Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কলকাতায় দুই বাংলাদেশি ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৬ নভেম্বর, ২০১৯, ২:০৩ পিএম

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি দুই ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে অপহরণকারীরা। মুক্তিপণের ৫০ লাখ টাকার মধ্যে ৬ লাখ টাকা পাওয়ার পর বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের ছেড়ে দিয়েছে তারা। তাদের সঙ্গে থাকা ৭ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার এবং নগদ ৪৫ হাজার টাকা কেড়ে নিয়েছে অপহরণকারীরা। সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনার হাবরাতে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, কয়েকদিন আগে ব্যবসার কাজে কলকাতায় যান ফরিদপুরের সদরপুরের কাপড় ব্যবসায়ী বসির মিঞা (৩৯)। ব্যবসার সূত্রে পরিচিত সেলিম নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে কলকাতায় তার আলাপ হয়। গত ৭ নভেম্বর বাংলাদেশি বন্ধু ইলিয়াসকে নিয়ে সেলিমের সঙ্গে দেখা করেন বসির। পরে শিয়ালদহ স্টেশনে তাদের নিয়ে খাওয়া-দাওয়া শেষে আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে তাদের উত্তর ২৪ পরগনার হাবরায় নিয়ে যান সেলিম।

হাবরাতে পৌঁছানোর পর সেখানে অপেক্ষায় থাকা সেলিমের দলবল একটি গাড়িতে তোলে তাদের। এরপর গাড়ির মধ্যে তাদের চোখ ও হাত-পা বেঁধে অস্ত্রের মুখে অজ্ঞাত জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়, সঙ্গে থাকা টাকা ও মোবাইল কেড়ে নেয়। তাদের সেখানে আটকে রেখে হত্যার হুমকি দিয়ে বাংলাদেশে পরিবারের কাছে ফোন দিয়ে পঞ্চাশ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।

আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে পাঠানো ৬ লাখ টাকা অপহরণকারীরা পাওয়ার পর সীমান্তে লোক পারাপারের দালালদের হাতে তুলে দেয় বসির ও ইলিয়াসকে।

পরবর্তীতে দালালদের ভয় দেখিয়ে ছাড়া পাওয়ার পর কলকাতায় ফিরে ১০ নভেম্বর এন্টালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তারা। প্রাথমিক তদন্তের পর সোমবার অপহরণের মামলা আমলে নেয় পুলিশ।


গত ১০ নভেম্বর কলকাতার এন্টালি থানায় অপহরণের অভিযোগ এনে একটি অভিযোগ জানান বাংলাদেশের ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার কাপড় ব্যবসায়ী বশির মিঞা (৩৯)। তার অভিযোগ কলকাতার শপিং মলে আলাপচারিতা কালে তার সাথে কয়েকজনের পরিচয় হয়। এরপর তাকে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার হাবড়া-গুমা এলাকায় একটি পরিত্যক্ত জায়গায় নিয়ে গিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। সেই মতো ছয় লাখ রুপি নগদ অর্থ দেয় বশির। এছাড়াও তার কাছে থাকা প্রায় ৪৪ লাখ বিদেশি মুদ্রাও ছিনিয়ে নেওয়া হয়। বশিরকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। অপহরণকারীদের থেকে ছাড়া পেয়েই তিনি কলকাতায় এসে এন্টালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এরপরই অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান শুরু করে এন্টালি থানার বিশেষ দল। খতিয়ে দেখা হয় ওই শপিং মলের সিসিটিভি ফুটেজ।
এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, অপহরণের ঘটনায় প্রথমেই দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার পাটুলি থেকে গ্রেফতার করা হয় সেলিমকে। তাকে জিজ্ঞাসা করেই সালাউদ্দিন মন্ডল এবং নাসিমা বিবি আরও দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। সালাউদ্দিন এবং নাসিমা উভয়েই বশিরকে ওই অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখেছিলেন। এই ঘটনায় মাস্টার মাইন্ড সেলিম দীর্ঘদিন ধরেই মানবপাচারের সাথে যুক্ত। বাংলাদেশের সাতক্ষীরা থেকে পশ্চিমবঙ্গের গেদে পর্যন্ত চলছে তার এই অবৈধ কার্যকলাপ। সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের এপারে নিয়ে এসে পশ্চিমবঙ্গের বাসন্তী, গোসাবা, ক্যানিং এবং হাবড়া এলাকায় গোপন জায়গায় তাদের আটকে রাখা হয়। এরপর এই মানুষগুলোর ভুয়া ভারতীয় নথি দিয়ে পাসপোর্ট তৈরি করে ইউরোপ এবং ভারতের অন্য রাজ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সেলিম নিজেও অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আসে। দীর্ঘ ছয় বছরের বেশি সময় ধরে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার বাসন্তী এলাকায় বসবাস করছে। তার টার্গেট অবৈধভাবে পশ্চিমবঙ্গে আসা বাংলাদেশিরা। কলকাতার নিউমার্কেট ও শিয়ালদহ সংলগ্ন এলাকায় হোটেলগুলিতে অবস্থান করা বাংলাদেশিদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ফাঁদে ফেলাই লক্ষ্য ছিল সেলিমের। এরপর তাদের আস্থা যোগাড় করেই তাদের বাসন্তীতে নিয়ে যাওয়া হত। এরপর ফাঁদে ফেলা ব্যক্তির সাথে নিজেও অপহরণের নাটক করতেন এবং নিজের লোকদের দিয়ে বিশাল অর্থের মুক্তিপণ দাবি করাতেন সেলিম। অপহরণকারীদের হাত থেকে মুক্তির জন্য ফাঁদে পড়া ব্যক্তিরাও সেই অর্থ দিতে বাধ্য হতেন। সেইসাথে ওই ব্যক্তির ভুয়া নথি তৈরি করে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হতো। ফলে সেইসব ব্যক্তিরাও নিজেদের দুর্বলতার কারণে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করার সাহস দেখাতেন না।

বশির মিঞার ক্ষেত্রেও ঠিক একই ঘটনা বলে জানা যায়। ব্যবসার কাজে ৭ নভেম্বর কলকাতায় আসা বশিরের সাথে আলাপ হয় ওই সেলিমের। গত ৮ নভেম্বর ট্রেনে করে হাবড়া এলাকায় এক পরিচিতের বাড়িতে বশিরকে দাওয়াত খেতে নিয়ে যায় সেলিম। হাবড়া রেল স্টেশনে পৌঁছানোর পরই উভয়কেই ঘিরে ধরে নিজেদেরকে সিবিআই কর্মকর্তা বলে পরিচয় দেওয়া কয়েকজন ব্যক্তি। বশির ও সেলিম-দুইজনেই অস্ত্র ব্যবসায়ী এই অভিযোগে তাদের দুইজনকেই আটক করে সিবিআই বলে পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তিরা। এরপর সেলিমকে একজন কুখ্যাত অপরাধী আখ্যা দিয়ে বশিরের কাছ থেকে তাকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর পরেই বশির বুঝতে পারেন যে তাকে অপহরণ করা হয়েছে এবং এই ষড়যন্ত্রের পিছনে সেলিমের হাত রয়েছে।

পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, মুক্তি পাওয়ার পরই বশিরকে তুলে দেওয়া হয় এক দালালের হাতে। এসময় বশিরের হাতে একটি ভুয়া ভারতীয় ভোটার পরিচয়পত্র তুলে দেওয়া হয়। তাতে বশিরের ছবি থাকলেও নাম ছিল আলাদা। একজন ভারতীয় অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসাবেই সীমান্ত পার করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়াই উদ্দেশ্য ছিল মনে করা হচ্ছে।

যদিও মুক্তি পেয়েই দেশে ফিরে যাওয়ার পরিবর্তে কলকাতায় এসে গত ১০ নভেম্বর এন্টালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন বশির।
অভিযোগের ভিত্তিতে সেলিমের মোবাইল ফোনের লোকেশন দেখা যায় দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার গোসাবাতে। কিন্তু পরবর্তীতে তার ফোনটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে এন্টালি থানার আইসি দেবাশিস দত্ত জানতে পারেন, পাটুলিতে অবস্থান করছে সেলিম। আদতে বাংলাদেশি সেলিম ভুয়া নথি সংগ্রহ করে ভারতীয় সেজে দিব্যি অবস্থান করছিল পশ্চিমবঙ্গে। তাকে জেরা করে সেলিমের মানবপাচারের সাথে যুক্ত থাকার বিষয়টিও জানতে পারে তদন্তকারী কর্মকর্তারা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ