Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

চীন-ভারত সংঘর্ষের সম্ভাবনা বাড়ছে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০১৯, ৭:১১ পিএম

১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের পর থেকে ‘ম্যাকমোহন লাইন’ প্রশ্নে অস্বস্তিকর শান্তি বিরাজ করছে। চীন ঘোষণা দিয়েছে যে তারা অরুনাচল প্রদেশের চীনা এলাকায় ৬০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের স্বর্ণখনির সন্ধান পেয়েছে এবং সেখানে কার্যক্রম শুরু করেছে। তাছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান কয়েকটি নদীর উৎসমুখে ড্যাম নির্মাণের পরিকল্পনাও করছে। আর অরুনাচলকে ‘দক্ষিণ তিব্বত’ হিসেবে উল্লেখ করে নতুন মানচিত্রও প্রকাশ করেছে।

উত্তেজনা বাড়ছে ব্রহ্মপুত্র নদী নিয়েও। এই নদীর প্রবাহে প্রভাব পড়ে, এমন আরো ড্যাম নির্মাণ করার কথা চীন অস্বীকার করেছে। কিন্তু তারা ব্রহ্মপুত্রে প্রথম ড্যাম নির্মাণের কথাও অস্বীকার করেছিল। কিন্তু ২০১৫ সালে তারা তা সম্পন্ন করে ফেলে। উভয় দেশ আরো বেশি জাতীয়তাবাদী হয়ে পড়ায় উত্তেজনা বাড়ার আশঙ্কাই বেশি। হিমালয়ের ওপর দাবি জোরদার করার জন্য চীনা সরকার ওই এলাকায় হ্যান চীনাদের বসতি স্থাপনকে উৎসাহিত করছে। তিব্বত মালভূমির ওপর চীনা সামরিক নিয়ন্ত্রণ থাকায় দেশটি এখানেও দক্ষিণ চীন সাগর নীতি অবলম্বন (ফিলিপাইনের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কৃত্রিম দ্বীপ বানিয়ে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করা) করে তার আধিপত্য বাড়ানোর নীতি অনুসরণ করছে।

সামরিক বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি হলো উচ্চ ভূমি দখল করা। হিমালয় হলো বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু পর্বতমালা। প্রাচীন কাল থেকে চীন সবসময় তার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হিমালয় ও তিব্বতকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে এসেছে। ঐতিহাসিকভাবে তিব্বতকে চীন ম্যান্ডারিন ভাষায় ‘জিজাং’ বা ‘পশ্চিম দিকের গুদামঘর’ হিসেবে অভিহিত করে আসছে। চীন ও ভারত উভয়ের জন্যই কিংগাই-তিব্বত মালভূমি একটি গুরুত্বপূর্ণ পানিসম্পদ উৎস। শক্তিশালী ইয়াংজি নদী ও পীত নদী উভয়ের পানি উৎস তিব্বতের হিমবাহগুলো ও হিমালয়ের বরফগলা পানি। ভারতের ব্রহ্মপুত্র ও সিন্ধু নদীর পানির উৎসও তিব্বতের হিমবাহ ও হিমালয়ের বরফগলা পানি। ব্রহ্মপুত্র ভারতের জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। চীন এখানেই কয়েকটি ড্যাম নির্মাণ করছে পানিপ্রবাহ সীমিত করার জন্য। এতে করে ভারত ও চীনের মধ্যে তীব্র বিরোধের সৃষ্টি হতে পারে। পানি ছাড়াও তিব্বতের তামা, তেল ও অন্যান্য খনি থেকে সম্পদ আরোহণ করে তা শিল্প কারখানায় কাজে লাগাতে চায় চীন। তিব্বত মালভূমিতে অনেক বছর ধরেই উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছে চীন। এর ফলে চীনারা আরো সহজে সেখানে কাজ করতে পারছে।

২০১৫ সালে নির্মাণকাজ শেষ হওয়া জাঙ্গমু ড্যামটি ভারত ও চীনের মধ্যকার সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এর মাধ্যমে চীন ব্রহ্মপুত্রের প্রবাহ বন্ধ করে দিতে পারে। আর তাতে পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাবে। এই দুই দেশ ২০১৭ সালে ভুটান সীমান্তের দোকলামে মুখোমুখি অবস্থায় উপনীত হয়েছিল। তবে তা যুদ্ধে গড়ায়নি। চীন সেখানে একটি রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করলে এই জটিলতার সৃষ্টি হয়। দুই দেশেই জাতীয়তাবাদী সরকার ক্ষমতায় থাকায় ভবিষ্যতে কোনো ধরনের অচলাবস্থা এড়ানো কঠিন হতে পারে। এর ফলে পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের শঙ্কা বাড়বে। কিন্তু তা চীন ও ভারত উভয় দেশের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য অনুকূল হবে না। সূত্র: সাউথ এশিয়ান মনিটর।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত-চীন

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ