Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাখি নিধন রুখতে হবে

আজহার মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

শীত আসলেই অতিথি পাখির আগমন ঘটে এদেশে। অভয়ারণ্য হয়ে ওঠে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী, পারকি সমুদ্র সৈকত ও মেরিন একাডেমি ম্যানগ্রোভসহ উপকূলীয় এলাকাগুলো। এরা বরফজমা হিমালয় এবং হিমালয়ের ওপাশ থেকে অতিরিক্ত শীত থেকে বাঁচার জন্য আমাদের দেশে চলে আসে। শীতের সময় পর্যটকদের পাখিগুলোও বেশ আকৃষ্ট করে। পাখি বিজ্ঞানীদের মতে, উপমহাদেশে প্রায় ২ হাজার ১০০ প্রজাতির পাখি আছে। এরমধ্যে প্রায় ৩শ প্রজাতির পাখি হিমালয় পেরিয়ে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে আমাদের দেশে চলে আসে। এসব পাখিরা হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত তিব্বতের লাদাক থেকে সেন্ট্রাল এশিয়ান ইন্ডিয়ান ফ্লাইওয়ে দিয়ে প্রবেশ করে। শুধু ইউরোপ এবং এশিয়ায় ৬শ প্রজাতির অতিথি পাখি রয়েছে। ইংল্যান্ডের নর্থ হ্যামশেয়ার, সাইবেরিয়া, এন্টার্কটিকার তীব্র শীত থেকে বাঁচার জন্য পাখিরা অপেক্ষাকৃত উষ্ণ অঞ্চল চলে আসে। শীতের পাখিদের মধ্যে বালিহাঁস, গিরিয়া হাঁস, সাদা মানিকজোড়, রাঙ্গামুরি, বড়গুলিন্দা, হট্টি টি, ডাহুক, কোড়া, বাটাং, পানকৌড়ি, বড় বক অতি পরিচিত নাম।

অতিথি পাখি বা পরিযায়ী পাখি জীবন বাঁচানোর জন্য বাংলাদেশেও আসে। কিন্তু প্রতিবছর দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে যে পাখিগুলো আমাদের দেশে বাঁচতে আসে সে পাখিদের নিরাপত্তা সরকারীভাবে দেবার বিধান থাকলেও কার্যত তা হয় না। শিকারিদের শ্যেন দৃষ্টির ফলে প্রতিবছর এসব অতিথি পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। শরৎ ও হেমন্তে ইলিশ ধরার জন্য আমাদের দেশে জেলে পাড়ায় যেমন সাজ সাজ রব পড়ে যায় তেমনি শীতের সময় এলে চোরা-গুপ্তা পাখি শিকারীদের মধ্যে সাজ সাজ রব পড়ে যায়। শিকারীরা হাজার টাকার ফাঁদ, জাল তৈরী করে প্রস্তুত থাকে শীতের আগে থেকেই। বিভিন্ন উপায়ে তারা শিকার করে অতিথি পাখি। বিভিন্ন চরাঞ্চলে ধানের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে, কারেন্ট জাল দিয়ে পাখি নিধন করা হচ্ছে। কেউ কেউ মাছের ঘেরে ফাঁকা যায়গায় দেশী হাঁস পানির উপর জড়ো করে রাখে, পাখি হাঁসের ডাক শুনে পানিতে নামতে শুরু করে তখন পেতে রাখা ফাঁদে আটকে যায়। অনেকে এখন বিভিন্ন হাইড্রোলিক হর্ন পাখি ধরার কাজে ব্যবহার করছে। মুক্ত ফাঁকা জলাশয়ে ফাঁদ পেতে তারা হর্ন বা বাঁশি বাজালে পাখি জলাশয়ে নামতে শুরু করে এবং ফাঁদে আটকে যায়। এ ছাড়াও বড় বড় বাঁশ বাগান, গোলবাগানে রাতে পাখি বসে থাকলে এয়ারগান অথবা সুচালো শিক দিয়ে পাখি শিকার করা হয়। এমনিভাবে প্রতি বছর হাজার হাজার অতিথি পাখি আর ফিরতে পারে না তাদের নিজস্ব বাসভূমে। শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে এসে তারা রসনা তৃপ্তির জন্য উঠে যায় ভাতের থালায়। এরচেয়ে মর্মান্তিক আর কি হতে পারে!

হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে আসতে অনেক পাখি অসুস্থ হয়ে এমনিই মারা যায়। তার উপর রয়েছে শিকারির লোলুপ দৃষ্টি। জানা যায় অতিথি পাখির মাংসের চাহিদাও দিন দিন নাকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বিপদজনক চাহিদা থেকে খাদকদের এবং পাখি নিধনকারীদের দূরে না রাখতে পারলে মারাত্বক হুমকিতে পাড়বে অতিথি পাখি। বাড়বে প্রকৃতির ভারসাম্যহীনতা। একসময় বিলুপ্ত হয়ে যাবে অতিথি পাখি নামক পাখিগুলো। তাই আইন শুধু কাগজে কলমে থেকে গেলে হবে না। এদের রক্ষা করার জন্য জনসচেনতামূলক কোনো কার্যক্রম বাড়াতে হবে। নজরে পড়ে না এদের রক্ষা করার জন্য বাস্তব কোনো পদক্ষেপও। যার ফলাফলে ক্রমান্বয়ে অতিথি পাখিদের আগমন আমাদের দেশে কমে যাচ্ছে। পাখি ও পরিবেশ বিষয়ক এক সমীক্ষায় দেখা যায়, বিগত ৫ বছরের তুলনায় আমাদের দেশে অতিথি পাখির সংখ্যা কমেছে শতকরা ৪০ ভাগ। অনেকেই আবার এর কারণ হিসেবে দায়ী করছেন ঘনবসতি, দূষিত পরিবেশ, শিকারীদের থাবা এবং খাদ্যের অভাবকে।

‘বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ অনুযায়ী, পাখি শিকার, হত্যা, আটক ও ক্রয়-বিক্রয় দন্ডনীয় অপরাধ। যার শাস্তি ২ বছর কারাদন্ড এবং ২ লক্ষ টাকা জরিমানা। কিন্তু এর প্রয়োগ আমরা খুব একটা দেখতে পাই না বললেই চলে। তবে আইনের সঠিক প্রয়োগ, জনসচেতনতা এবং অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে বাংলাদেশও হতে পারে পাখির বড় অভয়াশ্রম।

আমাদের মনে রাখতে হবে অতিথি পাখিরা আমাদের মেহমান। তাদের নিরাপদে থাকার ব্যবস্থা করা আমাদের দায়িত্ব। পাখি শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে না, এরা অন্যান্য প্রাণীর উপকারেও আসে। প্রাকৃতিক ভারসম্য রক্ষা ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণের স্বার্থে অতিথি পাখি বিরাট ভূমিকা রাখে। প্রকৃতিবান্ধব এসব পাখি শুধু নিজেরা বাঁচতে আসে না। এরা জলজ পোকা, ধানের পোকা খেয়ে কৃষকের উপকার করে থাকে। পাখি প্রকৃতি ও মানুষের পরম বন্ধু। পাখির ডাকে ভোর হয় আবার পাখির কলকাকলিতে পৃথিবীর বুকে সন্ধ্যা নেমে আসে। কোনো কোনো পাখি প্রহরে প্রহরে ডেকে আমাদের প্রকৃতির ঘড়ির কাজ করে থাকে। তাই আসুন, সকলে মিলে পাখি নিধন রোধ করি। অতিথি পাখিদের বিচরণের জন্য আমাদের দেশে অভয়ারণ্যের সৃষ্টি করি। মনে রাখতে হবে, অতিথি পাখি রক্ষার দায়িত্ব আমার, আপনার, আমাদের সকলের।
লেখক: প্রাবন্ধিক

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাখি নিধন

১১ ডিসেম্বর, ২০১৯
আরও পড়ুন
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->