Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘গণহত্যার প্রতীক সু চিকে ঘৃণা করি আমরা’

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৩:৫৮ পিএম

মিয়ানমারের রাখাইনে ২০১৭ সাল থেকে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হয়েছে মিয়ানমার। সম্প্রতি নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিজে) মামলা দায়ের করেছে গাম্বিয়া। গতকাল মঙ্গলবার এই মামলার শুনানি শুরু হয়েছে। নিজ দেশের হয়ে আইনি লড়াই করছেন অং সান সু চি। ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর চলবে এই মামলার শুনানি।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরালো করে। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখেরও বেশি মানুষ।
জাতিসংঘের অভিযোগ, 'গণহত্যার উদ্দেশ্য' নিয়ে এই অভিযান চালানো হয়েছিল। মিয়ানমার তীব্রভাবে এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের দাবি, বিদ্রোহী রোহিঙ্গাদের হামলার জবাবেই তারা অভিযান চালিয়েছিল।

এদিকে, বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে থাকা রোহিঙ্গারা ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় ওই শুনানির দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। ওই আর্ন্তজাতিক আদালতে সু চির উপস্থিতি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রোহিঙ্গারা। সু চিকে গণহত্যার প্রতীক আখ্যা দিয়ে এক সময়কার গণতন্ত্রপন্থী ওই নেত্রীর প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করেছেন তারা।
মোহাম্মদ জুবায়ের। ১৯ বছর বয়সী এই রোহিঙ্গা আল-জাজিরাকে বলেন, আমরা ধর্ষণ, নিপীড়ন ও হত্যাকান্ড দেখেছি। আমাদের চোখের সামনে অনেকে খুন হয়েছে। আমাদের সামনে পালানো ছাড়া কোনও পথ ছিল না। এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে যেন মিয়ানমার তাদের ঘৃণ্য অপরাধের শাস্তি পায়। রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যার জন্য তাদের অবশ্যই দায়ী করতে হবে।
তিনি বলেন, ক্ষমতায় আসার আগে সু চিই বলেছিলেন সেনাবাহিনী ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। আর এখন তিনি নিজেই সেনাবাহিনীর পক্ষে লড়াই করছেন। কী লজ্জার!

জুবায়ের বলেন, আমরা শুনানির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। কিন্তু আমাদের এখানে ইন্টারনেট সংযোগ দুর্বল হওয়ায় আমরা নিশ্চিত নই যে তা শুনতে পারবো কি না।
নুর আলম (৬৫) নামের এক রোহিঙ্গা জানান, ২০১৭ সালের ওই অভিযানে ছেলেকে হারিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, এক সময় অং সান সু চি শান্তির প্রতীক ছিলেন। তাকে নিয়ে আমাদের অনেক আশা ছিল যে, তিনি ক্ষমতায় আসলে অনেক পরিবর্তন আসবে। আমরা তার জন্য প্রার্থনা করেছি। আর এখন তিনি গণহত্যার প্রতীক। আমাদের রক্ষা না করে তিনি খুনিদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। তিনি তাদের হয়ে লড়াই করবেন। আমরা তাকে ঘৃণা করি। তার লজ্জা হওয়া উচিত।’
নুর আলম বলেন, আমি অনেকদিন ধরেই এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম। তাদের শাস্তি দেখতে পারলে আমার জীবনে আর কোনও অপ্রাপ্তি থাকবে না।
৩৫ বছর বয়সী রশিদ আহমেদ জানান, তার পরিবারের ১২ সদস্যকে হত্যা করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তিনি বলেন, শুধুমাত্র ন্যায়বিচারই আমাদের ক্ষত শুকাতে পারে। আমি জানি, যাদের হারিয়েছি তাদের কখনোই ফিরে পাবো না। কিন্তু খুনির সাজা পেলে তারা শান্তিতে থাকবে।

মমতাজ বেগম নামে এক রোহিঙ্গা জানান, তার স্বামীকে সেনা সদস্যরা হত্যা করেছেন। ৩১ বছর বয়সী এই রোহিঙ্গা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, তারা আমাকে ধর্ষণ করেছে। আমার বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। ছয় বছর বয়সী মেয়ের মাথায় ছুরিকাঘাত করে। আমি শুনলাম অং সান সু চি ও সেনাবাহিনীর বিচার হবে। আমাদের দাবি, সু চি ও সেনাবাহিনীর বিচার হোক। তারা কেন নিরপরাধ মানুষগুলোকে মারলো, আমাদের শিশুদের হত্যা করলো। তারা কেন আমাদের মেয়েদের ধর্ষণ ও নিপীড়ন করলো? আমরা বিচার চাই।

২৯ বছর বয়সী জামালিদা বেগম জানান, তাকে ২০১৬ সালে ধর্ষণ করা হয়েছিল। তার স্বামীকেও হত্যা করা হয়।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনী আমাদের গ্রামে এসে আমার স্বামীকে হত্যা করে ও বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। তিনজন সেনাসদস্য আমাকে টেনে নিয়ে যায় এবং বন্দুক ঠেকিয়ে ধর্ষণ করে। একটা সময় আমি অজ্ঞান হয়ে যাই।

জামালিদা বলেন, আমি সেখান থেকে পালিয়ে যাই। পরে আমার পোস্টার টাঙিয়ে ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমাকে খুঁজতে থাকে সেনাবাহিনী। আমি শুধু বিচার চাই। আমি চাই যারা ধর্ষণ করেছে, হত্যা করেছে, বাড়িতে আগুন দিয়েছে, শিশুদের আগুনে নিক্ষেপ করেছে তাদের শাস্তি হোক। সূত্র : আল-জাজিরা



 

Show all comments
  • Anwar ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৪:১২ পিএম says : 0
    গণহত্যার প্রতীক সু চিকে ঘৃণা করি আমরা’ গণহত্যার প্রতীক সু চিকে ঘৃণা করি আমরা’ গণহত্যার প্রতীক সু চিকে ঘৃণা করি আমরা’
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ