মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারতের কেরলা রাজ্যের কোঝিকোদে জেলায় সম্পত্তির দখল ও পছন্দের ব্যক্তিকে বিয়ের জন্য গত ১৪ বছর ধরে একে একে শাশুড়ি, শ্বশুর ও স্বামীসহ পরিবারের ছয়জনকে খুন করেছেন জলি জোসেপ নামে এক নারী। পরিবারের লোকজন এসব হত্যাকে স্বাভাবিক বলেই ধরে নিয়েছিলো। কিন্তু সম্প্রতি পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে লোমহর্ষক হত্যার ঘটনাবলী।
পুলিশ বলছে, এগুলো কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, গত ১৪ বছরে বিভিন্ন সময়ে ঠান্ডা মাথায় তাদের হত্যা করা হয়েছে বিষাক্ত সায়ানাইড দিয়ে। এই হত্যাগুলো করেছেন ওই পরিবারেরই ৪৭ বছর বয়সী পুত্রবধূ জলি জোসেপ। সম্পত্তির দখল ও নিজের যৌন কামনাকে চরিতার্থ করতেই তিনি এতগুলো হত্যার ঘটনা ঘটান। তার হাত থেকে রেহাই পায়নি দু বছরের শিশুও।
গত শুক্রবার ঘাতক জলি ও তার দুই সহযোগীকে আটক করেছে পুলিশ। এই ভয়াবহ হত্যার ঘটনাগুলো ঘটেছে ভারতের কেরলা রাজ্যের কোঝিকোদে জেলায়।
ঘটনার শুরু আজ থেকে ১৭ বছর আগে। ২০০২ সালের একদিন হঠাৎ করেই মারা যান ৫৭ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা আনাম্মা থমাস। এটাকে স্বাভাবিক মৃত্যু ভেবেছিলো পরিবারের সবাই। এর ছয় বছর পর একইভাবে খাওয়ার পর হঠাৎ করেই মারা যান তার স্বামী টম থমাস (৬৬)। ২০১১ সালে মারা যান তাদের ছেলে ও জলির স্বামী রয় থমাস (৪০)।
স্বামী রয় থমাস যখন মারা যান তখন বাড়িতে ছিলেন না জলি। নাস্তা খাওয়ার পর বমি করতে শুরু করেন রয়। বাড়ির লোকজন তাকে দ্রæত হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং সেখানেই তিনি মারা যান। তার মৃত্যুও হৃদরোগ জনিত কারণে হয়েছে বলে সবাইকে জানায় জলি। এর তিন বছর পর মারা যান আনাম্মার ভাই ও জলির মামা শ্বশুর ম্যাথু মানজাদিয়েল (৬৭)।
এরপর জলির নজর পড়ে রয়ের চাচাত ভাই স্কুলশিক্ষক সাজুর দিকে। তাকে নিজের করে পাওয়ার ইচ্ছা থেকেই একই কায়দায় বিষ প্রয়োগে হত্যা করেন সাজুর স্ত্রী ও সন্তানকে।
২০১৬ সালের প্রথমে দিকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয় সাজুর দুই বছরের মেয়ে আলফিনকে। সকালে নাস্তা করতে করতে অজ্ঞান হয়ে যায় শিশুটি। পরে হাসপাতালে নেয়ার পথেই মারা যায়। এর কয়েক মাসের মাথায় মারা যান ওই শিশুর মা এবং সাজুর স্ত্রী ২৭ বছরের সিলি।
এই মর্মান্তিক মৃত্যুর পর ২০১৭ সালে বিধবা বিপতœীক সাজুর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন দুই সন্তানের মা জলি। স্কুলশিক্ষক সাজুর সঙ্গে রয় টমাসের বিধবা পতœীর এই বিয়েকে কেউ খারাপ চোখে দেখেনি। বরং পরিবারের ছয় সদস্যের মৃত্যুর মতই বিয়েটাকেও স্বাভাবিক ঘটনা বলেই ধরে নিয়েছিলো তারা।
কিন্তু কয়েক বছরের ব্যবধানে পরিবারের এতগুলো মৃত্যুকে স্বাভাবিক ভাবতে রাজি ছিলেন না রয়ের ছোট ভাই রোজি। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী রোজি ২০১১ সালে তার বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পরই সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি এ ঘটনায় পুলিশি তদন্ত শুরু করার দাবি জানান। কিন্তু পুলিশ তদন্ত শুরু করে মাত্র দু’মাস আগে।
গত জুলাইয়ে তদন্তে নেমে পুলিশ প্রথমেই পারিবারিক গোরস্থান (সিমেট্রি) থেকে রয় থমাসের মরদেহ উত্তেলন করে। ময়না তদন্তের পর তার দেহে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ সায়ানাইড খুঁজে পাওয়া যায়। এরপর গত শুক্রবার পারিবারিক কবরস্থান থেকে বাকি পাাঁচজনের মরদেহ উত্তোলন করে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। তাদের সবার দেহে পাওয়া গেছে ওই বিষের অস্তিত্ব।
এরপর শনিবার গ্রেপ্তার করা হয় ওই খ্রিস্টান পরিবারের পুত্রবধূ জলি ও তার দুই সহযোগীকে। ধরা পরার পর ওই ছয়জনকে হত্যার কথা স্বীকার করেন জোলি। তিনি পুলিশকে জানান, সম্পত্তির লোভে পরেই তিনি এসব হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন।
তিনি জানান, অর্থসহ গোটা পরিবারের কর্তৃত্ব ছিলো তার শাশুড়ি আনাম্মা থমাসের হাতে। এজন্য প্রথমেই শাশুড়িকে হত্যা করেন জলি। এরপর শ্বশুর সন্তানদের মধ্যে সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারা করে দেন। কিন্তু সেটা পছন্দ হয়নি পুত্রবধূ জলির। কেননা তিনি গোটা সম্পত্তির দখল নিতে চেয়েছিলেন। এজন্য তিনি বিষ খাইয়ে শ্বশুর টম থমাসকে হত্যা করেন। কিন্তু বাবার মৃত্যুর ঘটনাটি নিয়ে বাড়াবাড়ি শুরু করেছিলেন জলির স্বামী রয়। তিনি বাবা টম থমাসের মৃত্যুর কারণ জানতে ময়না তদন্ত করাতে চেয়েছিলেন। আর এ কারণেই বিষ খাইয়ে পথের কাঁটা স্বামীকে শেষ করে দেন ডাইনি জলি।
এরপর তার নজর পরে রয়ের চাচাতো ভাই সাজুর দিকে। তাকে বিয়ে করার জন্যই ২০১৬ সালে তার স্ত্রী ও দু বছরের কন্যাকে খুন করেন ওই নারী।
পুলিশ বলছে, এসব হত্যার সঙ্গে তার দ্বিতীয় স্বামী সাজুর কোনো সম্পর্ক নেই। বেচারী জানতেনই না, তার স্ত্রী আর মেয়েকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে তার বর্তমান স্ত্রী জলি।
এসব হত্যাকান্ডে জলিকে সহায়তা করেছে এম এফ ম্যাথু এবং প্রেজি কুমার নামে তার দুই বন্ধু। ওই দুজনই জুয়েলারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আর তারাই জোলিকে সায়ানাইড সরবরাহ করেছিলেন যা দিয়ে ছয়জনকে হত্যা করেছেন জোলি।
প্রসঙ্গত, জুয়েলারি ব্যবসায় এই রাসায়নিক উপদানটি ব্যবহৃত হয়। আর এই বিষে কাউকে হত্যা করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে মৃতের শরীরে কোনো বিষক্রিয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায় না। তবে ময়না তদন্তে ধরা পড়ে। এজন্যই নিজের পথের কাঁটা সরাতে এই বিষের সাহায্য নিয়েছিলেন জলি।
আর ধরা না পরলে আরো একজনকে হত্যা করতেন জোলি। তার পরবর্তী নিশানায় ছিলেন তার একমাত্র ননদ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।