মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে (ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস, সংক্ষেপে আইসিজে) অন্তর্বর্তী আদেশের আবেদনের ওপর তিন দিনের শুনানির শেষ দিনে মিয়ানমারে সংগঠিত রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞ আড়াল করতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি ও তার আইনজীবী দল যেসব যুক্তি-তর্ক উত্থাপন করেছেন তা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য মিলেছে তাদের কপালে। সু চি'র যুক্তিকে 'খোঁড়া' তো বটেই, তার আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে তাদের সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিউ ইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডাব্লিউ) এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস।
আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে (ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস, সংক্ষেপে আইসিজে) অন্তর্বর্তী আদেশের আবেদনের ওপর তিন দিনের শুনানির শেষ দিনে সু চি বলেছেন, আইসিজের বিরূপ কোনো রায় মিয়ানমারের সামরিক বিচারব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করবে। মিয়ানমারের নেত্রীর ওই যুক্তিকে ‘হাস্যকর’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। জেনোসাইড আড়াল করতে মিয়ানমারের আইনজীবীদের যুক্তি শুনে তিনি ইট বার্তায় তিনি লিখেছেন, ‘মিয়ানমারের আইনজীবী সত্যিই এক অসুস্থ যুক্তি তুলেছেন। তিনি বলেছেন, জেনোসাইড সংঘটিত হওয়ার বিষয়টি আইসিজের রায়ে এলে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়া (মিয়ানমারে) অসম্ভব হবে। কারণ এতে সামরিক বাহিনী এত রেগে যাবে যে রোহিঙ্গারা নিরাপদ থাকবে না। একেই বলে আইনজীবীর স্বীকারোক্তি!’
গাম্বিয়ার মামলা চালানোর অর্থের উৎস নিয়ে মিয়ানমারের আইনজীবীদের প্রশ্ন তোলাকেও হাস্যকর ও অযৌক্তিক বলেছেন এইচআরডাব্লিউর এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সাবেক হাইকমিশনার জায়িদ রা’দ আল হুসেইন ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসেই রোহিঙ্গা নিপীড়নকে ‘জাতিগত নির্মূল’ বলেছিলেন। আইসিজেতে গত সপ্তাহে সু চির বক্তব্যকে তিনি প্রহসন বলে অভিহিত করেছেন। সিএনএনকে তিনি বলেছেন, “কতটা তুচ্ছ হলে সু চি এভাবে একটি বর্বর বাহিনীর পক্ষ নিয়ে আদালতে দাঁড়াতে পারেন। আমি চোখ বন্ধ করে বাশার আল আসাদের ‘সন্ত্রাস ও সন্ত্রাস মোকাবেলার’ বক্তব্য স্মরণ করেছি।”
জায়িদ রা’দ আল হুসেইন বলেন, ‘আরসা হামলা করেছে এই অজুহাত তুলে আপনি সাধারণ মানুষের ওপর নৃশংসতা চালিয়েছেন। এটি কেমন যুক্তি? হতাশাজনক। খুবই হতাশাজনক।’ তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অপরাধের বিষয়ে আমার তদন্তকারী যখন তদন্ত করতে যাবে তখন সু চির সরকার দরজা বন্ধ করে দিল। আর এখন তাঁরা বলছেন, সেখানে কোনো প্রমাণ নেই। অভিযোগ অসম্পূর্ণ। এটি হাস্যকর।’
মিয়ানমারের পক্ষে আইনজীবীদের মধ্যে আইনজীবী অধ্যাপক উইলিয়াম সাবাস আইসিজেতে তাঁর বক্তব্যের জন্য নিজের বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিতজনদের সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন। হাইকুল মনসুর নামে এক রোহিঙ্গা আট বছর আগে অধ্যাপক সাবাসের সঙ্গে দেখা করার সময়ের তোলা ছবি টুইটারে পোস্ট করে লিখেছেন, “উইলিয়াম সাবাস বলেছেন, তিনি কখনো ‘জেনোসাইড’ বলেননি। ২০১১ সালের শুরুর দিকে আমি যখন আয়ারল্যান্ডের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব গ্যালওয়ের আইরিশ সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটসে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলাম তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আমি সেখানে মেডিসিন শাস্ত্রে পড়ছিলাম।’”
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, আইসিজেতে গত সপ্তাহে মিয়ানমারের পক্ষে দাঁড়িয়ে ‘জেনোসাইড’ অস্বীকার করা অধ্যাপক সাবাসই রোহিঙ্গাদের ওপর ধারাবাহিক হামলার বিষয়ে ২০১০ সালে একটি গবেষণায় প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছিলেন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, রোহিঙ্গা নিপীড়ন মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য হওয়ার শর্তগুলো পূরণ করেছে।
এর তিন বছর পর (২০১৩ সালে) রোহিঙ্গা নিপীড়ন নিয়ে আলজাজিরার এক ডকুমেন্টারিতে অধ্যাপক সাবাসকেই বলতে দেখা যায়, “তাদের (রোহিঙ্গাদের) ইতিহাস, যেখানে তারা বসবাস করছে সেখানে তাদের বসবাসের বৈধতা অস্বীকার করা—এ সব হুঁশিয়ারির লক্ষণগুলোর অর্থ হলো ‘জেনোসাইড’ শব্দ ব্যবহার করার ভাবনা অযৌক্তিক নয়।”
আইসিজেতে অধ্যাপক সাবাসের বক্তব্যের সমালোচকদের মধ্যে তাঁর বন্ধু যুদ্ধাপরাধবিষয়ক মার্কিন স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার ও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের হলোকস্ট মিউজিয়ামের ফেলো স্টিফেন জে র্যাপ বলেছেন, রোহিঙ্গা নিপীড়নের ব্যাপারে অধ্যাপক সাবাস ভুল বলেছেন। এটি ‘জেনোসাইড’।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।