মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারতের নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে, সমালোচকেরা বলছেন যে এটি মুসলিমদের কোণঠাসা করেছে, দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জোর দিয়ে বলেছেন যে আইনটি কোনো ধর্মের কোনো নাগরিকের ওপর প্রভাব ফেলবে না। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা তাকে বা তার সরকারকে বিশ্বাস করতে চাচ্ছে না। সহজাতভাবেই রাজনীতিবিদদের চেয়ে বিক্ষোভকারীরা বিচক্ষণ। তাদের নতুন আইন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার অধিকার আছে। এই আইনটি যতটুকু মনে হয়, তার চেয়ে অনেক খারাপ।
নতুন নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী ছয়টি ধর্মীয় গ্রæপের সদস্যদেরকে- হিন্দু, পার্সি, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন ও খ্রিস্টান- ছয় বছর ভারতে বসবাস সাপেক্ষে নাগরিকত্ব দেয়া হবে। মুসলিমদেরকে এই আইনে সুনির্দিষ্টভাবে বাদ দেয়া হয়েছে। অথচ হিন্দুদের পর তারাই ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় স¤প্রদায়।
এই পরিবর্তনের প্রভাব হতে পারে সুদ‚রপ্রসারী। প্রথমবারের মতো নাগরিকত্ব লাভের শর্ত হিসেবে ধর্ম ব্যবহৃত হতে যাচ্ছে। এটি ভারতের সেক্যুলার সংবিধানের পরিপন্থী। সুপ্রিম কোর্ট এটি বাতিল করে দিতে পারে বলে সম্ভাবনা রয়েছে এখনো। তবে এটিই একমাত্র আইন নয়। আরো কিছু আইনের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে, পাস করা হয়েছে যেগুলো ভারতের অহিন্দুদের সমাজের কোণায় ঠেলে দেয়ার জন্য প্রণীত। এই সর্বশেষ আইনটি ভারতীয় নাগরিকত্বের ভিত্তি হিসেবে হিন্দুবাদকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপির একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। দেশের প্রান্তিক অংশে শুরু হয়ে এসব আইন ধীরে ধীরে প্রতিটি নগর ও প্রতিটি গ্রামের হৃদপিÐে আঘাত হানবে। বিক্ষোভকারীরা জানে, সামনে কী আছে, এ কারণেই তারা রাস্তায় নেমেছে।
বিজেপি অবশ্য এবারই প্রথম জনসংখ্যাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য, হিন্দু জনসংখ্যা বাড়ানোর জন্য, মুসলিমদেরকে প্রান্তিক অবস্থায় ঢেলে দিতে আইনকে ব্যবহার করেনি।
গত আগস্টে মোদি সরকার ভারত-শাসিত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে অঞ্চলটিকে নয়া দিল্লির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। সরকার জানায়, এটা কেবল বাকি ভারতের সাথে অঞ্চলটিকে নিয়ে আসার কাজ। কিন্তু জম্মু ও কাশ্মীরের মর্যাদা পরিবর্তন সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। এই মর্যাদা পরিবর্তনের ফলে ভারতের যেকোনো স্থানের লোকজন সেখানে বসতি স্থাপন করতে পারবে। এতে করে সেখানকার জনসংখ্যার চিত্রে পরিবর্তন আসতে পারে। ভবিষ্যতের গণভোটে এতে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন আসতে পারে।
আর নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনটি এই কাজের উপযোগী। এতে প্রতিবেশী দেশগুলোতে নির্যাতিতদের কথা বলা হলেও আসলে এর টার্গেট মুসলিমেরা। এ কারণেই কাশ্মীরের বিপরীত দিকে অবস্থিত আসামে ভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
ভারতের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এই রাজ্যে সরকার জটিল ও ব্যয়বহুল পদক্ষেপ গ্রহণ করে নাগরিক পঞ্জি হালনাগাদ করেছে। এই ব্যবস্থায় আসামের তিন কোটি লোককে প্রমাণ করতে বলা হয় যে তারা বা তাদের পূর্বপুরুষেরা ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে ভারতে যাওয়ার বিষয়টি প্রমাণ করতে হবে। আগস্টে চ‚ড়ান্ত তালিকায় ১৯ লাখ লোককে রাষ্ট্রহীন ঘোষণা করা হয়। তাদের অনেককে ক্যাম্পে ঠেলে দেয়া হয়। তাদের ভাগ্যে কী হবে তা নিশ্চিত নয়। কেন আসাম দিয়ে এনআরসি শুরু হলো? অনেকেই বলছে, জম্মু ও কাশ্মীরের পরেই আসামে সবচেয়ে বেশি মুসলিমের বাস। এ কারণেই আসামকে গ্রহণ করা হয়েছে।
আসামের এনআরসিবিষয়ক কার্যক্রম শেষ হওয়ার আগেই বাকি ভারতেও তা করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আসামে প্রায় ৬ ভাগ লোককে রাষ্ট্রহীন পাওয়া গেছে। ভারতের বিপুল সংখ্যক মানুষের বিষয়টি বিবেচনায় নিলে মনে হবে কোটি কোটি লোক বাদ পড়তে পারে তালিকা থেকে।
নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসি কিভাবে মুসলিম নাগরিকদের কোণঠাসা করে ফেলছে, তা বুঝতে বেশি কিছু করতে হয় না।
নাগরিকত্ব আইন আদালতেও টিকে গেলে ভারত আর নাগরিকদের দেশ বিবেচিত হবে না, এটি হয়ে যাবে হিন্দুদের দেশ। অবশ্য বিজেপির মতাদর্শের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এটিই। আর এ কারণেই অনেক ভারতীয় নার্ভাস হয়ে পড়েছে। এমনকি হিন্দুরা পর্যন্ত এর বিরোধিতা করছে।
বিজেপি আসলে ভারতকে ভেতর থেকে ধীরে ধীরে নতুন করে গড়তে চাচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় কোটি কোটি মুসলিম তাদের নিজেদের দেশেই পরবাসী হয়ে পড়বে। সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।