Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশে হাসিনা হিন্দুদের নিরাপত্তা দেন

কলকাতায় মমতা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) ঠেকাতে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন’ করা হবে বলে ঘোষণা দিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা দেন শেখ হাসিনা। তেমনি বাংলায় আমরা সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেব। হিন্দু-মুসলিম বাংলায় করতে দেব না। সব ধর্মের লোক এখানে বাস করবেন।’

গত শুক্রবার গান্ধী মূর্তির পাদদেশে ‘সংহতি দিবসে’র অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে মানুষকে নিয়ে এনআরসি মোকাবিলায় গণআন্দোলনের ডাক দিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ‘গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় অন্যান্য রাজ্যেও এনআরসি-বিরোধী আন্দোলন হলে তৃণমূল তাদের পাশে দাঁড়াবে।’ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি জানি যে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিরাপত্তা দেন। একইভাবে বাংলায়, মুসলমান, শিখ, খ্রিস্টানরা সংখ্যালঘু। এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠরা সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দেবে। এটি আমাদের দায়িত্ব।’ তার কথায়, ‘এনআরসি করে নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার প্রতিবাদে বাংলা রুখে দাঁড়াবে। দ্বিতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম হবে।’

কোনও ভাবেই বাংলায় তিনি যে এনআরসি লাগু হতে দেবেন না, ফের তা বুঝিয়ে কেন্দ্রকে পাল্টা ‘চাপ’ দিলেন মমতা। তার প্রাণ থাকতে এ রাজ্যর বাসিন্দাদের তাড়ানো যাবে না, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। বাংলা কোনও ভাবে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কাছে মাথা নত করবে না, হুঁশিয়ারি দিয়ে মমতা বলেন, ‘সংবিধানে বলা হয়েছে ধর্মের ভিত্তিতে কোনও ভেদাভেদ করা যায় না। হিন্দুকে নাগরিকত্ব দেবে আর মুসলমানকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেবে, তা মেনে নেব না। এর জন্য ওরা আমার মৃত্যু সাব্যস্ত করলেও আমি প্রস্তুত।’ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল এবং এনআরসি— একই মুদ্রার এপিঠ, ওপিঠ বলে মন্তব্য করে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, ‘স্বাধীনতার ৭২ বছর পরেও এ দেশের মানুষকে অবৈধ যদি বলা হয়, তা হলে এতদিন ধরে যে সরকারগুলি দেশ চালিয়েছে তারাও কি ভুয়া? এত বছর ধরে যারা ভোটে জিতেছেন, কেউই কি দেশের নাগরিক নন? অম্বেডকর, নেহরু, বাজপেয়ি, মনমোহন সিংহ কি অনুপ্রবেশকারী?’

অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় কেন বাংলায় এনআরসি চালু করার জন্য বিজেপি সরকার প্রতিদিন হুঙ্কার দিচ্ছে, সে প্রশ্ন তুলে মমতার পাল্টা জবাব, ‘অনুপ্রবেশকারী কি শুধু বাংলায় রয়েছে? আসামে, ত্রিপুরায় নেই? খালি বলছে বাঙালিদের তাড়াব। বাংলা থেকে কাউকেই তাড়াতে দেব না।’ কেন্দ্র আগামী ২০ বছর ধরে এই এনআরসি কর্মসূচি করবে বলে যে ঘোষণা করেছে, সে প্রসঙ্গে মমতার পাল্টা হুঁশিয়ারি, ‘আগে দু’তিন বছর তো সামলাও। তার পরে ২০ বছরের কথা ভাববে!’

দেশের ঐক্য অক্ষুণœ রাখার আবেদন জানিয়ে মমতা প্রস্তাব দেন, ‘ধর্ম, বর্ণের ভেদ না করে দেশের একশো ভাগ মানুষের জন্য নাগরিকত্বের ঘোষণা করুন, আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে দু’হাত তুলে সমর্থন জানাব।’

আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে দলের কর্মীদের এখন থেকেই বুথে বুথে মিটিং, মিছিল করার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার কথায়, ‘সব আন্দোলনে বাংলাই পথ দেখায়। এই লড়াইতেও আমরাই পথ দেখাব। কেউ ভয় পেলে পাক, আমরা লড়ব। জিতব।’

মমতা বলেন, হিন্দুস্তান-পাকিস্তান বলে এরা নতুন শব্দ বের করেছে। ভেদাভেদের রাজনীতি করছে। রাজবংশীদের কোনো সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। তামিলনাড়ুতে তামিলদের কি হবে? ক্যাব, এনআরসি ললিপপ। মমতার অভিযোগ, ভারতে ৪০ শতাংশ বেকার বেড়েছে। রাজ্যে ৪০ শতাংশ বেকারের সংখ্যা কমিয়েছি। মানুষের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দিচ্ছি। ৫০ হাজার কোটি টাকা দেনা শোধ করতে হবে। বুলবুলের জন্য ২৩ হাজার কোটি টাকা পাব। স্বাস্থ্য বীমার জন্য আমরা ১২৫০ কোটি টাকা খরচ করেছি। কন্যাশ্রীর জন্য ৮ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কেন্দ্রের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ছে। অর্থনীতি দেউলিয়া হয়ে গেছে। আরো হবে। এরপর দেশ দেউলিয়া হয়ে যাবে। শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না। অর্থনীতির ইস্যুগুলো গুলিয়ে দেওয়ার জন্য ক্যাব, এনআরসি করা হচ্ছে। সূত্র : এনডিটিভি, আউটলুক ইন্ডিয়া।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ