Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চলতি মাসে ৫ ট্রলারসহ ৬৩ ভারতীয় জেলে আটক

বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতীয় জেলেদের অনুপ্রবেশ বেড়েই চলেছে

মংলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৬ অক্টোবর, ২০১৯, ৩:৩৫ পিএম

বাংলাদেশের জলসীমানায় ভারতীয় জেলেদের অনুপ্রবেশ থামছেনা ।বাংলাদেশের জলসীমায় ৯ অক্টোবর থেকে আগামি ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন নিষিদ্ধ কালীন এ সময়ে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমার সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় ভারতীয় জেলেরা এ দেশের জলসীমায় ফিসিং ট্রলার নিয়ে অনুপ্রবেশ করে বিপুল পরিমান ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে। শীত মৌসুম পুরোপুরি শুরু না হতেই ভারতীয় এসব জেলেদের অনুপ্রবেশের কারণে অসহায় হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের জেলেরা। স্থানীয় জেলেদের অভিযোগ, ভারতীয় জেলেদের উৎপাতে দেশি জেলেদের মাছ শিকার ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। চলতি অক্টোবর মাসে বঙ্গোপসাগরের ফেয়ারওয়ে বয়া এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে ৫টি ট্রলারসহ ৬৩ জন ভারতীয় জেলেকে আটক করেছে নৌবাহিনী। তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

সুত্র জানায়, বাংলাদেশের জলসীমা থেকে ভারতের কাকদ্বীপ এলাকার কাছে হওয়ায় সেখানকার বিপুল সংখ্যক জেলে এদেশের জলসীমায় মাছ ধরতে আসে। প্রতি বছর অক্টোবর-নভেম্বর থেকে ফেব্রæয়ারি-মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশি জেলেরা বঙ্গোপসাগরের সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকায় ট্রলার ও নৌকায় করে ইলিশসহ সামুদ্রিক নানা ধরনের মাছ আহরণ করে থাকেন। সমুদ্র শান্ত থাকায় এ সময়টা জেলেদের মাছ আহরণের উপযুক্ত মৌসুম।

সুন্দরবন উপকূলের মংলা, রামপাল, শরণখোলা ও দাকোপ উপজেলার কয়েকজন মৎস্য ব্যবসায়ী অভিযোগ করে জানান, ভারতীয় জেলেদের উৎপাতে বেড়ে গেছে। তারা আরও বলেন, একসময় ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় ঘেষে বা কিছুটা ভিতরে ঢুকে ইলিশ শিকার করতো। শীত মৌসুম পুরোপুরি শুরু না হতেই বর্তমানে সুন্দরবন উপকুলীয় এলাকার কাছাকাছি এসে ফিসিং বোট নিয়ে অবাধে মাছ শিকার করছে ভারতীয় জেলেরা। অধিকাংশ সময়ই তারা গোপনে মাছ শিকার করে চলে যায়। বিদেশী জেলেরা উচ্চতাসম্পন্ন বাইনোকুলার দিয়ে ট্রলারে বসে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর তৎপরতায় চোখ রাখে। তারা আরো বলেন, নিষিদ্ধ কালীন সময়ে যখর দেশীয় জেলেরা ইলিশ আহরণ থেকে বিরত থাকছেন সে সময়ের সুযোগ নিয়ে ভারতীয় জেলেরা এ দেশের জলসীমায় আরো বেশী করে অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে।দেশীয় জলসীমায় সামুদ্রিক মাছের প্রজনন ও উৎপাদন বেশি এবং মাছ খেতে সুস্বাদু -তাই এ সময়টাই মাছ লুণ্ঠনের টার্গেট থাকে ভারতীয় জেলেদের। আর সেই সুযোগ বুঝেই প্রতিবেশী দেশ ভারতের জেলেরা অত্যাধুনিক ট্রলার মাছ ধরার উপকরণ নিয়ে বাংলাদেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকার করে। তারা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বাইনোকুলার দিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তৎপরতায় চোখ রাখে এবং নৌবাহিনী আসতে দেখলেই দ্রæত পালিয়ে যায়। এ ছাড়া ভারতীয় জেলেরা আধুনিক অত্যাধুনিক ট্রলার,ওয়ারলেস, অত্যাধুনিক জাল, জিপিআরএস ব্যবহার করে থাকে। এসব ছাড়াও ভারতীয় জেলেদের কাছে রয়েছে ‘ফিস ফাইন্ডার’ যন্ত্র। যা দিয়ে সহজেই মাছের অবস্থান নির্ণয় করা যায়।

সুন্দরবন অঞ্চলে মৎস্যজীবিদের বৃহৎ সংগঠন ‘দুবলা ফিসারম্যান গ্রæপে’র সভাপতি কামাল উদ্দিন আহম্মেদ অভিযোগ করে বলেন, প্রায় সারা বছরই ভারতীয় জেলেরা সাগরে টহলরত বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর জাহাজ ও সরকারি বাহিনীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশীয় জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকার করে থাকে। তবে বর্তমানে এসব ভারতীয় জেলেদের উৎপাত কয়েকগুন বেড়েছে। এসব ভিনদেশী জেলেরা অনেক সময় দেশীয় জেলেদের মারধর করে মাছ লুট করেও নিয়ে নেয়।

মংলাস্থ কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের সদর দপ্তরের অপারেশন কর্তকর্তা লে. ইমতিয়াজ আলম জানান, ‘দেশীয় জেলেরা সমুদ্রের ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে মাছ ধরেতে পারে। আর ভারতীয় দেশীয় সমুদ্রসীমার প্রায় দেড়শ' কিলোমিটার ভেতরে প্রবেশ করে থাকে। তারা দ্রæতগামী নৌযান ও কারেন্ট জালসহ জিপিএস নামক বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করে। এসব জেলেদের ধরতে নৌ বাহিনীর পাশাপাশি তারাও সাগরে অভিযান অব্যাহত রেখেছে’।
কয়েকজন আইনজীবি জানায়, মাছ শিকারে অনুপ্রবেশের দায়ে ভারতীয় জেলেরা ট্রলারসহ ধরা পড়ার পর আদালতে সাধারণত দিক ভুল করে এ দেশে প্রবেশ করেছে বলে ক্ষমা চেয়ে দেশে ফিরে যায়। প্রায়ই দীর্ঘ সময় এ দেশের কারাগারে আটক থাকতে হয় না বলে ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশে জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে অবাধে মাছ শিকারে উৎসাহিত হয় বলে মন্তব্য করেন ।

মংলা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, সর্বশেষ গত ২২ অক্টোবর ভোরে বঙ্গোপসাগরের ফেয়ারওয়ে বয়া এলাকা থেকে একটি ট্রলারসহ ১৪ ভারতীয় জেলেকে আটক করে নৌ বাহিনীর টহল দল। এর আগে গত ১ অক্টোবর ১টি ফিসিং বোটসহ ১৫ জন, ৪ অক্টোবর ২টি ফিসিং বোটসহ ২৩ জন ও ১৪ অক্টোবর ১ টি ফিসিং বোটসহ ১১ জন ভারতীয় জেলেকে বাংলাদেশ জলসীমা থেকে আটক করা হয় এবং মাছ শিকারের অপরাধে আটক জেলেদের জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। সমুদ্রসীমা লংঘনের অভিযোগে এ পর্যন্ত আটক জেলেদের সবাই ভারতের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। তাদের বিরুদ্ধে সামুদ্রিক মৎস্য অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ২২ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মংলা

২২ মে, ২০২০
৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ