মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারত থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা করল মনিপুর। গত মঙ্গলবার লন্ডন থেকে মনিপুরের মহারাজা সানাজাওয়বার পক্ষ থেকে এই ঘোষণা করেছেন রাজ্য পরিষদের মুখ্যমন্ত্রী ইয়ামবেন বিরেন ও রাজ্য পরিষদের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী নারেংবম সামারজিত। লন্ডনে বসেই প্রবাসী সরকার গঠনের ডাক দিয়েছেন মণিপুরের এই নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের ‘মণিপুর স্টেট কাউন্সিল’ এর নেতৃত্ব ঘোষণা করে পৃথক প্রশাসনের ডাক দিয়েছেন বিরেন ও সামারজিত। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি জোগাড়ে ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথ (দ্বিতীয়)-এর কাছে আবেদন করেছেন তারা। নরেংবাম ও বিরেন জানান, তারা মনিপুরের মহারাজার অনুমোদন নিয়েই এই নির্বাসিত সরকার গঠন করেছে। বক্তব্যের সমর্থনে একটি নথিপত্রও উপস্থাপন করেছে তারা। তাতে দেখা যায়, মহারাজা ২০১৩ সালের ১৫ মার্চ স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় তাদেরকে রাজ্যের রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করার ক্ষমতা দিয়েছেন। তারা উভয়ই নিশ্চিত করেছেন যে, সরকারের নির্যাতন ও দমন থেকে পালিয়ে তারা বৃটেনে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন জানিয়েছে। তারা বলেন, আমরা বিশ্বাস করি যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে মনিপুরের স্বাধীন সরকারকে উপস্থাপন করার, স্বাধীনতা ঘোষণা করার ও স্বীকৃতি চাওয়ার সঠিক সময়। নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকার নিষ্ঠুর। এই সরকার হিন্দুত্বের আধিপত্যবাদের স্বার্থেক্ষুদ্র জাতি ও সম্প্রদায়কে নির্মূল করে দেয়ার নীতিতে বিশ্বাস করে। তাই ভারত থেকে কাজ চালিয়ে যাওয়া তাদের পক্ষে নিরাপদ ছিল না। নরেংবাম ও বিরেন ঘোষণা দেন, তাদের সরকার হচ্ছে মনিপুরের মহারাজার সরকার। এই সরকারের প্রধান তিনি। সাংবিধানিকভাবে মনিপুর একটি রাজতন্ত্র শাসিত দেশ।
স্বঘোষিত মনিপুর সরকারের নেতারা জানান, ভারতীয় দখলদার সরকারের কঠোর আইনের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে মনিপুর। এর মধ্যে রয়েছে, সশস্ত্র বাহিনী (বিশেষ ক্ষমতা) আইন ১৯৫৮। মনিপুর দখল করার পর থেকে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। গত দশ বছরে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ মানুষকে অবৈধভাবে হত্যা করা হয়েছে সেখানে। ১ হাজার ৫০০ জনের বেশি মানুষকে অবৈধভাবে আটকে রাখা হয়েছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে তারা বলেন, গত কয়েক দশকে প্রাণহানীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজারের বেশি। তারা বলেন, ভারতের সুপ্রিম কোর্টে বিচারবহির্ভ‚ত হত্যার ১ হাজার ৫২৮টিরও বেশি মামলা ঝুলে আছে। তাদের বিচারবহির্ভ‚তভাবে হত্যা করা হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনী মনিপুরের মানুষকে দায়মুক্তি দিয়ে হত্যা করে।
তবে এ ঘটনায় কোন প্রতিক্রিয়া দেয়নি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। লন্ডনে ভারতীয় দূতাবাসও চুপ রয়েছে। তবে গোটা ঘটনার জন্য তদন্তের দাবি জানিয়েছেন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বিরেন সিং। এদিকে, মনিপুরের পরিস্থিতি বেশ গরম। কারণ নাগা শান্তি চুক্তিতে বৃহত্তর নাগাল্যান্ডের দাবি করা হয়েছে। এতে মনিপুরের একটি অংশকে অন্তর্ভুক্ত করার ওপর জোর দেয়া হয়। এই দাবিতেই মনিপুর উত্তপ্ত হয়েছে। মনিপুরের অখন্ডতা ধরে রাখতে কো-অর্ডিনেশন কমিটি অন মনিপুর ইতিমধ্যেই নেমেছে আন্দোলন। রাজধানী শহর ইম্ফল ও অন্যত্র চলছে বিক্ষোভ। আজ বৃহষ্পতিবার মনিপুরে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছে। ফলে নাগা ও মনিপুরিদের পারস্পরিক সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ মনিপুরে বহু নাগার বসবাস। আর নাগাল্যান্ডেও অনেক মনিপুরি থাকেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে উত্তর-পূর্বাঞ্চল ভারতের এই দুই রাজ্যে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সংলগ্ন অন্যান্য রাজ্যের পুলিশকে সতর্ক করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ইংরেজরা মণিপুরের রাজার হাতে শাসনভার তুলে দিয়েছিল। সে সময় মনিপুর ছিল প্রিন্সলি স্টেট বা রাজা শাসিত স্বতন্ত্র অঞ্চল। এর দুই বছরের মাথায় ১৯৪৯ সালে অঞ্চলটি ভারতের নিয়ন্ত্রণে আসে। তখন থেকেই স্বাধীনতার দাবিতে সেখানে আন্দোলন চলছে। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ‘প্রবাসী মনিপুর সরকার’ গঠনের ঘোষণা আসল। সূত্র : টিওআই, আল-জাজিরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।