Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মোদির ছলনায় ভুলতে নারাজ, কাশ্মীর সফর থেকে বাদ ব্রিটিশ এমপি!

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৯ অক্টোবর, ২০১৯, ৭:২৮ পিএম

ভারত সরকার যা দেখাতে চেয়েছিলেন তা নয়, বরং নিজের মতো করে অধিকৃত কাশ্মীরের পরিস্থিতি দেখতে চেয়েছিলেন। সে জন্য আমন্ত্রণ পাঠিয়েও শেষ মুহূর্তে তার কাশ্মীরে ঢোকার অনুমতি বাতিল করা হয় বলে অভিযোগ তুললেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ইংল্যান্ডের লিবারাল ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি ক্রিস ডেভিস। কাশ্মীরে নরেন্দ্র মোদি সরকারের আদতে গণতান্ত্রিক নীতি-নিয়মের উপর আঘাত হানছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

উত্তর-পশ্চিম ইংল্যান্ডের এমপি ক্রিস ডেভিস জানিয়েছেন, সরকারি ঘেরাটোপে না থেকে নিজের মতো করে, স্বাধীন ভাবে কাশ্মীরের পরিস্থিতি দেখতে চেয়েছিলেন তিনি। কথা বলতে চেয়েছিলেন সেখানকার স্থানীয় মানুষের সঙ্গে। সেই কারণে তাকে কাশ্মীরে ঢোকার অনুমতি দেয়নি মোদি সরকার। তিনি বলেন, গত ৭ অক্টোবর উইমেনস ইকনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল থিঙ্কট্যাঙ্ক (ওয়েস্ট) নামের একটি সংস্থার পক্ষ থেকে উপত্যকায় যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় তাকে। বলা হয়, ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ সেরে ২৯ অক্টোবর কাশ্মীর যেতে হবে। তার পর দিন বাকিদের সঙ্গে একটি সাংবাদিক বৈঠকে অংশ নিতে হবে তাকে। আসা-যাওয়া, থাকা-খাওয়া সব খরচই দেবে ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর নন অ্যালাইনড স্টাডিজ। আমন্ত্রণ পাওয়ার পর দিনই তিনি তা গ্রহণ করেন বলে দাবি ক্রিসের। তবে তিনি সেনাবাহিনীর সঙ্গে না গিয়ে স্বাধীন ভাবে কাশ্মীর ঘুরে দেখতে চান বলেও জানিয়ে দেন। তার পরেই ১০ অক্টোবর তার আমন্ত্রণপত্র বাতিল করা হয়।

ঠিক কী কারণে তার আমন্ত্রণপত্র বাতিল করা হল, সেটুকুও তাকে জানানো হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ক্রিস। তার কথায়, ‘স্বাধীন ভাবে কাশ্মীরের পরিস্থিতি ঘুরে দেখতে পারব, যার সঙ্গে ইচ্ছা কথা বলতে পারব, সেনাকর্মী বা পুলিশকর্মীদের না নিয়ে, স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে পারব ভেবেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিলাম। তাতে মোদি সরকারের এত আপত্তি কেন? সাংবাদিক এবং দেশের রাজনীতিকদেরই বা কেন স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না? ভারত সরকার ঠিক কী লুকাতে চাইছে?’

গত সপ্তাহেই কাশ্মীরে মোদি সরকারের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে মার্কিন কংগ্রেসে। এমনকি কাশ্মীর নিয়ে নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকবে বলে জানিয়ে দেয় মালয়েশিয়াও। তার পরেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের এমপি-দের একটি দলকে কাশ্মীরে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে যদিও জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, এটি সরকারি সফর নয়। বিদেশি এমপি-রা প্রত্যেকেই বেসরকারি ভাবে এ দেশে এসেছেন। কিন্তু বিরোধী নেতাদের উপত্যকায় ঢুকতে না দিয়ে, বেছে বেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অতি-দক্ষিণপন্থী এবং শরণার্থী-বিরোধী বলে পরিচিত এমপিদের কাশ্মীরে আসার আমন্ত্রণ জানানোর পিছনে মোদি সরকারের ভূমিকা রয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের একাংশের। আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্নের মুখে পড়েই তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে দাবি তাদের।

এক বিবৃতিতে ক্রিস ডেভিস বলেন, ‘মোদি সরকারের জনসংযোগ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে, সব কিছু ঠিক আছে এমন ভান করায় একেবারেই আগ্রহী নই আমি। তবে এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, কাশ্মীরে গণতান্ত্রিক নীতি-নিয়মের গোড়ায় আঘাত হানা হচ্ছে। সে দিকে নজর দেয়া উচিত গোটা বিশ্বের।’

মোদি সরকারের তিনমাসব্যাপী বিধিনিষেধের জেরে ইংল্যান্ডে বসবাসকারী বহু কাশ্মীরি বংশোদ্ভূত মানুষ তাদের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না এবং এর শেষ ভাল হবে না বলেও জানান ক্রিস ডেভিস। তার দাবি, ‘কাশ্মীরের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে এমন হাজার হাজার মানুষের বাস উত্তর-পশ্চিম ইংল্যান্ডে। গত তিন মাস ধরে পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না তারা। তাদের হয়েই কথা বলছি আমি। আমার মনে হয় এর শেষ ভাল হবে না। মানুষের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়ে, তাদের উপর সেনাশাসন চাপিয়ে দিয়ে কখনও মন জেতা যায় না। হিংসাত্মক প্রত্যাঘাত আসবেই।’ ক্রিসের অভিযোগ নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কোনও রকম প্রতিক্রিয়া দেয়া হয়নি। সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কাশ্মীর


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ