Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

কলকাতায় এনআরসি আতঙ্ক থামছে না

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৪:১৩ পিএম

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা। কলকাতা পুরসভার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে থিকথিক করছে ভিড়। পা ফেলার জায়গা নেই! লম্বা লাইনে ৫ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে মেয়ে হিনা খাতুনের সঙ্গে দাঁড়িয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাবিনা বিবি। ৭ বছরের ছেলের জন্মের সনদপত্র হাতে পেতে এত কসরত। ওই লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে তপসিয়ার নিতাই ভট্টাচার্যও। তিনিও ছেলের জন্মের সনদপত্রের জন্য সব কাজ ছেড়ে ছুটে এসেছেন পুরসভায়। শুধু সাবিনা বা নিতাই নন, রাজ্যের শত শত মানুষ দরকারি নথিপত্রের জন্য বিভিন্ন সরকারি দফতরে ছোটাছুটি করছেন। কেন? ‘এনআরসি আতঙ্ক’! হ্যাঁ, এনআরসির আতঙ্কে পশ্চিম বাংলার বহু মানুষের কার্যত দিশেহারা অবস্থা।

‘কলকাতায় কোনওভাবেই এনআরসি করা হবে না’, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই অভয়বাণী সত্ত্বেও একরাশ আতঙ্ক গ্রাস করেছে বঙ্গবাসীর মনে। উল্লেখ্য, গত ৩১ অগাস্ট আসামে এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পরই কলকাতায় এনআরসি করতে উঠেপড়ে লেগেছে পদ্মবাহিনী। ক’দিন আগে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয় বলেছেন, ‘কলকাতায় এনআরসি করা হবেই’।

শুধু কলকাতাতেই নয়, রাজ্যের বিভিন্ন জেলাতেও সেই আতঙ্কের চেহারা সামনে এসেছে। মালদা, মুর্শিদাবাদ, দুই দিনাজপুর, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, দুই ২৪ পরগনায় এনআরসি আতঙ্ক মাথাচাড়া দিয়েছে। গত এক মাস ধরে বাংলার অলিগলিতে এনআরসি আতঙ্কে গ্রাস করেছে। এনআরসি-র ব্যাপারে সতর্ক করতে লিফলেট বিলি করছে মুসলিম সংগঠনগুলো। পাশাপাশি সেমিনার করে প্রয়োজনীয় নথি আদায়ের পরামর্শও দিচ্ছে তারা। জামাত-এ-ইসলামি হিন্দের প্রাক্তন সভাপতি মহম্মদ নুরুমুদ্দিন বলেন, ‘কলকাতায় যে কোনও সময় এনআরসি করতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার। আমরা মুসলিম, দলিতদের বলেছি, যাতে তাঁদের প্রয়োজনীয় নথি নির্ভুল থাকে। জন্ম, মৃত্যুর শংসাপত্র সংগ্রহ করার পরামর্শ দিয়েছি। ভোটার কার্ডে নাম না থাকলে নাম তোলার কথা বলেছি’’। মহম্মদ জিশান নামে এক স্কুল পড়ুয়ার কথায়, ‘‘আমার জন্মের সনদপত্রে নামের বানান ভুল রয়েছে। এনআরসি করার আগেই আমায় সংশোধন করাতে হবে’’।

এ প্রসঙ্গে কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ বলেন, ‘রোজ আড়াইশোরও বেশি মানুষ জন্মের সনদপত্র, মৃত্যুর সনদপত্র, নথি সংশোধনের জন্য পুরসভায় ভিড় জমাচ্ছেন। কিন্তু আমাদের যা পরিকাঠামো, তাতে রোজ ১০০ জনের আবেদন ছাড়া বাকিদের দেখা সম্ভব নয়। এনআরসি আতঙ্কেই সকলে পুরসভায় এসে ভিড় জমাচ্ছেন এনআরসি করা হবে বলে যে গুজব ছড়িয়েছে তা পুরো ভিত্তিহীন। মুখ্যমন্ত্রী প্রায়ই বলছেন যে আতঙ্কিত হবেন না’।

এদিকে, ‘এনআরসি আতঙ্কে’ ইতিমধ্যেই রাজ্যে কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনা সামনে এসেছে। এনআরসি গুজব রুখতে ইতিমধ্যেই প্রচার শুরু করেছে মমতা সরকার। দরজায় দরজায় গিয়ে মানুষকে সচেতন করতে জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ