মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
অনেকের জন্যই ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলাম গ্রহণ করা সহজ ছিল না। এ জন্য অনেকের পরিবারে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। ৯ বছর বয়সে কলম্বিয়া থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন খাদিজাহ নূর তানজু। তার পরিবার তার ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি। তারা মনে করেছিলেন যে, তানজু তার সংস্কৃতি এবং ক্যাথলিক বিশ্বাসকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ধর্মান্তরের আগে তার নাম ছিল ক্যারল। আগে তিনি ক্যাথলিক গির্জায় ধর্মীয় সংগীত গাইতেন। তিনি এবং তার পরিবার ক্যাথলিক ধর্মের সব সংস্কারই মেনে চলতেন।
তানজু জানান, তিনি যখন একজন তুর্কি-আমেরিকান মুসলমানকে বিয়ে করেছিলেন, তখন তার আত্মীয়স্বজনরা তার স্বামীকে সন্ত্রাসবাদী বলে মন্তব্য করেছিলেন। তার কষ্ট অনুভব করে, তার স্বামী তাকে কখনই কষ্ট না দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
তাদের প্রথম দেখার সময় তার স্বামী খুব বেশি ধার্মিক ছিলেন না। কিন্তু তিনি ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, তিনি তার স্বামীর বিশ্বাস সম্পর্কে খুব কমই জানতেন। এজন্য, ব্যক্তিগতভাবে, তিনি ইসলাম সম্পর্কে জানতে শুরু করতে এবং এই বিশ্বাস সম্পর্কে ইউটিউবে একটি সিরিজ দেখতে শুরু করেন। এক রাতে, বাড়িতে একটি খুতবা শোনার সময়, তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন এবং মহান আল্লাহুর জন্য তার জীবন পরিবর্তন করার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন।
২০১৫ সালে, তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। প্রথমদিকে, তার পরিবার খুব বেশি কিছু বলেনি। তবে তিনি যখন হিজাব পরা শুরু করেছিলেন তাদের ব্যবহারে পরিবর্তন এসেছিল। তিনি বলেন, ‘আমার পরিবার এর (আমার নতুন ধর্মের) নিয়মগুলো জানত না। এটি একটি জীবনযাত্রা। আমি যখন ইসলামের বিধান মেনে চলা শুরু করি তখন তারা স্প্যানিস ভাষায় বলত, হোয়া, কোস্ট পাসা অ্যাকু? এর অর্থ হচ্ছে, এসব কি হচ্ছে।’
নতুন বিশ্বাসের সাথে সামঞ্জস্যতা আনতে তানজুকে নিজের সাথেই সংগ্রাম করতে হয়েছিল। তিনি হিজাব পরা শুরু করেছিলেন কারণ তিনি খাঁটি ও ধার্মিক মুসলমান হিসেবে জীবনযাপন করতে চেয়েছিলেন। তিনি জানান, প্রকাশ্যে তার মনে হত যেন লোকেরা তাকে দেখছে এবং বিচার করছে। ব্যক্তিগতভাবে, তিনি চিন্তিত ছিলেন যে হিজাবের তার চেহারা আকর্ষণীয় থাকছে না। তিনি বলেন, ‘সবসময় আমার মাথার ভেতরে বাজতে থাকত, এখনি খুলে ফেলো, তোমাকে বাজে ও কুৎসিত দেখাচ্ছে, তোমাকে মোটেই মানাচ্ছে না।’
এই উদ্বেগগুলোর বিষয়ে কার সাথে কথা বলা যায়, সে বিষয়ে তানজুর কোন ধারণা ছিল না। পরে, তিনি নতুন ধর্মান্তরিদের ইভেন্টগুলিতে যোগ দিতে শুরু করেছিলেন এবং ‘হোয়াই ইসালাম’ নামের একটি অলাভজনক সংগঠনে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। তারা ইসলাম সম্পর্কে শিক্ষা দেয় এবং তাদের স্প্যানিশ ভাষার একটি বিভাগ রয়েছে।
গত প্রায় এক বছর ধরে, তিনি ইউনিয়ন সিটির নর্থ হাডসন ইসলামিক শিক্ষা কেন্দ্রের সাপ্তাহিক ক্লাসে যেতে শুরু করেছেন যেখানে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ ছিলেন ল্যাটিনো। তিনি বলেন, ‘আমি সত্যিই খুশি বোধ করি, আমি আমার বিশ্বাসে চলার পথে একা বোধ করি না।’
নিউইয়র্ক সিটি, মিয়ামি, শিকাগো, লস অ্যাঞ্জেলেস এবং হিউস্টনের মতো বেশিরভাগ শহুরে অঞ্চলে ল্যাটিনো মুসলমানদের মিলিত হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট ঠিকানা আছে। তাদের বেশিরভাগই অভিবাসী। ‘যুক্তরাষ্ট্রে ল্যাটিনো মুসলিম’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ৫৬ শতাংশ ক্যাথলিক ধর্ম থেকে এবং বাকীরা প্রোটেস্ট্যান্ট, ধর্মনিরপেক্ষ বা নাস্তিক থেকে ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছে। মুসলমান হলেও তাদের জীবনযাপনের পদ্ধতিতে পার্থক্য রয়েছে। কিছু মহিলা হিজাব পরেন, আবার অন্যরা তা পরেন না। কেউ কেউ পরিবারের সাথে ধর্মনিরপেক্ষ উদযাপন হিসাবে ক্রিসমাস পালন করেন, আবার অন্যরা এড়িয়ে চলা পছন্দ করেন।
পিউ রিসার্চের জরিপে অনুসারে, বর্তমানে ল্যাটিনো আমেরিকানদের মধ্যে ৪৭ শতাংশ ক্যাথলিক খ্রিস্টান, এক দশক আগে এই সংখ্যা ছিল ৫৭ শতাংশ। তবে ল্যাটিনো প্রোটেস্ট্যান্টের সংখ্যা ২৫ শতাংশে স্থির থেকেছে। ল্যাটিনো মুসলমানরা মনে করেন, ইসলাম আসলে তাদের ঐতিহ্যের অংশ। তারা বলেছেন তারা তাদের শিকড়ে ফিরে এসেছেন। কারণ, স্পেনে প্রায় ৮০০ বছরের মুরিশ শাসনের ফলে হিস্পানিক ভাষা ও সংস্কৃতিতে ইসলামি প্রভাব থেকে গেছে।
এ বিষয়ে মেরিল্যান্ডের বাল্টিমোরের মরগান স্টেট ইউনিভার্সিটির দর্শন ও ধর্মীয় অধ্যয়নের সহকারী অধ্যাপক হ্যারল্ড মোরালেস বলেন, এই বন্ধনগুলো প্রায়শই সেখানকার অমুসলিমরা অনুভব করেন। তিনি বলেন, ধর্মান্তরের সময় তারা মনে করেন, ‘আমরা ল্যাটিনো সংস্কৃতি ছেড়ে যাওয়া বা অভিবাসনকে আলিঙ্গন করছি না। আমরা এমন কিছু অবলম্বন করতে যাচ্ছি, যা আমাদের মধ্যে আগে থেকেই ছিল।’ অধ্যাপক হ্যারল্ড মোরালেসের লেখা ‘ল্যাটিনো এন্ড মুসলিম ইন আমেরিকা: রেস, রিলিজিয়ন অ্যান্ড মেকিং অফ এ নিউ মাইনরিটি’ বইটি ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয়।
লোপেজ ও তানজু যেখানে নামাজ পড়েন, নর্থ হাডসন ইসলামিক এডুকেশনাল সেন্টারের সেই মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ আলহায়েক বলেন, ‘১৯৯২ সালে মসজিদটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে ল্যাটিনো ধর্মান্তরকারীদের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে।’ এই মসজিদে স্প্যানিশ ভাষায় অনূদিত কুরআন শরীফ দেখতে পাওয়া বা ইফতার ও সেহেরিতে মধ্য প্রাচ্যের খাবারের পাশাপাশি এম্পানাদার খাবার থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আলহায়েক বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য নর্থ জার্সি হাডসন অঞ্চলে যতবেশি সম্ভব মানুষের কাছে ইসলামের সঠিক শিক্ষা, ইসলামের দিকনির্দেশনা পৌঁছে দেয়া। এই কাজটিকেই আমার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।