Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কাশ্মীরের ভবিষ্যত অনেকটাই বিবর্ণ

ভারতবিরোধী প্রতিরোধের নতুন কাহিনী

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

সৈন্যরা বিপুল সংখ্যায় আপেল বাগানগুলোর পাশের রাস্তাগুলোতে নেমে আসে। গ্রামে তারা তরুণদের গ্রেফতার করে, প্রহার করে, অন্যদের কিছুই করা হয় না, তবে ভীত হয়। বস্তুত, এটাই হলো এই কাজের উদ্দেশ্য।
কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করার পর উপত্যকাটি আতঙ্কে রয়েছে। ৪ আগস্ট থেকে দুই হাজারের বেশি কাশ্মীরীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাতের বেলায় গুম হওয়া পুত্রদের কোনো খবর পাওয়া যায় কিনা জানার জন্য মা-বাবারা জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের থানাগুলোর বাইরে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে।

উপত্যকা শান্ত, তবে তা ভ্রান্তিমূলক। গণবিক্ষোভ আয়োজন ঠেকাতে ভারত সরকার এলাকাটির প্রতিটি কোনে শক্তি বাড়ানোর জন্য হাজার হাজার সৈন্যকে উড়িয়ে এনেছে, শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদদের গ্রেফতার করেছে, ফোন ও ইন্টারনেট যোগাযোগ কেটে দিয়েছে।
বিক্ষোভের একটি দ্বীপ হলো শ্রীনগরের আবাসিক এলাকা অঞ্চর। অধিবাসীরা ট্রেঞ্চ খুঁড়েছে, প্রবেশপথগুলো বন্ধ করে দিয়েছে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর গ্রেফতার অভিযান প্রতিহত করার জন্য এলাকাটিকে ভাগ ভাগ হয়ে পাহারা দিচ্ছে। রাজনীতি বিজ্ঞানের ছাত্র আহমদ বলেন, প্রায়ই সংঘর্ষ হচ্ছে। (নিরাপত্তাগত প্রয়োজনে এই প্রতিবদনে থাকা আহমদের মতো অনেক নাম বদলে দেয়া হয়েছে।) তিনি জানান, সৈন্যরা নিক্ষেপ করে টিয়ার শেল, পেলেট, ছেলেরা ছোঁড়ে পাথর। সৈন্যরা যাতে আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করতে না পারে, তারা কেবল সে কাজটুকুই করে। তিনি কয়েকটি হলুদ তেরপলিন দেখিয়ে বললেন, ওগুলো হলো তাদের পাহারা চৌকি। এগুলো থেকে তারা সৈন্যদের টহল দলের ওপর নজরদারি করে, প্রয়োজনে প্রতিবেশীদের সতর্ক করে দেয়।

শ্রীনগরের অন্যান্য স্থানেও কাশ্মীরীরা ভারতের আগ্রাসন প্রতিরোধ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তারা নিজস্ব পন্থায় প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে। কাশ্মীরীরা তাদের দোকানপান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখছে। কেবল ওষুধের দোকান ও কয়েকটি মুদি দোকান খোলা আছে। কাশ্মীরীরা একে ‘নীরব প্রতিবাদ’ হিসেবে অভিহিত করেছে।

পুলওয়ামা জেলার মোরানের দোকানকার মোহাম্মদ আলতাফ বলেন, সেনাবাহিনী আমাদেরকে বলছে দোকান খুলতে। কিন্তু আমরা খুলব না, এটিই আমাদের প্রতিবাদ। আমরা চাই, বিশ্ব আমাদের প্রতিবাদ দেখুক, আমাদের সহায়তা করুক।
সোফিয়ানের ৭০ বছর বয়স্ক আপেলচাষি আহমাদ বলেন, তিনি প্রতিবাদ জানাতে বাগানেই আপেল পচাবেন। তিনি বলেন, কাশ্মীরে ভালো কিছুই হয়নি, কিছুই স্বাভাবিক নয়।

এই অঞ্চলের অর্থনীতির প্রধান উপাদান আপেল। বেশির ভাগ চাষির জীবিকাও এটি। কিন্তু এই মওসুমে অনেক চাষিই আপেল তুলে বিক্রি করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে। ফলে উপত্যকাজুড়ে আপেল বাগানেই পচতে দেখা যাচ্ছে। এটা দিল্লির জন্য দুঃস্বপ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে। নজিরবিহীন পদক্ষেপ হিসেবে সরকার এখন হুমকি দিয়েছে, তারা নিজেরাই আপেল তুলবে।
সরকার বলছে, অর্থনৈতিক বয়কট স্বেচ্ছায় হচ্ছে না, বিচ্ছিন্নতাবাদী ও ইসলামি জঙ্গিদের হুমকির মুখে তারা এটা করছে। ভারত-শাসিত জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যসচিব রোহিত কানসাল বলেন, আমরা খবর পাচ্ছি যে জঙ্গিরা আশপাশে রয়েছে, তারাই স্বাভাবিক কাজকর্ম না করতে লোকজনকে বাধ্য করছে।

ভারতীয় কর্মকর্তারা শ্রান্ত হওয়ার অপেক্ষায় আছে। তারা মনে করছে, একপর্যায়ে লোকজনের প্রতিরোধের ইচ্ছা শেষ হয়ে যাবে, তখন বিরোধিতার অবসান ঘটবে। তবে ভারত সরকার না প্রতিবাদরত কাশ্মীরী জনতা – কাদের শক্তি দীর্ঘস্থায়ী হবে তা এখনো পরিষ্কার নয়।
ভারতীয় সূত্রগুলো বলছে, সঙ্ঘাত হলে যাতে হতাহতের সংখ্যা কম থাকে সেজন্যই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার কৌশল গ্রহণ করেছে ভারত সরকার। তারা আশঙ্কা করছে, এমনকি তুলনামূলক শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদও সহিংস রূপ নিতে পারে। কোনো বিক্ষোভ না হলে, কোনো হত্যাও ঘটবে না। ২০১০ ও ২০১৬ সালে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি হত্যাকাÐ ঘটে। এবার তাই শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি যোগাযোগব্যবস্থাও অচল করে দেয়া হয়েছে।
এতে হয়তো কাজ হয়েছে। কিন্তু এই ব্যবস্থার ফলে বিরোধপূর্ণ অঞ্চলটিতে সরকার কোনো বন্ধু পায়নি, বরং জঙ্গিবাদের দিকে ঝোঁক সম্ভবত বেড়েছে।

গত ৬ আগস্ট রাতে ভারতীয় সৈন্যরা ফয়সালের বাসায় এসেছিল, তখন সে ঘুমিয়ে ছিল। তারা তাকে তাদের হাতে তুলে দিতে তার মা-বাবাকে নির্দেশ দেয়। ১৬ বছর বয়স্ক ১০ম গ্রেডের ছাত্র ফয়সাল জানান, সৈন্যরা আমাকে বলে, তুমি যদি সত্য কথা বলো, কারা কারা পাথর নিক্ষেপ করেছে তা জানাও, তবে তোমাকে ১০টি বেত্রাঘাত করব। আর না করলে, ৫০। ফয়সাল জানান, তিনি এবারে কোনো বিক্ষোভেই অংশ নেননি। তবে ২০১৬ সালে নিয়েছিলেন। এরপর থেকে কর্তৃপক্ষ তাকে নজরদারিতে রেখেছে।

তিনি বলেন, তারা আমাকে লাঠি, ক্যাবল দিয়ে পিটিয়েছে, আমার মুখে কাদা ভরে দিয়েছে, যাতে আমি কাঁদতে না পারি।
মুখে কাদা সত্তে¡ও ২০০ গজ দূরে সৈন্যরা যখন তাকে পেটাচ্ছিল, তখন তার মা-বাবা তার আর্তনাদ ঠিকই শুনতে পেয়েছিল। ওই রাতে ফয়সালদের গ্রামে আটজনকে পেটানো হয়েছিল।

ফয়সালের প্রতিবেশী ২২ বছর বয়স্ক মুজাম্মিলকে উলঙ্গ করে নির্মমভাবে পেটানো হয়েছিল। কাশ্মীরীরা আশঙ্কা করছে, এই নির্যাতনের ফলে জঙ্গিবাদের দিকে আবার ঝুঁকবে এখানকার মানুষ।
ভারত সরকার এখন পর্যন্ত লড়াইয়ে জিতেছে, কিন্তু যুদ্ধে জেতেনি। কাশ্মীরে আত্ম-বিধ্বংসী মনোভাব বিরাজ করছে। সবুজ পাহাড়, মনোরম উদ্যান আর লেকের জন্য কাশ্মীরকে ভ‚স্বর্গ বিবেচনা করা হয়। কিন্তু এখন এই অঞ্চলের ভবিষ্যত অনেকটাই বিবর্ণ মনে হচ্ছে। সূত্র : এসএএম।

 

 



 

Show all comments
  • jack ali ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১১:৫০ এএম says : 0
    All these barbaric torture by the kafir due to our so called muslim leader around the world as such kafirs are united and they don't care about killing/raping our muslim brothers/sisters around the world...
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ