মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ম্যাডি শর্মা। হঠাৎ করেই আন্তর্জাতিক আলোচনার শীর্ষে চলে এসেছে নামটি। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রায় ৩০ জন সদস্যকে ভারতে আসার আমন্ত্রণপত্র দিয়েছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ম্যাডি, ওরফে মধু শর্মা।
একটি ইংরেজি সংবাদপত্রের দাবি, আমন্ত্রণপত্রে বলা হয়, ভারতে পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা হবে। দাবি করা হয়, এ ব্যাপারে মোদি নিজেই আগ্রহী। তিন দিনের সফরে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যদের কাশ্মীরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানানো হয়। ম্যাডির পাশাপাশি বিতর্কের কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘উইমেন্স ইকনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল থিঙ্কট্যাঙ্ক’। অলাভজনক এই প্রতিষ্ঠানের বয়স ছ’বছর। সংস্থাটি রেজিস্ট্রেশন করানো হয় ২০১৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর। ম্যাডি-ই এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার বলে জানা গিয়েছে। তিনি নিজের পরিচয় দেন ‘আন্তর্জাতিক বিজনেস ব্রোকার’ হিসেবে। জানিয়েছেন, তিনি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা থেকে কোনও পারিশ্রমিক পান না। সর্বোপরি, সংস্থার বাজেট-ও কম রাখা হয়।
ম্যাডির অফিশিয়াল প্রোফাইল থেকে জানা যায়, তার বর্তমান কাজের ক্ষেত্র বিস্তৃত ইউরোপ মহাদেশ, ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকা জুড়ে। বাণিজ্য ও সরকারি বিভিন্ন বিষয় তার কাজের পরিধির অন্তর্ভূক্ত। নিজেকে নটিংহ্যামের ‘বাণিজ্যদূত’ এবং ইস্ট মিডল্যান্ডস-এর বিজনেস চ্যাম্পিয়ন বলে পরিচয় দেন। ইউরোপীয়ান ইকনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিটি বা ইইএসসি-র ওয়েবসাইটে তার এই পরিচয়ই বলা হয়েছে।
কিন্তু ইতিমধ্যেই ম্যাডি এবং তার সংস্থা ঘিরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সংস্থার দাবি, বিশ্বের ১৪ দেশে ছড়িয়ে আছে তাদের কর্মকাণ্ড। কিন্তু একটি সংবাদমাধ্যমের দাবি, এত বিস্তৃত নেটওয়ার্ক সামলানোর জন্য সংস্থার আর্থিক সঙ্গতি যথেষ্ট অপ্রতুল। সংস্থার মোট কর্মী মাত্র পাঁচজন। তাদের মধ্যে পূর্ণ সময়ের কর্মী মাত্র একজন। তাহলে তাদের এই বিস্তৃত কর্মকাণ্ড সামলানো হয় কী ভাবে? উঠছে প্রশ্ন।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নথিভুক্ত নটিংহ্যামের ঠিকানায় গিয়েছিলেন ভারতের সংবাদ মাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের সাংবাদিকরা। কিন্তু সেখানেও সংস্থার কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি। অসঙ্গতি রয়েছে আরও। ম্যাডির দাবি, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ওই সদস্যদের ভারতে যাতায়াত ও অন্যান্য ব্যয় বহন করেছে ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর নন অ্যালাইনড স্টাডিজ বা ‘আইআইএনএস’। কিন্তু দিল্লির সফদরজঙ্গ এনক্লেভে এই সংস্থার কার্যালয়ের নম্বরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছে আরেক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য হিন্দু’-র তরফে। কিন্তু কাউকে পাওয়া যায়নি। সংস্থার অফিশিয়াল-ইন-চার্জ সঞ্জয় ধবনের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই সফরের সঙ্গে ওই দফতর জড়িত নয়। তারা এই সফর সংগঠিতও করছে না। যদিও আগত সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
প্রতিনিধি দলের সদস্য বাছাই ও তাদের আমন্ত্রণ জানানোর শর্ত নিয়ে গোড়া থেকেই অস্বস্তি দেখা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম কেন্দ্র ব্রাসেলসে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সূত্রে খবর, এই দলের ২৩ জন সদস্যের প্রত্যেকেই গোঁড়া দক্ষিণপন্থী দলের প্রতিনিধি। তাদের অনেকেই আবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের ধারণারই বিরোধী। ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের অনেকেই বিষয়টি নিয়ে খুশি নন। আগেই বিবৃতি দিয়ে এই সফর থেকে দূরত্ব বাড়িয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তারা জানিয়েছে, নিতান্তই ‘ব্যক্তিগত’ সফরে গিয়েছেন পার্লামেন্টের ওই সদস্যেরা। এই অসঙ্গতিপূর্ণ পরিস্থিতিতে কী ভাবে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে এই ধরনের সফরের ব্যবস্থা করা হল, তা নিয়ে বিভিন্ন স্তরে প্রশ্ন উঠেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।