Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এ সপ্তাহের কবিতা

| প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

শামসুল হক আজাদ
পলাতকা ছায়া

দিন ও রাত খুব দ্রুত হেঁটে আসছে আমার দিকে
আমার ডান হাতের তালুতে কয়েক লক্ষ আর্তচিৎকার
পোয়াতি মেয়েটির খিঁচুনি
থর থর করে কাঁপছে ডিটেনশন ক্যম্প।
বাম পাঁজরের পাশ থেকে ধ্বসে যাচ্ছে দেশ,
কোনো দেশের মাটিতে আমার ছায়া পড়ছে না
সূর্যের বন্দরে থেমেছে চিতা কাঠের নৌবহর।
সেখানে আমার দীর্ঘ ছায়ার শেষকৃত্য হবে।
আকাশের গায়ে কাঁটাতারের বেড়া নেই।
নামগোত্রহীন মৃতেরা পাখনা মেলছে
পলাতকা ছায়া পড়ছে জীবনের উপর।
পিছনে দাঁড়িয়ে আছে এক সমুদ্র কান্না
একটাও লাইফ বোট নেই
এক প্রশ্বাস বাতাসের জন্য ঢেউয়ের মতো
আছড়ে পড়েছে আবেদন নিবেদন।
সামনে স্টেনগান হাতে দাঁড়িয়ে আছে পাথরের ভাষ্কর্য
ভাষ্কর্যের পকেটে রাজার আদেশনামা।
সেদিকে কোথাও আমার ছায়া খুঁজে পাচ্ছি না।
এতো এতো যুগ পেরিয়ে হঠাৎ মনে হলো
আমি এক অশরীরী,
আমি এক পরাবাস্তবের শ্রেণীভুক্ত অস্বীকার
যাদের কোনো দেশের মাটিতে ছায়া পড়তে নেই।

মাহবুবা করিম
বাইরে জোঁক

লাশ মর্গে; পোষ্টমোর্টেম চলছে, চলুক-অনাধিকাল-পলাতক আসামীর কানামাছি দীর্ঘায়ু সকাল-বিকাল।
নিশ্চিতকরণ প্রক্রিয়া -কিছু কুকুর বুকের পাঁজর ভেঙে বুঝিয়ে দিলে সকলের কলিজা থাকতে নেই...
প্রমান-জলজ্যন্ত সুকান্তের ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি নিথর শরীর।
পিঠে ঘা- নীল মানচিত্র-এঁকে গেছে গুপ্তচর ।
সৌমিত্র-তার ছোট ভাই; জেদী। যক্ষের ধন। হারানোর ভয়ে, মা-ছেলেটির মুখ সেলাই করতে নিয়ে গিয়েছিল এক মুচির কাছে। মুচিটি পারদর্শী। সাতটি সেলাই টেনে-টেনে বাচন ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিলো পনেরো বছরের সৌমিত্রের।
সেই থেকে সৌমিত্র ঘুমিয়ে পড়লেই
মা-টি আলগোছে বুক থেকে খুলে রাখে দুর্দান্ত সাহস।

মোহাম্মদ জসিম
আবাদ

প্রথমত-গোলাপই সঙ্গত মনে হলো, তাই গোলাপচারা রুইয়ে দিয়ে অপেক্ষা করেছি...
গোলাপ তুলে নিয়ে চলে গেছে দলছূট প্রেমিকের ছায়া!
এই ক্ষোভে খিল রাখা সঙ্গত মনে হলে বহুকাল কিছুই আবাদ করিনি আর।
আগাছায় ভরে গেছে-বুনোকাশ ফুটেছিলো বছর দুই; ঝোপঝাড়ে পাখি ও পিঁপড়ার আবাস!
একদিন মনে হলো-একদা উর্বর মনোভূমি রঙিন গোলাপ দিতো-হয়তোবা ভাল হবে আঙুর, আখরোট কিংবা বাতবী লেবু-
সব ভুল; - এখন হৃদয় জুড়ে মাইল মাইল মুগ ও মশুরের ফুল...

গোলাপ আমিন
হেমন্তের ধানীগন্ধে শৈশবের ঘ্রাণ

এ বুভুক্ষু হৃদয়ের ভেতর সংগোপনে হেমন্তের ধানীগন্ধ
নিভৃতে ডাক দিয়ে যায় ধান কুড়ানি দিনগুলো আমার,
মিহি শিশির-কুয়াশার শান্ত ভোর-বিহানে স্থিতধী পায়ে
চিৎ হয়ে শুয়ে থাকা ধানের চাতাল ঘেঁষে সন্তর্পণে হাঁটি।
মৃত্তিকার আমি এক অধম সন্তান, মাটি-ই আমার প্রাণ
ভুলে আছি কতোদিন, দেখি না তার চিকচিকে স্বর্ণালি
মুখের মদিরতায় আজন্ম লেগে থাকা শস্যচিত্রের চিহ্ন,
নাসারন্ধ্রে নাপামের মতো শৈশবের সুগন্ধ এসে লাগে।
ব্রাত্যজনের মতো ব্রতচারী আমি যেন এক গন্ধবণিক।


খান রোকনুজ্জামান
নক্ষত্রপাত

খুঁজবে না কেউ-
অতিকায় কিছু ক্ষুদ্র,
হয়তো বিশেষ ! হয়তো নয় !

প্রলয়লীলায় চারপাশ আজ বিলীন হয়েছে
তবু কেউ কিছুই শোনেনি
জানতেও পারেনি।
থর থর কাঁপছে টেকটোনিক প্লেটগুলো
ঘর্মাক্ত কপাল, তালু - অথচ ?

শুষ্ক জিহ্বাগ্রে ঠোঁটখানি
সরসিত করবার উদগ্রতা নিরন্তর
কৃষ্ণপক্ষ আচমকা আছড়ে পড়েছে -
হৃদপিন্ডগুলো যেন কালো পুর চাদরে ঢাকা
নিঃশব্দ -

শুধু অনেক দূরে বেড়ালের কান্না
ঐ তো কিছু একটা ছুটে গেল
আমি নিশ্চিত খসে পড়েছে আজ
আরো একটা নীল নক্ষত্র।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন