Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শেখ হাসিনার শীতল অভ্যর্থনা, কাঠগড়ায় দিল্লি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০৫ পিএম

গেল অক্টোবরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিমান যখন নয়াদিল্লিতে নামে, তখন তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে উপস্থিত ছিলেন প্রথম বারের সাংসদ তথা নারী ও শিশু কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী। হাসিনার সফরসঙ্গী নেতারা ঘরোয়া ভাবে জানিয়েছিলেন, এটা ‘যেচে অপমান নেওয়া’। প্রতিবেশী বলয়ে ভারতের ‘পরম মিত্র’ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে বা কোনও সিনিয়র ক্যাবিনেট মন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন— এটাই ছিল প্রত্যাশা। প্রথম বার জিতে আসা কোনও প্রতিমন্ত্রী নন।

গত কাল প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে কলকাতায় এলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। কিন্তু তাঁকে স্বাগত জানাতে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কোনও মন্ত্রী, এমনকি শীর্ষ আমলাকেও পাঠানো হয়নি। যা কি না বাঁধাধরা কূটনৈতিক প্রথা এবং সৌজন্যের বিরোধী। কেন এমন উদাসীনতা প্রদর্শন, সে বিষয়ে সরকারি ভাবে মুখ খুলতে চাইছে না সাউথ ব্লক। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, ঘরোয়া রাজনীতির বাধ্যবাধকতাই কারণ। এক দিকে তাঁরা যখন দেশজুড়ে এনআরসি করে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের দেশছাড়া করার কথা বলছেন, সেই সময়ে পশ্চিমবঙ্গে পরিচিত

এনআরসি-বিরোধী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর বিষয়টিকে এড়িয়ে যেতেই চেয়েছেন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহেরা। কিন্তু সিনিয়র কোনও আমলাকেও কেন কলকাতায় পাঠায়নি মোদী সরকার, তা নিয়ে চুপ সাউথ ব্লকের কর্তারা। সব মিলিয়ে দিল্লির এই আচরণে প্রতিবেশী বলয়ে ভারতের অস্বস্তি যে আরও বেড়ে গেল, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই কূটনীতিকদের।

বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক যে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে, বিভিন্ন মঞ্চে এ কথা বার বার বলেছেন খোদ মোদী। পাকিস্তান সীমান্তের ওপার থেকে আসা জঙ্গিপনায় ভারত যখন চাপে, সেই সময় হাসিনা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে বাংলাদেশের মাটি থেকে ভারত-বিরোধী সন্ত্রাস উৎখাত করবেন। সে কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। প্রতিবেশীদের মধ্যে একমাত্র ঢাকাকেই বিভিন্ন চড়াই উতরাইয়ে পাশে পেয়েছে দিল্লি। সম্প্রতি ভারতের অনুরোধে ঢাকা তাদের দেশের ভিতর দিয়ে অসম-ত্রিপুরায় পণ্য পরিবহণের জন্য ‘ফি’ এক ধাক্কায় টন প্রতি ১০৫৪ টাকা থেকে কমিয়ে করেছে ১৯২ টাকায়। এমন ‘পরম মিত্রের’ ভারত সফরে দিল্লির এই উদাসীনতা কেন, সে প্রশ্ন উঠেছে।

বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ রা কাড়তে না চাইলেও দিল্লির এই উদাসীনতা যে ঘরোয়া রাজনীতিতে হাসিনার পক্ষে চাপের, সে কথা ঘরোয়া ভাবে জানানো হচ্ছে। এনআরসি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হুমকির ফলে বাংলাদেশে ভারত-বিরোধিতা বাড়ছে। দিল্লির আচরণ তাকে উস্কে দিতে পারে।

চিনপন্থী গোতাবায়া রাজাপক্ষ শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট হয়ে আসার পরে সে দেশের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। চিনের কাছে ঋণের ফাঁসে কার্যত বন্দি কলম্বো তাদের হাম্বানটোটা বন্দরটি তুলে দিয়েছে বেজিংয়ের হাতে। ভারতের জন্য কৌশলগত ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই দ্বীপরাষ্ট্রে ভারত-বিরোধী ঘাঁটি তৈরির জন্য দীর্ঘদিন ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে বেজিং। এ বার গোতাবায়ার জমানায় সেই কাজ মসৃণ হওয়ার সম্ভাবনা।

ডোকলাম পরবর্তী ভুটান এবং চিনপন্থী সরকার হওয়ার পরে নেপালও খোলাখুলি ভাবেই বেজিংয়ের দিকে ঝুঁকে রয়েছে। সম্প্রতি ভারতীয় পর্যটকদের জন্য মোটা পর্যটন শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভুটান। অন্য দিকে চিনের উপর অর্থনৈতিক নির্ভরতা ক্রমশ বাড়ায় নয়াদিল্লির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে নেপালের। ভারতের সঙ্গে প্রস্তাবিত যৌথ সেনা মহড়া থেকে কাঠমান্ডুর সরে দাঁড়ানো, চিনের সঙ্গে পণ্য পরিবহণ চুক্তি করা, বেজিংয়ের মহাযোগাযোগ প্রকল্প ওবর-এ নিজেদের সামিল করার মতো বিষয়গুলি থেকে সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট। এমন একটি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সফরকারী রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে দিল্লির এমন শীতল ব্যবহারে অবাক অনেকেই।

সূত্র: আনন্দবাজার



 

Show all comments
  • * মজলুম জনতা * ২৪ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৮ পিএম says : 3
    অসিম ধৈর্জধারন করার শক্তি আমাদের প্রধান মন্ত্রীকে আল্লাহ দিয়েছেন।তাই ধৈর্জধারন করা মহত্বের লখ্যোন।তবে ধৈর্জ কারোরী সীমাহীন নয়।মনে রাখতে হবে আপ্রো-এশিয়ার অবিসংবাদিত সব-চে জনপ্রিয় নেতা স্বাধিনতার স্থপতি বংঙকন্যা শেখ হাসিনা! দেশের রাজনিতিতে ভিন্নমত থাকতে পারে।কিন্তু আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে অবমুল্যায়ন এ জাতী সহ্য করবেনা।।
    Total Reply(1) Reply
    • Muhammad Saidur Rahman ২৪ নভেম্বর, ২০১৯, ২:২৩ পিএম says : 4
      ভাই সাহেব, বাংলা বানানের এই করুণ দশা কেন ?
  • * মজলুম জনতা * ২৪ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৪৫ পিএম says : 1
    এ জাতী বীরের জাতী।এক ডাকে ঝাপিয়ে পড়েছিল।শূন্য হাতে জীবনের তোয়াক্কা না করে, মরন কবুল স্বিকার করেই যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল ।অত এব....।
    Total Reply(0) Reply
  • Amir ২৪ নভেম্বর, ২০১৯, ১:১৬ পিএম says : 0
    পুশব্যাক করাটা সম্পূর্ণ বেআইনি।------একাত্তরের কথা আমরা অবশ্যই মনে রাখব, তবে ভারতের কোন অন্যায় আবদার মানা হবে না ;প্রমাণ বিহিন কথিত বাংলাভাষীদের অন্যায় ভাবে পুশব্যাক করতে চাইলে আমাদের বিজিবি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করলে পুশব্যাক ঠেকাতে গুলিবর্ষণসহ সকল বৈধ অপশন ব্যবহার করবে বলেই বাংলাদেশের জনগণের আশা, পৃথিবীর সবাই শক্তের ভক্ত নরমের যম একথাটা সবারই মনে রাখা দরকা!
    Total Reply(0) Reply
  • এম এ বাসার ২৪ নভেম্বর, ২০১৯, ৫:৫৮ পিএম says : 0
    .....অভ্যন্তরীন ব্যাপার,এমনটা হওয়া অস্বাভাবিক কিছুইনা।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শেখ হাসিনা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ