নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
২০২২ কাতার বিশ্বকাপ ও ২০২৩ এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ভারতের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচে ৮৮ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থাকার পরও দূর্ভাগ্যজনক ড্র করল বাংলাদেশ। বলা যায় জেতা ম্যাচ হাতছাড়া করল লাল-সবুজরা। মঙ্গলবার রাতে কোলকাতার সল্টলেক বিবেকানন্দ যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গনে উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে বাংলাদেশ প্রথমে গোল করেও শেষ পর্যন্ত ১-১ ব্যবধানের ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে। বাংলাদেশের পক্ষে ফরোয়ার্ড সাদ উদ্দিন ও ভারতের ডিফেন্ডার আদিল খান একটি করে গোল করেন।
ভারতের মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে কখনো জয় পায়নি বাংলাদেশ। সেই অধরা জয়ের দেখা মিলতে পারত এদিন। প্রথমার্ধে করা গোলে এগিয়ে থাকাকে পুঁজি করে ম্যাচের প্রায় অন্তিম মূহূর্ত পর্যন্ত জয়ের সুবাস পাচ্ছিল লাল-সবুজরা। ঠিক তখনই হৃদয় ভাঙ্গলো বাংলাদেশের কোটি ফুটবলভক্তের। ম্যাচের নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার দুই মিনিট আগে হেডে সমতাসূচক গোলটি করেন ভারতের আদিল খান।
দীর্ঘ ৩৪ বছর পর কোলকাতায় আরেকটি বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ। আগ্রহের তুঙ্গে ছিল দুই প্রতিবেশী দেশের লড়াই। প্রায় এক লাখ দর্শকধারণ ক্ষমতার যুবভারতীতে ছিল না তিলধারনের ঠাঁই। স্বাভাবিকভাবেই স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে স্বাগতিক ভারতের পক্ষে শ্লোগান উঠেছে বেশি। কিন্তু সেই শ্লোগানকে যেন মূহূর্তেই থামিয়ে দিলেন বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড সাদ উদ্দিন। তার হেডে করা অসাধারণ গোলটির পর বিশ্বের অন্যতম বড় এই স্টেডিয়ামের নেমে আসে পিনপতন নীরবতা।
দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি দলের শক্তি একসময় কাছাকাছি থাকলেও গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে গেছে ভারত। তবে ব্রিটিশ কোচ জেমি ডে বাংলাদেশ জাতীয় দলের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে যেন ফের লড়াকু চেহারায় দেখা যাচ্ছে লাল-সবুজদের।
আগের ম্যাচে ঘরের মাঠে কাতারের বিপক্ষে জামাল ভূঁইয়াদের পরফরমেন্সই ইঙ্গিত দিয়েছিল কোলকাতায় তারা ভারতকে ছেড়ে কথা বলবেন না। মঙ্গলবার সেটাই প্রমাণ হলো। স্টেডিয়ামে উপস্থিত স্বাগতিক দলের প্রায় ১ লাখ সমর্থককে হতবাক করে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাতœক ফুটবল উপহার দেয় বাংলাদেশ। পুরোটা ম্যাচ জুড়েই জামাল ভূঁইয়াদের লড়াকু চেহারা দেখা গেছে। ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকেই লাল-সবুজের ফুটবলাররা যে যার দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করেছেন। ডিফেন্ডাররা দারুণভাবে নিজেদের গোলমুখ আগলে রেখেছেন। গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানাও দৃঢ়তার সঙ্গেই বেশ কয়েকটি সেভ করেছেন। মিডফিল্ডার অসাধারণ খেলায় ফরোয়ার্ডরা তো সারাক্ষণ ভারতীয় রক্ষণদূর্গকে ব্যস্তই রেখেছেন। বাংলাদেশের ফুটবলারদের এমন খেলা নিকট অতীতে দেখা যায়নি এটা নিশ্চিত। এ খেলায় জয় তো আশা করাই যায়। ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণে থাকলেও বাংলাদেশ গোলের দেখা পায় প্রথমার্ধের শেষ দিকে। খেলা শুরুর ২০ সেকেন্ডের মাথায় বাঁ প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে উঠেছিলেন বাংলাদেশের মিডফিল্ডার ইব্রাহিম। তাকে বক্সের মধ্যে ফেলে বল রুখে দেন ভারতের রাহুল ভেকে।
৮ মিনিটের মাথায় বাংলাদেশের আরেকটি আক্রমণ নস্যাত করে দেয় ভারতীয় ডিফেন্ডাররা। ম্যাচের ৩১ মিনিটে বিপলু একক প্রচেষ্টায় বল নিয়ে ডানপ্রান্ত দিয়ে ভারতীয় সীমানায় ঢুকে শট নেন। কিন্তু তার শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে গোলের সুযোগ হারায় বাংলাদেশ।
সুযোগ পেয়েছিল ভারতও। ৪ মিনিটে ভারতের সেরা ফরোয়ার্ড সুনীল ছেত্রীর ভলি রুখে দেন বাংলাদেশ গোলরক্ষক আশরাফুল রানা। ম্যাচের ৩৪ মিনিটে ডানদিক থেকে নেয়া ছেত্রীর শট এক হাতে বারের ওপর দিয়ে বাইরে পাঠিয়ে দেন রানা, যেটি চোখের পলকে গোল হয়ে যেতে পারতো। তবে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ৮৩ ধাপ এগিয়ে থাকা ভারতকে ছেড়ে কথা বলেনি বাংলাদেশ। প্রথমার্ধের ৪০ মিনিট পর্যন্ত বেশ ক’টি সুযোগ কাজে লাগাতে না পারলেও ম্যাচের ৪২ মিনিটে ঠিকই গোল আদায় করে নেয় লাল-সবুজরা। এসময় ডানপ্রান্ত থেকে বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার দুর্দান্ত এক ফ্রি-কিক বক্সের মধ্যে পেয়ে লাফিয়ে উঠে হেড নেন সাদ উদ্দিন। ভারতীয় গোলরক্ষক গুরপ্রীত সিং সান্ধু কিছু বুঝে ওঠার আগেই বল জড়িয়ে যায় জালে (১-০)। স্তব্দ হয়ে যায় পুরো সল্টলেক স্টেডিয়াম। এগিয়ে থেকেই বিরতিতে জায় কোচ জেমি ডে’র শিষ্যরা। দ্বিতীয়ার্ধের তাদেরকে দেখা যায় বিধ্বংসি রূপে।
ম্যাচের ৫১ মিনিটে আরেকটি বড় সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। সতীর্থের সঙ্গে দারুণ বোঝাপড়ায় ভারতীয় বক্সে বল নিয়ে ঢুকে শট নেন জীবন। তার শট কোনোমতে আটকে দেন ভারতীয় এক ডিফেন্ডার। ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া ভারতকে ৬০ মিনিটে আরেক দফা হতাশ হতে হয় রিয়াদুল ইসলাম রাফির নৈপুণ্যে। সতীর্থের ফ্রি-কিকে আনাস এদাথোদিকার হেড গোললাইন থেকে হেডেই ফেরান রাফি। ৬৪ মিনিটে ইব্রাহিমের দূরপাল্লা শট ক্রসবারে লাগলে দ্বিতীয় গোলবঞ্চিত হয় বাংলাদেশ।
৭১ মিনিটে বিপদ হতে পারতো। ভারতের সংঘবদ্ধ এক আক্রমণ ডিফেন্ডাররা বেশ কয়েকবার ঠেকিয়ে দিলেও শট নিয়েছিলেন স্বাগতিক দলের এক ফুটবলার। বাংলাদেশ গোলরক্ষক রানা তা দারুণ দক্ষতায় আটকে দেন। ম্যাচের ৭২ মিনিটে নাবীব নেওয়াজ জীবন ভারতীয় গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে বল পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। সেটি গোললাইন থেকে ফিরিয়ে দেন ডিফেন্ডার আদিল।
ম্যাচের তখন প্রায় শেষ পর্যায়। এসময় হতাশা ভর করে বাংলাদেশ শিবিরে। ৮৮ মিনিটে কর্নার থেকে বল পেয়ে হেডে গোল করেন ভারতের নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার আদিল খান (১-১)। স্বস্তি ফিরে আসে সল্টলেকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।