মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
চীনের উইঘুর মুসলিমদের যখন-তখন আটক, নির্যাতন এবং হয়রানির ঘটনায় চীনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবরোধ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদ। এরই মধ্যে নির্যাতনের বিরুদ্ধে একটি বিল পাস করেছে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ। এই বিলে চীন সরকারের সুনির্দিষ্ট কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে এবং স্বায়ত্তশাসিত সিনজিয়াং অঞ্চলের কমিউনিস্ট পার্টির সেক্রেটারি চেন কুয়াঙ্গুও’র বিরুদ্ধে ‘টার্গেটেড অবরোধ’ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিলটি প্রতিনিধি পরিষদ পাস করলেও তা কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট এবং প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের অনুমোদন প্রয়োজন। এ দুটি স্থান থেকে বিলটি অনুমোদন পেলেই তা আইনে পরিণত হবে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
বিলটির বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা এ বিলকে বিদ্বেষপরায়ণ বলে আখ্যায়িত করেছে। এর আগে হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভকারীদের সমর্থন করে একটি বিলে স্বাক্ষর করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ফলে ওই বিলটি আইনে পরিণত হয়েছে। এর কয়েকদিন পরে চীনের বিরুদ্ধে ‘টার্গেটেড অবরোধ’ দেয়ার আহ্বান সম্বলিত বিলটিতে চীনের বিরুদ্ধে নিন্দা জানানো হয়েছে। বিলটির নাম দেয়া হয়েছে ‘উইঘুর হিউম্যান রাইটস পলিসি অ্যাক্ট ২০১৯’। মঙ্গলবার রাতে বিলটির পক্ষে ৪০৭ ভোট পড়ে প্রতিনিধি পরিষদে। এর বিরুদ্ধে ভোট পড়ে একটি। এই একটি ভোট দিয়েছেন কেনটাকি থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান থমাস ম্যাসি। তিনি হংকং বিলের বিরুদ্ধেও ভোট দিয়েছিলেন।
বিলটির উদ্দেশ্য হলো সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত মানবাধিকারের যে ভয়াবহ লঙ্ঘন হচ্ছে তা তুলে ধরা। একই সঙ্গে কমপক্ষে ১০ লাখ উইঘুর মুসলিমকে আটক রাখার বিষয়কে সামনে আনার জন্যও এই বিল। উইঘুর মুসলিমদের বিস্তৃত নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রত্যাখ্যান করার জন্য চীনের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক বৈষম্যমুলক আচরণের অভিযোগ আনা হয়েছে এতে। বলা হয়েছে, উইঘুর মুসলিমরা মুক্তভাবে মত প্রকাশ, ধর্ম, আন্দোলন ও সুষ্ঠু বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে সিনজিয়াংয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে চীন যেসব নীতি গ্রহণ করেছে তার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- পরিব্যাপক উচ্চ প্রযুক্তির নজরদারি। এর মধ্যে শিশুদের ডিএনএর নমুনা সংগ্রহ পর্যন্ত করা হয়। ব্যক্তিবিশেষ কিভাবে তার প্রার্থনা করেন সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে বাসার বাইরে ব্যবহার করা হয় কিউআর কোড। ফেসিয়াল ও ভয়েস সনাক্তকরণ সফটওয়্যার ও ডাটাবেজ ব্যবহার করা হয়।
এসব অভিযোগে সিনজিয়াংয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসযোগ্য যেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে চীনের ওইসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপের কথা বলা হয়েছে বিলে। এতে নাম রয়েছে সিনজিয়াংয়ের কমিউনিস্ট পার্টির বস বলে পরিচিত চেন কুয়াঙ্গুও’র। তাকেই বন্দিশিবিরগুলোর ‘আর্কিটেক্ট’ বা পরিকল্পনাকারী হিসেবে সনাক্ত করা হয়। এই বিলে উইঘুরদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের নিন্দা জানাতে আহ্বান জানানো হয়েছে ট্রাম্পের প্রতি। একই সঙ্গে তিনি যেন চীনের প্রতি আহ্বান জানান অবিলম্বে বন্দিশিবিরগুলো বন্ধ করে দিতে। একই সঙ্গে চীন যেন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা দেখায় চীন- এ আহ্বান জানানোর কথা বলা আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আনীত এই বিলকে বিদ্বেষপ্রসূত বলে আখ্যায়িত করেছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা চীনের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি। এই বিলে সিনজিয়াংয়ের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে ইচ্ছাকৃতভাবে দলিত মথিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে চীন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিইং বলেছেন, এটা হলো চীন সরকারের সিনজিয়াং নীতির বিরুদ্ধে ভয়াবহ আক্রমণ। তাৎক্ষণিকভাবে এই ভুল সংশোধনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানাই আমরা। আহ্বান জানাই বিলটিকে আইনে পরিণত করা বন্ধ করতে এবং সিনজিয়াং সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে চীনের আভ্যন্তরীণ ইস্যুতে হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে।
মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো বলছে, কমপক্ষে ১০ লাখ মুসলিমকে সিনজিয়াংজুড়ে কড়া নিরাপত্তা সম্বলিত বন্দিশিবিরে আটক রাখা হয়েছে। তবে চীন সরকার বলে, এসব উইঘুরকে ভকেশনাল প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে ধর্মীয় সহিংস উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই করছে সরকার। কিন্তু তথ্যপ্রমাণ বলে যে, অসংখ্য বন্দিকে শুধু তার ধর্মীয় বিশ্বাসের জন্য আটক করা হয়েছে। যেমন, কেউ নামাজ আদায় অথবা বোরকা পরার কারণে তাদেরকে আটক করা হয়েছে। আবার তুরস্ক সহ বিদেশী বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার অপরাধেও অনেককে আটক করা হয়েছে।
বিবিসির হাতে এ বিষয়ে রেকর্ডস আছে। তা থেকে দেখা যায়, পরিবারের কাছ থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে মুসলিম শিশুদের আলাদা করে ফেলছে চীন। জার্মান গবেষক ড. আদ্রিয়ান জেঞ্জ এ বছরের শুরুতে বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে পারিবারিক অরিজিন, ধর্মীয় বিশ্বাস ও তাদের নিজস্ব ভাষা থেকে মুক্ত করে একটি নতুন প্রজন্ম গড়ে তোলা হচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি, এই তথ্যপ্রমাণ বলে যে, এটা অবশ্যই সাংস্কৃতিক গণহত্যা। তবে বৃটেনে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, অভিযোগগুলো মিথ্যা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।