নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। সদ্যই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি) না জানিয়ে গ্রামীনফোনের সঙ্গে চুক্তি করায় নজরে আসেন তিনি। তারপর জানাগেল আরো বিস্ফোরক তথ্য। দুই বছর আগে জুয়ারিদের কাছ থেকে প্রস্তাব পেয়েও সে ব্যাপারে বিসিবিকে অথবা আইসিসির অ্যান্টিকরাপশন অ্যান্ড সিকিউরিটি ইউনিটকে (আকসু) অবহিত করেননি বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। সাকিবও নিজের ভুল স্বীকার করেছেন আকসু তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে। সেই সঙ্গে আত্মপক্ষ সমর্থন করে জানিয়েছেন, জুয়ারির প্রস্তাবকে গুরুত্ব দেননি বলে জানাননি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইসিসি জানায়, ২০১৮ এর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসের মধ্যে তিন বার সাকিবের কাছে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব আসে। কোনোবারই এ বিষয়ে আইসিসিকে কিছু জানাননি এই অলরাউন্ডার। বিষয়টি হালকাভাবে নেয়াই কাল হয়ে দাঁড়ালো সাকিবের জন্য। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে তাকে। তবে দোষ স্বীকার করায় ১ বছরের শাস্তি স্থগিত করেছে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থাটি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০২০ সালে অক্টোবরের ২৯ তারিখে সাকিবের নিষেদ্ধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হবে।
প্রথম এক বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটানোর সময়ে নতুন করে কোনো আইন না ভাঙলে পরবর্তী এক বছরের শাস্তি থেকে তিনি রেহাই পাবেন। সেক্ষেত্রে ২০২০ সালের ২৯ অগাস্টের পর আবার মাঠে ফেরার সুযোগ পাবেন সাকিব। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সাকিবের এই শাস্তির ঘোষণা দেয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা। অপরাধ এবং শাস্তি দুটোই মেনে নেয়ায় শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ থাকছে না সাকিবের। এই শাস্তির ফলে ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত কোনো ধরনের ক্রিকেটে মাঠে নামতে পারবেন না বাংলাদেশের এই অলরাউন্ডার। এই নিষেদ্ধাজ্ঞার ফলে আগামী বছর অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলতে পারবেন না সাকিব।
আইসিসির দুর্নীতি দমন নীতিমালা অনুযায়ী-কোনো ক্রিকেটার, কোচিং স্টাফ, আম্পায়ার, স্কোরার, গ্রাউন্ডসের সদস্য, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট যে কেউ জুয়াড়ির কাছ থেকে যে কোনো ধরনের প্রস্তাব পেলে তাৎক্ষণিকভাবে তা আইসিসি বা সংশ্নিষ্ট দেশের ক্রিকেট বোর্ডের দুর্নীতি দমন কর্মকর্তাদের জানাতে হবে। আকসুর নিয়ম জানাচ্ছে, কোনো ক্রিকেটার, ম্যাচ অফিসিয়াল, টিম অফিসিয়ালসহ সরাসরি ক্রিকেটে সম্পৃক্ত কোনো ব্যক্তি জুয়াড়িদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অনৈতিক প্রস্তাব না জানিয়ে চেপে গেলে, লুকানোর চেষ্টা করলে বা আকসুর জিজ্ঞাসাবাদেও অস্বীকার করলে তার বিরুদ্ধে ‘আইসিসি অ্যান্টিকরাপশন’ ধারা ২.৪.২, ২.৪.৩, ২.৪.৪, ২.৪.৫ ও ২.৪.৬ কার্যকর হবে। এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ছয় মাস আর সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে আইসিসি।
সাকিবের নিষেদ্ধাজ্ঞার আপাতত মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালে অক্টোবরের ২৯ তারিখে। তবে এক জায়গায় শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। নিষেদ্ধাজ্ঞার পর ফিরে আসতে কি পারবেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার? অতীত ইতিহাস বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মোহাম্মদ আশরাফুল ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হওয়ার আগে ছিলেন দেশের প্রধান তারকা। একটা সময় এমনও ছিল যখন তিনি ছিলেন অপরিহার্য। কিন্তু নিষেদ্ধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তাকে জাতীয় দলে খুব একটা দেখা যায়নি। গতকালও জাতীয় ক্রিকেট লিগে বরিশাল বিভাগের হয়ে সেঞ্চুরি করেছেন এই সাবেক তারকা। তবে নির্বাচকদের দৃষ্টিতে নেই তিনি। সাকিব যখন নিষেদ্ধাজ্ঞার মেয়াদ কাটিয়ে ফিরবেন, তখন দলের কম্বিনেশনে তার জায়গা থাকবে কিনা-সেটাও বিবেচ্য বিষয়। তবে আপাতদৃষ্টিতে বাংলাদেশ ক্রিকেটে সাকিব অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে গেল। এখন সময়ের ব্যবধানে দেখতে হবে তা এক বছরেই সীমাবদ্ধ থাকে নাকি দীর্ঘমেয়াদে গড়ায়।
যে কারনে নিষিদ্ধ সাকিব
১. ধারা ২.৪.৪- ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজ চলাকালে অথবা ২০১৮ সালের আইপিএলে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পান সাকিব। কিন্তু অ্যান্টি করাপশন ইউনিটকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে না পারা।
২. ধারা ২.৪.৪- ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ত্রিদেশীয় সিরিজের আগে তাকে আবারও ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেন জুয়াড়িরা। সে ব্যাপারেও আকসুকে বিস্তারিত জানাতে ব্যর্থতা।
৩. ধারা ২.৪.৪- ২০১৮ সালে আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ-কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব ম্যাচের আগেও তাকে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেন জুয়াড়িরা। একইভাবে এবারও আকসুকে জবাব দিতে ব্যর্থতার দায়।
আইসিসির নিয়মে যা আছে
এ ধরনের ঘটনা আকসু স্বাধীনভাবে তদন্ত করে। তদন্ত চলার সময় সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথা বললেও খুব প্রয়োজন না হলে সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে তারা জানায় না। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণ হলে আইসিসি বিষয়টা পাঠায় তাদের আইনি বিভাগকে। আইন বিভাগের সিদ্ধান্ত জানার পরই আইসিসি অভিযুক্ত খেলোয়াড়কে ধারা অনুযায়ী শাস্তি দিয়ে থাকে এবং সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে তারা জানায়। শাস্তি চূড়ান্ত হওয়ার পর আইসিসি সবাইকে জানিয়ে দেয়। শাস্তি নির্ধারণের পর ওই খেলোয়াড়ের সামনে দুটি পথ খোলা থাকে। হয় মেনে নেওয়া না হয় আইসিসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি পথে হাঁটা।
সাকিবের যত অঘটন
- সাকিবকে ২০১৪ সালে প্রথমবার নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। সেবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি ম্যাচে টেলিভিশন ক্যামেরার দিকে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করেন তিনি। এ ঘটনায় সমালোচনার ঝড় ওঠে।এর মুখে পড়ে প্রথমে তাকে ৩ ম্যাচ নিষিদ্ধ করে বোর্ড। পরে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করে বোর্ডের ডিসিপ্লিনারি কমিটি।
- একই বছর আবার শাস্তির কবলে পড়েন সাকিব। বোর্ডের শৃঙ্খলাভঙ্গ ও আচরণগত সমস্যার অভিযোগে ২০১৪ সালের ৭ জুলাই ঘরোয়া এবং আন্তর্জাতিক সব ধরনের ক্রিকেটে ৬ মাস নিষিদ্ধ হন তিনি।
- পরবর্তী দেড় বছর দেশের বাইরে কোনো টুর্নামেন্টে খেলার জন্য তাকে এনওসি (অনাপত্তিপত্র) না দেয়ারও ঘোষণা দেয় বিসিবি। অবশ্য পরবর্তীতে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার শাস্তি কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় ক্রিকেট বোর্ড। নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ৩ মাস কমানো হয়।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিব
ব্যাটিং-
টেস্ট-৫৬, রান-৩৮৬২, সর্বোচ্চ-২১৭, গড়-৩৯.৪০, সেঞ্চুরি-৫, হাফসেঞ্চুরি-২৪
ওয়ানডে-২০৬, রান-৬৩২৩, সর্বোচ্চ-১৩৪*, গড়-৩৭.৮৬, সেঞ্চুরি-৯, অর্ধশত-৪৭, স্ট্রাইকরেট-৮২.৭৫
টি-টোয়েন্টি-৭৬, রান-১৫৬৭, সর্বোচ্চ-৮৪, গড়-২৩.৭৪, অর্ধশত-৯, স্ট্রাইকরেট-১২৩.৭৭
বোলিং-
টেস্ট- ৫৬, উইকেট-২১০, সেরা বোলিং-৭/৩৬, ৫ উইকেট-১৮, ১০ উইকেট-২
ওয়ানডে- ২০৬, উইকেট-২৬০, সেরা বোলিং-৫/২৯, ইকোনমি রেট-৪.৪৮, ৫ উইকেট-২
টি-টোয়েন্টি- ৭৬, উইকেট-৯২, সেরা বোলিং-৫/২০, ইকোনমি রেট-৬.৮১, ৪ উইকেট-৩, ৫ উইকেট-১
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।