মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
সউদী আরবকে বিদেশী পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশ্বজুড়ে পর্যটন ব্যবসায় বেশ উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মত সউদী আরব সস্তা কোনো গন্তব্য নয়। উপরন্তু বছরের আট মাস সেখানে প্রচন্ড গরম থকে। রাজনৈতিক স্বাধীনতা উন্মুক্ত নয়, মদ্যপান নিষিদ্ধ, নারী-পুরুষের মধ্যে প্রকাশ্যে মেলামেশার ওপর কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে। তাহলে বিধিনিষেধে ভরা অত্যন্ত রক্ষণশীল এই দেশে মানুষ পয়সা খরচ করে যাবে কেন? দেখার কী আছে সেদেশে?
বিবিসির প্রতিরক্ষা বিষয়ক সংবাদদাতা ফ্রাঙ্ক গার্ডনার বলছেন, সউদী আরবের নিসর্গের বৈচিত্র্য এবং সৌন্দর্য যে কতটা আকর্ষণীয় হতে পারে - তা অনেক মানুষই হয়ত কল্পনাও করেন না। এটা ঠিক দেশের সিংহভাগ এলাকাই মরুভ‚মি, কিন্তু সেদেশের দক্ষিণ পশ্চিমে রয়েছে জুনিপার বৃক্ষে মোড়া আসির পর্বতমালা (৯,৯০০ ফুট উঁচু), নীলাভ পানির, কোরাল সমৃদ্ধ লোহিত সাগর, আল-হফুফের খেজুর গাছে ভরা মরূদ্যান এবং জেদ্দার সরু অলি-গলি আর মসলার বাজার।
ফ্রাঙ্ক গার্ডনার ১৯৮০র দশক থেকে পেশাগত কারণে বহুবার সউদী আরব গেছেন, সেদেশের অধিকাংশ জায়গাতে তিনি ঘুরছেন। তার কথায়, ‘অনেক সউদী মজা করে আমাকে বলে যে, তাদের চাইতেও নাকি আমি সউদী আরবকে অনেক বেশি দেখেছি।’
সউদী আরবে তার প্রিয় এবং পছন্দের জায়গাগুলোর তালিকা করেছেন ফ্রাঙ্ক গার্ডনার-
বৈচিত্র্যপূর্ণ জেদ্দা
লোহিত সাগরের তীরে এই বন্দর শহর ১৯৮২ সাল পর্যন্ত সউদী আরবের রাজধানী ছিল। শহরটিতে লোহিত সাগর তীরবর্তী সমস্ত দেশের মানুষের বসবাস। ফলে সাংস্কৃতিক দিক থেকে খুবই বৈচিত্র্যপ‚র্ণ। জেদ্দায় গেলে দেখবেন, মিসরীয়রা খোলা জায়গায় ক্যাফেতে বসে হয় কফিতে চুমুক দিচ্ছেন অথবা হুক্কা টানছেন। কেউ আবার রাস্তার লাইট পোস্টের নীচে বসে বোর্ড-গেমে মশগুল। ইয়েমেনিদের টেইলরিং দোকান রয়েছে অনেক। দেখা যাবে সেসব দোকানে মেঝেতে বসে অনেক রাত পর্যন্ত তারা পোশাক সেলাই করছেন।
জেদ্দার ফুটপাতে চোখে পড়বে হরেক রকম মসলা নিয়ে বসেছেন জিবুতি, এরিত্রিয়া এবং সোমালি নারীরা। জেদ্দার পুরনো শহরের পাথরে তৈরি সরুর সরু গলিতে আরবির সাথে সাথে আকছার আপনার কানে আসবে ইথিওপিয়ার ভাষা থেকে শুরু করে হিন্দি শব্দ।
আসির পর্বতমালা
দশ-বিশ বছর সউদী আরবে রয়েছেন এমন বহু মানুষের কাছেও দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে আসির পর্বতমালা অপরিচিত। সবুজ জুনিপার বৃক্ষে ঢাকা এই পর্বতের সৌন্দর্য খুবই বিচিত্র। ফ্রাঙ্ক গার্ডনার বলছেন এমনকী ভরা গ্রীষ্মে তিনি সেখানে গিয়ে দেখেছেন ব্যাপক এক শিলা বৃষ্টির পর জুনিপারের জঙ্গল পুরো সাদা হয়ে গেছে। পাঁচ লাখের মত হামদ্রিয়াজ বেবুনের বসবাস এই পাহাড়ি জঙ্গলে। সেই সাথে রয়েছে হর্নবিল, ঈগল আর নীলচে আগামিড গিরগিটি।
স¤প্রতি অভ্যন্তরীণ পর্যটনের জন্য ইয়েমেন সীমান্তের কাছে এই জায়গাটি উন্মুক্ত করা হয়েছে। পাহাড়ের ওপরে ওঠার জন্য কেবল কারের ব্যবস্থা হয়েছে।
পাহাড়ের খাদে খাদে রয়েছে অপ‚র্ব সুন্দর সব গ্রাম। সেখানে থেকে আসির পাহাড়ের ঢালের সৌন্দর্য চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো।
মাদায়িন সালেহ
সউদী আরবের উত্তর-পশ্চিমে মরুভ‚মির মাঝে প্রাচীন নাবাতিয়ান সভ্যতার বিভিন্ন নিদর্শন রয়েছে। জর্ডানের পেত্রার বিভিন্ন নিদর্শনের সাথে মিল রয়েছে সেগুলোর। এটা হিযাজ, আরব উপদ্বীপের পশ্চিমাংশের সেই ঐতিহাসিক স্থান যেখানে টি ই লরেন্স ১৯১৭ সালে তুর্কি শাসনের বিরুদ্ধে আরবদের বিদ্রোহের সময় আরবদের পক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন। সেসময় তৈরি রেললাইনের অংশবিশেষ এখনো চোখে পড়বে। মাদায়িন সালেহ নিয়ে বহুদিন সউদী সরকার খুব একটা উচ্চবাচ্য করেননি। কারণ, ইসলাম-পূর্ব সভ্যতার এসব নিদর্শনের প্রচার রক্ষণশীলদের খুব একটা পছন্দের নয়। ঐ সময়কালকে তারা ‘অন্ধকার যুগ’ হিসাবে দেখেন। কিন্তু পর্যটন শিল্পের প্রসার নিয়ে যখন সউদী আরব এখন ভাবতে শুরু করেছে। ফলে, ইসলাম-পূর্ব প্রাচীন সভ্যতার এসব নিদর্শন নিয়েও প্রচার শুরু হয়েছে।
আল-হফুফ
সউদী আরবের পূর্বাঞ্চলে মরুভ‚মির মাঝে খেজুর গাছে আবৃত আদিগন্ত মরূদ্যান বিশ্বের সবচেয়ে বড়। বাগানের মধ্যে এখানে সেখানে সরু ঝরনা চোখে পড়ে। এর মাঝে রয়েছে আল-কুরা পর্বত এবং তার ভেতর জটিল গুহা-পথ। ২০১৮ সালে এটি ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এলাকার তালিকায় জায়গা পেয়েছে। পাহাড় পেয়ে এই গুহায় ঢুকলে বাইরের মরুভ‚মির উত্তাপ থেকে সাথে সাথে মুক্তি। ঠান্ডা হয়ে যায় শরীর।
কিছু সাবধানতা
সউদীরা সাধারণত বিদেশী পর্যটকদের স্বাগত জানায়। তবে কিছু ঝুঁকি রয়েছে। উদার পশ্চিমা সংস্কৃতির অনেক কিছুই রক্ষণশীল এই দেশে তীব্র আপত্তির কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। ভুল-বোঝাবুঝি তৈরি হতে পারে। রাস্তা-ঘাটে কখনই সউদী নারীদের ছবি তোলার চেষ্টা করা উচিৎ হবে না। তাদের অভিভাবকরা এটাকে মর্যাদাহানি হিসাবে দেখতে পারেন। এখনও রিয়াদ, জেদ্দা সহ বড় বড় শহরের বাইরে বহু সউদী হয়ত কখনই পশ্চিমাদের সংস্পর্শেই আসেনি। সুতরাং পশ্চিমারা ক্যামেরা বা মোবাইল ফোন বের করলে তারা সন্দিহান হয়ে উঠতে পারেন। সুতরাং স্থানীয়দের ছবি তোলার সময় সাবধানী হতে হবে। তাদের অনুমতি চাইতে হবে।
কীভাবে যাওযা যাবে
৪৯টি দেশের নাগরিকরা অনলাইনে ভিসা পেতে পারেন। মুখ না ঢাকতে হলেও, মেয়েদের ‘শালীন’ পোশাক পরতে হবে এবং এই প্রথম অবিবাহিত নারী-পুরুষ একসাথে হোটেল রুমে থাকার অনুমতি পাবেন।
কতটা নিরাপদ
এমন নয় যে এবারই প্রথম সউদী আরব পর্যটন বিস্তারের চেষ্টা করছে। ২০০০ সালে পর্যটকদের রক-ক্লাইম্বিং এবং প্যারা-গøাইডিং এ সাহায্য করতে তারা ফ্রান্স থেকে প্রশিক্ষক নিয়ে এসেছিল। কিন্তু ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলা এবং তার সাথে ১৫ জন সউদীর সংশ্লিষ্টতার পর সেই চেষ্টা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সউদী আরবকে আল কায়েদার বিদ্রোহ সামলাতে হয়েছে। এখন ইয়েমেনের যুদ্ধে জড়িয়েছে তারা যার পরিণতিতে মাঝে মাঝেই ইয়েমেন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়েছে। তারপরও সউদী আরব নিরাপদ একটি দেশ। পর্যটকদের সেখানে অপরাধ বা সহিংসতার মুখোমুখি হবে - সে সম্ভাবনা খুবই কম। সূত্র : বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।