মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের অস্ত্রবিরতির প্রস্তাবে সউদী আরব ‘ইতিবাচক’ বলে জানিয়েছেন দেশটির সহকারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তিনি টুইটারে প্রকাশ্যেই এই বক্তব্য দিয়েছেন। এছাড়া বার্তা সংস্থা রয়টার্স কয়েকটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, সউদী আরব ওই অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব বিবেচনা করছে। উভয় পক্ষ এতে সম্মত হলেও ইয়েমেনের বিপর্যয়কর যুদ্ধ বন্ধে জাতিসংঘের প্রচেষ্টা সফল হতে পারে।
খবরে বলা হয়, দুই সপ্তাহ আগে সউদী আরবে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা বন্ধ করার প্রতিশ্রæতি দেয় হুতিরা। বিনিময়ে তারা ইয়েমেনে পশ্চিমা-সমর্থিত সউদী-নেতৃত্বাধীন জোটের হামলা বন্ধের ডাক দেয়। তবে তৎক্ষণাৎ ওই প্রস্তাব গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করেনি সউদী আরব। এই সপ্তাহে এসে রিয়াদ ওই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে।
তিনটি কূটনৈতিক ও দুইটি ভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, রিয়াদ ওই প্রস্তাব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে।
প্রায় সাড়ে ৪ বছর ধরে চলা এই যুদ্ধকে বিশ্বের সবচেয়ে বিপর্যয়কর মানবিক সংকট হিসেবে আখ্যা দিয়েছে জাতিসংঘ। আগে থেকেই আরব অঞ্চলের সবচেয়ে দরিদ্র রাষ্ট্র ছিল ইয়েমেন। সেখানে এরকম ভয়াবহ যুদ্ধের ফলে দেশটি এখন দুর্ভিক্ষ কবলিত। তবে সউদী আরবের পশ্চিমা মিত্ররা এই যুদ্ধে ইতি টানতে অনেকদিন ধরেই চাপ দিয়ে আসছিল। যদিও তারাই সউদী আরবকে অস্ত্র ও গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করছিল। এই যুদ্ধে নিহত হয়েছে প্রায় লাখো মানুষ।
দুইটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে হুতি নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে সউদী বিমান হামলা ব্যাপকভাবে কমে গেছে। এছাড়া দুই পক্ষের মধ্যে ঐক্যমতে পৌঁছানোর মতো পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছে।
সউদী সহকারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী সম্প্রতি টুইটারে লিখেছেন, ‘সউদী প্রস্তাব আরও গুরুতর ও সক্রিয় রাজনৈতিক আলোচনার ক্ষেত্রে ইতিবাচক পদক্ষেপ। আজ আমরা ইয়েমেন সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের সকল উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। আমরা চাই দেরির বদলে তাড়াতাড়িই এই সমাধান হোক।’ তার আগে খোদ দেশটির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানই বলেছিলেন যে, তার দেশ এই সংকট সুরাহা করতে চায়।
প্রসঙ্গত, জুলাইয়ে সউদী নেতৃত্বাধীন জোটের অন্যতম বৃহৎ অংশীদার সংযুক্ত আরব আমরাত ইয়েমেনে নিজেদের উপস্থিতি হ্রাসের কথা জানায়। ইয়েমেনে স্থলবাহিনীর মধ্যে আরব আমিরাতের সৈন্যরাই ছিল সবচেয়ে বেশি।
ওই সময় অবশ্য যুদ্ধে ইতি টানতে চলমান কূটনৈতিক ও সামরিক প্রচেষ্টায় কোনো অগ্রগতি হচ্ছিল না। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা আরব আমিরাতের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। রিয়াদ অবশ্য তখন জানিয়েছিল যে, হুতিদের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত থাকবে। কিন্তু দুই মাস পর স্থলযুদ্ধে নিজেদের প্রধান সহযোগীকে হারিয়ে রিয়াদ দৃশ্যত যুদ্ধ ব্যতিত অন্য যেকোনো বিকল্পের প্রতি ইতিবাচক হয়ে উঠেছে।
আঞ্চলিক একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সউদীরা হুতিদের প্রস্তাব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। পশ্চিমা কূটনীতিকরাও এই প্রস্তাবকে ব্যবহার করে রিয়াদকে যুদ্ধ থেকে ফেরত আসতে চাপ দিচ্ছেন। অপরদিকে হুতিদের একজন জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হুতি রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান মাহদি আল-মাশাতের সঙ্গে একজন তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছে সউদী আরব। তবে এখনই কোনো চুক্তিতে উপনীত হওয়া যায়নি।
খবরে বলা হয়, বিদ্যমান প্রস্তাবনায় কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে আংশিক অস্ত্রবিরতির কথা আছে। কিন্তু হুতি কর্মকর্তারা বলছেন, আংশিক চুক্তি অগ্রহণযোগ্য। হুতি তথ্যমন্ত্রী বলছেন, ‘যা প্রয়োজন তা হলো, ইয়েমেনজুড়ে বিমান হামলার অবসান এবং ইয়েমেনি জনগণের বিরুদ্ধে আরোপকৃত অবরোধ প্রত্যাহার।’ এদিকে এক ইউরোপিয়ান কূটনীতিক জানান, ‘(সউদী ক্রাউন প্রিন্স) চান ইয়েমেন থেকে বের হয়ে যেতে। সুতরাং, আমাদের একটি উপায় খুঁজে বের করতে হবে যেন কিছুটা মর্যাদা নিয়ে তিনি ইয়েমেন থেকে বের হতে পারেন।’
আরেকজন কূটনীতিক বলেছেন, সউদী আরব যদি বিমান হামলা বন্ধে সম্মত হয়, তার মানেই হলো যুদ্ধ শেষ। কেননা, সউদী আরবের স্থল সক্ষমতা অত বেশি নয়। এছাড়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও রিয়াদকে হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে আলোচনায় যেতে উৎসাহিত করছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ৫ স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্র সহ ৮টি দেশ গত সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে বৈঠকে বসে। সেখানে তারা এ বিষয়ে একমত হন যে, হুতিদের প্রস্তাব সংঘাত নিরসনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এক প্রথম পদক্ষেপ। যুদ্ধক্ষেত্রেও তা ইতিবাচকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে হুতিদের, পাশাপাশি সংযম দেখাতে হবে জোট বাহিনীর।
হুতি বাহিনী প্রস্তাবের পাশাপাশি হুমকি দিয়েছে যে, যদি তাদের শান্তি উদ্যোগ প্রত্যাখ্যান করা হয়, তাহলে আরও আন্তঃসীমান্ত হামলা চালানো হতে পারে। তাদের রাজনৈতিক প্রধান আল মাশাত গত মাসে সউদী তেল স্থাপনায় হামলার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘শান্তির প্রয়োজনে আমরা অনেক কৌশলগত হামলা স্থগিত রেখেছি, যা ওই হামলার চেয়ে আকারে বা গুরুত্বের দিক থেকে কম নয়।’
এদিকে আঞ্চলিক একজন কর্মকর্তা জানান, ‘হুতিদের প্রস্তাবের প্রতি সউদীরা খুবই ইতিবাচক। তারা একে ব্যবহার করে এই বিষয়টি প্রমাণ করতে চায় যে, ইরান এখানে সমস্যা, হুতিরা নয়।’ তবে ইরান অবশ্য হুতিদের অস্ত্র সরবরাহের কথা অস্বীকার করে। তবে ইরান স্বীকার করে যে, হুতিদের পরামর্শ দেয় দেশটি। ইরানের সামরিক বাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাকেরি সম্প্রতি বলেছেন, ‘জোট বাহিনীর আগ্রাসন থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পাওয়ার আগ পর্যন্ত ইরান ইয়েমেনি জনগণের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত থাকবে।’
খবরে বলা হয়, ইয়েমেন যুদ্ধ মূলত স্থানীয় বিভিন্ন দ্ব›দ্ব থেকে শুরু হলেও, একে এখন দেখা হচ্ছে ইরান ও সউদী আরবের মধ্যে প্রক্সি লড়াই হিসেবে। ইয়েমেনে যুদ্ধ শুরু করার ক্ষেত্রে সউদী আরবের বড় একটি উদ্দেশ্য ছিল, শত্রুভাবাপন্ন ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হুতিদের নিজের সীমান্তে ঘেঁষতে না দেওয়া। রিয়াদ এই সপ্তাহেই দু’ বার জানিয়েছে যে, তারা চায় হুতিরা যেন ইরানের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখে। মোহাম্মদ বিন সালমান সম্প্রতি বলেছেন যে, ‘যদি ইরান হুতি মিলিশিয়াদের সমর্থন দেওয়া বন্ধ করে, তাহলে রাজনৈতিক সমাধান অনেক সহজ হয়ে যাবে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।