাই প্রতিবাদ করা ছাড়া তাদের আর কোনো বিকল্প নেই।’
মুসলমানরা ছাড়াও ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠী থেকে শুরু করে বুদ্ধিজীবী ও বিরোধী রাজনীতিকসহ ভারতীয়দের বড় একটি অংশ এই বিক্ষোভে যোগ দিতে উৎসাহিত হয়েছে।
দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ জোয়া হাসান এএফপিকে বলেছেন, বিক্ষোভগুলো মোকাবেলা করাটা গত ছয় বছরের মধ্যে মোদি সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
কেরালা ও পশ্চিমবঙ্গের মতো বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির বেশ কয়েকটি স্থানীয় সরকার বলেছে যে, তারা জাতীয় নাগরিক নিবন্ধের জন্য জরিপ পরিচালনা করবে না, জনগণের ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখাবে এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অমাণ্য করবে।
হাসান বলেন, যদিও নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে লড়াই হিসাবে এই বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল, তবে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে অনেকে এখন ধর্মনিরপেক্ষ ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে হিন্দু জাতি হিসাবে ঘোষণা করার জন্য সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে। তিনি আরও বলেন, ‘এই অস্থিরতার মধ্যে মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ার সম্ভাব হবে না। এই প্রচারণাই ছিল তার জনপ্রিয়তার মূল ভিত্তি যার ফলে গত মে মাসের নির্বাচনে তিনি ভূমিধস জয় পেয়ে পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসেন। কিন্তু এই আন্দোলন তার সেই ভিত্তিকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে। বিক্ষোভের ফলে সরকার হয়তো কিছুটা নমনীয় হতে পারে তবে তারা তাদের মূল এজেন্ডা থেকে সরে যেতে পারবে না।’
বিক্ষোভকারী সারা প্রথমবার যখন বিক্ষোভে অংশ নেন, সংখ্যালঘু হিসেবে তখন তিনি আতঙ্কিত ছিলেন। কিন্তু পরে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকদের বিক্ষোভে যোগ দিতে দেখে তিনি উৎসাহিত হন। তিনি বলেন, ‘আমি আগে খুবই অসহায় বোধ করতাম, কারণ আমার মনে হতো, এদেশের পরিস্থিতি বদলে দেয়ার মতো কিছু করার আমার ক্ষমতা নেই।’ তিনি বলেন, ‘কিন্তু সমস্যা ও বাস্তবতা থেকে জনগণের দৃষ্টি সরিয়ে রাখার জন্যই যে সরকার এভাবে ধর্মীয় মেরুকরণ করার চেষ্টা করছে সেই কৌশল আস্তে আস্তে সবাই বুঝতে পারছেন, এখন আমরা জেগে উঠেছি।’ সূত্র: এএফপি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।