Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে উত্তাল দিল্লিতে ১৪৪ ধারা, সরকারকে সুপ্রিম কোর্টের নোটিস

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৪:২৪ পিএম

নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে উত্তাল ভারতের রাজধানী দিল্লির উত্তর-পূর্ব জেলায় জারি করা হল ১৪৪ ধারা। রোববার থেকেই নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ থেকে চরম অশান্তি ছড়ায়। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভ চলাকালীন পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। মঙ্গলবারও অশান্তি ছড়ায় দিল্লির সিলামপুর ও ব্রিজ পুরি এলাকায়। ঘটনার তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং কমপক্ষে চারটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। এদিকে এই আইনের বৈধতা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে নোটিস দিল দেশটির শীর্ষ আদালত।

সংবাদসংস্থা এএনআই জানিয়েছে, পূর্ব দিল্লিতে হিংসাত্মক প্রতিবাদের পরেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে সমস্ত বড় সমাবেশ। নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে মঙ্গলবার উত্তপ্ত হয় দিল্লির সিলামপুর এলাকা, পুলিশকে লক্ষ্য করে পাঁথর ছোঁড়ার অভিযোগ ওঠে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি এবং কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে পুলিশ। দিল্লি পুলিশ দাবি করছে, এই ধরণের অশান্তি যারা ছড়াচ্ছে তারা আসলে সমাজবিরোধী, বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে এর আগেও তাদের জড়িয়ে পড়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

রোববার সন্ধ্যায় জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণের প্রতিবাদেই ওই দিন শুরু হয় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। অন্তত দু’জন পুলিশকর্মী আহত হন বলে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি গাড়ি ভাঙচুর করা হয় বলেও অভিযোগ ওঠে। পরিস্থিতি সামাল দিতে শূন্যে গুলি চালাতে হয় পুলিশকে। দিল্লি পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, দুপুর ১টা নাগাদ বিক্ষোভ শুরু হয়, একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রসিং-এ জমা হন বিক্ষোভকারীরা, তারপরেই ওই বিক্ষোভ থেকে উত্তেজনা ছড়ায়।

নাগরিকত্ব আইন, জাতীয় নাগরিকপঞ্জী ইস্যুতে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন সিলামপুরের বিক্ষোভকারীরা। তারপরেই বিক্ষোভের আঁচে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। দিল্লি মেট্রো রেলের তরফ থেকে জানানো হয়, ৬টি মেট্রো স্টেশনের প্রবেশ ও প্রস্থানের গেট বন্ধ করে দিতে হয় ওই উত্তপ্ত পরিস্থিতির জেরে।

বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে যে সব অমুসলিম মানুষরা ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন তারা এবার ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এরই বিরুদ্ধে প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন দেশের অসংখ্য মানুষ। নতুন আইনটির মাধ্যমে ধর্মের ভিত্তিতে বিবেচনা করে অবৈধ অভিবাসীদের দেশের নাগরিক হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া সংবিধানের মূল কাঠামোর পরিপন্থী। এই আইন নাগরিকদের জীবন ও মৌলিক অধিকার তথা সাম্যের অধিকার লঙ্ঘন করে, দাবি বিক্ষোভকারীদের।

দিল্লিতে জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রোববার প্রতিবাদ মিছিল করার সময় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় সেখানে। পুলিশ ওই পদযাত্রা থামানোর চেষ্টা করলে তাদের লক্ষ্য করে কেউ বা কারা পাথর ছুঁড়ে মারে, পুড়িয়ে দেয়া হয় বাস এবং দু’চাকার গাড়িও। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনা অনুমতিতে পুলিশ ঢোকে, এমন অভিযোগেও উত্তাল হয় রাজধানী। শতাধিক শিক্ষার্থীকে আটকেও রাখে দিল্লি পুলিশ, পরে যদিও তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু পুলিশি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও আছড়ে পড়ে প্রতিবাদের ঝড়।

এদিকে, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে নোটিস দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ওই আগামী ২২ জানুয়ারি ওই আইনের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে করা মামলার পরবর্তী শুনানি হবে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে। তবে আপাতত ভারতের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চ ওই আইনের প্রয়োগ স্থগিত রাখার আবেদন খারিজ করে দিয়ে বলেন, আগামী ২২ জানুয়ারি ‘এই আইনটি স্থগিত রাখার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে’। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতা করে প্রায় ৬০টি আবেদন জমা পড়ে সুপ্রিম কোর্টে। বিতর্কিত এই আইনটির বিরোধিতা করে আরো অনেকের মতো দেশের শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা জয়রাম রমেশ, ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগ এবং অসমে ক্ষমতাসীন বিজেপির সহযোগী দল অসম গণ পরিষদ এবং ডিএমকে। ভারতের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ এই আবেদন গ্রহণ করে। বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন বিআর গাভাই এবং সূর্য কান্ত।

বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে আবেদনকারীরা যুক্তি দেখিয়েছেন যে, ধর্মের ভিত্তিকে কখনোই নাগরিকত্ব প্রদান করা যায় না। তারা আরও বলেন যে, নতুন আইনটির মাধ্যমে ধর্মের ভিত্তিতে বিবেচনা করে অবৈধ অভিবাসীদের দেশের নাগরিক হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া সংবিধানের মূল কাঠামোর পরিপন্থী। এই আইন নাগরিকদের জীবন ও মৌলিক অধিকার তথা সাম্যের অধিকার লঙ্ঘন করে। কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা বলেন যে এই আইনটি ‘সংবিধানের মূল কাঠামোকে আঘাত করে’। এই আইন লাগু করা নিয়ে মোদি সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। তিনি বলেন, হিটলারের মতো একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে হাঁটছে কেন্দ্র।

এদিকে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে বার্তা দিয়ে বললেন, ‘দেশে আগুন‌ লাগানো নয়, নেভানো আপনার কাজ।’ এদিন তিনি জানান, জাতীয় লাগরিক পঞ্জি ও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন আসলে ‘একই ললিপপের দু’পিঠ।’ টানা তিনদিন ধরে এই আইনের বিরুদ্ধে মিছিলে অংশ নিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করে বলেন, ‘আপনারা বলছেন কেউ নাগরিকত্ব হারাবে না। কিন্তু এখন বলছেন প্যান, আধার কোনওটাতেই কাজ হবে না। তাহলে কীসে কাজ হবে? বিজেপির মাদুলিতে? বিজেপি একটি ওয়াশিং মেশিনে পরিণত হয়েছে।’ বুধবার সরাসরি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘আপনি দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কেবল একজন বিজেপি নেতা মাত্র নন। দয়া করে দেশে শান্তি বজায় রাখুন।’ এরপরই তিনি বলেন, আপনারা ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ করতে পারেননি। করেছেন ‘সবকা সাথ সর্বনাশ’। সিএএ ও এনআরসি প্রত্যাহার করুন। নাহলে আমিও দেখব আপনারা এটা এখানে কী করে কার্যকর করেন। সূত্র: এনডিটিভি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ