পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবকেই ব্যর্থতার কারণ বলে মনে করে জামায়াত। ওই নেতা জানান, ইখওয়ানি নামে একটা গ্রুপ ছিল। তারাও সশস্ত্র সংগ্রামে যুক্ত হয়েছিল। মূলত, তাদেরকে ভারতীয় বাহিনীর পক্ষ থেকে কাউন্টার ইনসারজেন্সি গ্রুপ হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল। পরে, তারাই হিজবুল মুজাহিদীন ও জামায়াত নেতাদের হত্যা করেছে যা ভারতীয়। নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছে। মজার ব্যাপার হলো, কাশ্মীরের প্রায় অধিকাংশ মানুষের কাছে ‘ইখওয়ানি’ শব্দটি একিট অভিশাপ হিসেবে বিবেচিত। যেমনটা বাংলাদেশে ‘রাজাকার’।
জামায়াতের কাছে তাদের দলের নিহত নেতাকর্মীর সংখ্যার কোনো হিসাব নেই। হাজার-হাজার। ওই নেতা আমাকে জানিয়েছিলেন, মোটামুটি ২০ থেকে ৫০ বছর বয়সের যত মেধাবী নেতৃত্ব ছিল তার প্রায় সবই ‘শহীদ’ হয়েছে। এখন নতুন করে আমাদের শুরু করতে হয়েছে। তবে, একনও তারা মনে করে, স্বাধীনতা কাশ্মীরের মানুষের শিরায় শিরায় বহমান। এদের দমিয়ে রাখা যাবে না। মজার ব্যাপার হলো, দল হিসেবে তারা পাকিস্তানই কাশ্মীরের গন্তব্য মনে করে। তরুণ এক নেতার বক্তব্য ছিল, কাবা শরীফের পর দ্বিতীয় প্রিয় কোনো স্থান যদি থাকে অধিকাংশ কাশ্মীরির কাছে সেটা পাকিস্তান। সৈয়দ আলী গিলানীও নিজেকে পাকিস্তানের পক্ষে দাবি করেন। তিনি তা প্রকাশ্যেই বলে থাকেন। গণমাধ্যমে তাকে বলা হয় ‘প্রোপাকিস্তান সেপারেটিস্ট লিডার’। সৈয়দ আলী গিলানীকে জামায়াতের ইসলামী এখনও বিশেষ ক্যাটাগরিতে দলের সদস্য হিসেবে দাবী করে। অর্থাৎ, জামায়াত ও তেহরিক-ই-হুরিয়াত এই দুই সংগঠনের যুগপৎ সদস্য হিসেবে কাজ করেন সৈয়দ গিলানী। ২০০৪ সালে তেহরিক-ই-হুরিয়াতের ও জামায়াতে ইসলামী এক সমঝোতায় আসে। সে অনুসারে, গিলানীসহ ছয়জন নেতাকে এই দ্বি-দলীয় সদস্য হিসেবে গ্রহণ করে জামায়াত। তরুণ ওই নেতাকে প্রশ্ন করেছিলাম, জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীরে তো অনেক ধরনের মানুষ আছে। জম্মু হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী লেহ (লাদাখ)। শিয়া অধ্যুষিত কারগিল (লাদাখ)। ওই সব এলাকায় জামায়াতের কার্যক্রম আছে কি? তিনি জানিয়েছেন, ‘না’। অর্থাৎ শুধুমাত্র কাশ্মীর ভ্যালি ও জম্মুর সুন্নী মুসলিমদের (মোট জনসংখ্যার আনুমানিক ৬৫%) নিয়েই জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক পরিকল্পনা ঘুরপাক খায়। ওই নেতা আরও বলেছিলেন, ‘আমরা কাশ্মীর সমস্যার সমাধান চাই। প্রয়োজনে জম্মুর হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ কয়েকটি জেলা ভারতকে ছেড়ে দিতে আমরা রাজি আছি।’
জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সৈয়দ নাজীর আহমেদ খাসানি। যিনি ২০০৩-২০০৬ সাল সময়ে জামায়াতের আমীর ছিলেন। ১৯৯০’র দশকে তিনি জামায়াত থেকে দূরে ছিলেন। ২০১৫ সালে তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পর একাধিক গণমাধ্যম নিবন্ধে জেনেছিলাম, দূরদর্শী এই নেতা ৯০’এ ঘটে যাওয়া জামায়াতের অনেক ঘটনাকে সমালোচনা করেছিলেন।
Khahani was critical of many things that happened in Jama’t after 1990s. Someone within Jama’t has to taka that tradition of criticism further, When Khasani Sahab joined, he found his questions answered in the form of Jama’t When he left, he left a bagful of questions for Jama’t to answer.’
অপর এক নিবন্দে এজাজ উল হক লিখেছেন, ‘১৯৯০ এর সশস্ত্র সংগ্রামে জামায়াত যখন অগ্রভাগে দাঁড়িয়েছিল তখন খাসানি ছিলেন ক্ষীণকণ্ঠী স্বল্প সংখ্যক মানুষের একজন যাদের মতামত সহিংস হুংকারের কাছে ডুবে গিয়েছিল। খাসানি ছিলেন জামায়াতের সেই পক্ষের ব্যক্তি যিনি স্রোতের সঙ্গে মিশতে চাননি, বরং স্রোতের বিপরীতে থাকাকেই সঠিক মনে করেছিলেন। তিনিই কেবল বুঝতে পেরেছিলেন, সশস্ত্র পথ কেবল গণআত্মাহুতির দিকে নিয়ে যাবে’।
১৯৯০ সালে সাবেক আমীরের এই অবস্থান থেকে ধারণা করা যায়, ১৯৯০ সালে জাাময়াত তার রাজনৈতিক অবস্থানে ঐক্যবদ্ধ ছিল না। সুসংবদ্ধ এই রাজনৈতিক দলটি হুজুগের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, যদি ১৯৯০-এর স্বাধীনতা সংগ্রাম সফল হতো, আর যদি জামায়াত সশস্ত্র সংগ্রামের বাইরে থাকত, তাহলে জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীরের জামায়াতের অবস্থা বাংলাদেশ জামায়াতের মতো ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ হতো। তার চেয়ে বরং যুদ্ধে যোগ দিয়েই তারা ঠিক করেছিল কিনা? স্পষ্ট, বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী ১৯৭১-এ যা করেছে, সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে করেছে। ঘটনার ৪০ বছর পরও তারা সেই অবস্থানকে সমস্ত উপায়ে জাস্টিফাই করার চেষ্টা চালিয়ে গেছে। বিপরীত দিকে, জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীরের ৯০’র স্বাধীনতার আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীর অংশগ্রহণ দলীয় রাজনৈতিক কৌশলের অংশ ছিলই কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।