Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নবম ওয়েজবোর্ড ও সংবাপদপত্র শিল্পের সঙ্কট

| প্রকাশের সময় : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা, দাবিদাওয়া এবং আইনগত প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে অবশেষে সংবাদপত্র শিল্পের জন্য নবম বেতনবোর্ড রোয়েদাদের গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। এই গেজেট নোটিফিকেশন প্রকাশিত হওয়ার পর বেতন বোর্ডের অসঙ্গতিগুলো আলোচনায় উঠে এসেছে। সাংবাদিক সমাজ, গণমাধ্যম কর্মী এবং সংবাদপত্র মালিকপক্ষ কেউই এই বেতনবোর্ডের নীতিমালা ও নির্দেশনায় সন্তুষ্ট নয়। গেজেট প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই দেশের সাংবাদিক ইউনিয়নগুলোর পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের গ্রাচুইটি, ভ্যাট পরিশোধসহ বেশকিছু অসঙ্গতিরও বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। এমনকি এসব অসঙ্গতি দূর করে নতুন সংশোধিত গেজেট প্রকাশ না করা পর্যন্ত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াবের পক্ষ থেকে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রকাশিত গেজেট অনুসারে সংবাদপত্র শিল্পে সমতা ও ভারসাম্যের নীতি অগ্রাহ্য করা হয়েছে। অর্থাৎ ঘোষিত নবম ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদে সাংবাদিক ও সংবাদপত্র মালিক কেউই খুশি নন। সর্বোপরি এই রোয়েদাদ সংবাদপত্র শিল্পের সামগ্রিক সুস্বাস্থ্য, সুরক্ষা এবং ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় অনুপযুক্ত, অক্ষম। সরকারের রুলস অব বিজনেস হিসেবে শ্রম মন্ত্রনালয়ের ওয়েজবোর্ড কার্যক্রম পরিচালনার কথা থাকলেও এবারের ওয়েজবোর্ড কার্যক্রম পরিচালনা করেছে তথ্য মন্ত্রনালয়। ঘোষিত প্রজ্ঞাপণের অসঙ্গতি ও ভ্রান্তির পেছনে সংবাদপত্র মালিক, সাংবাদিক এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর মধ্যে এক প্রকার সমন্বয়হীনতার ছাপ স্পষ্ট। এসব অসঙ্গতি ও সমন্বয়হীনতা দূর করে যথাশীঘ্র একটি যৌক্তিক বেতন কাঠামোর সংশোধিত গেজেট প্রকাশে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

দেশ এখন নানাবিধ সামাজিক-রাজনৈতিক সংকটে নিপতিত। সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রত্যাশিত বিকাশ, সহাবস্থানমূলক বহুদলীয় গণতন্ত্রের চর্চা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। সরকার ও জনগনের মধ্যে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করার ক্ষেত্রে সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের বিশেষ ভ’মিকা রয়েছে। প্রতিটি সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকটে দেশের সংবাদপত্র ও গণমাধ্যম রাজনৈতিক দল ও জনমতের পরিপুরক হিসেবে ভূমিকা রেখে এসেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধ শিশু ও নারী নির্যাতন, মাদক বিরোধি অভিযান সমর্থনসহ দুর্নীতি ও ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্যোগের সাথে দেশের গণমাধ্যম গণমানুষের কণ্ঠস্বরের ভ’মিকা পালন করেছে। কিছু প্রতিবন্ধকতা এবং সীমাবদ্ধতা সত্তে¡ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের ভুলত্রæটি ও অস্বচ্ছতা সম্পর্কেও সাধারণ মানুষের মনোভাব ও মতামত তুলে ধরতে সচেষ্ট রয়েছে। এটাই হচ্ছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক সমাজের সৌন্দর্য। রাষ্ট্র দলীয় ক্ষমতার চেয়ে অনেক বড় বিষয়। রাষ্ট্রের মূল শক্তির উৎস হচ্ছে মানুষ। আর সংবাদপত্র দলমত নির্বিশেষ মানুষ এবং রাষ্ট্রের স্বার্থে কথা বলে বলেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় তা রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃত। রাষ্ট্রের অন্যান্য স্তম্ভগুলোর প্রতি সরকারের যেমন দায়-দায়িত্ব রয়েছে, ঠিক একইভাবে সাংবাদিক সমাজ ও সংবাদপত্র শিল্পের স্বাধীন অস্তিত্ব রক্ষায় সরকারকে যথাযথ ভ’মিকা পালন করতে হবে।

সংবাদপত্র শিল্পে ভারসাম্যহীনতা ও এবং অস্তিত্বের সংকট দেখা দিলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। সংবাদপত্র শিল্পের সাথে জড়িয়ে আছে হাজার হাজার সাংবাদিকের রুটি-রুজির স্বার্থ এবং সংবাদপত্র মালিকদের কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ। কিছু বৃহদাকার কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন সংবাদপত্রের কথা বাদ দিলে দেশের মূল ধারার প্রায় সব সংবাদপত্র এখন অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে। বেতন বোর্ড রোয়েদাদ হলেও তার বাস্তবায়ন যথাযথভাবে হয় না। এর খেসারত দিতে হয় সাংবাদকর্মীদের। অন্যদিকে সংবাদপত্র শিল্পের প্রতি রাষ্ট্রের দায়দায়িত্ব হিসেবে যে সব সুযোগ সুবিধা এই শিল্পের প্রাপ্য তা যথাযথভাবে না পাওয়ার কারণে মূল ধারার সংবাদপত্রের মালিকরা অস্বাভাবিক চাপের মধ্যে থাকেন। সাংবাদপত্রের সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে সাংবাদিকের সংখ্যাও। তার ধারবাহিকতায় সরকারী বিজ্ঞাপণের পরিমান এবং মূল্য বাড়ছে না। বিজ্ঞাপণের প্রাপ্যতার ক্ষেত্রে ভারসাম্যহীনতার কারণে একশ্রেণীর আন্ডার গ্রাউন্ড ও নামমাত্র প্রচারসংখ্যার সংবাদপত্রও যথেষ্ট পরিমান বিজ্ঞাপণ বাগিয়ে নিচ্ছে। পক্ষান্তরে অনেক জনবল নিয়ে অস্তিত্বের সংকটে থাকা বড় সংবাদপত্র হাউজগুলো টিকে থাকার মত আর্থিক সংস্থান নিশ্চিত করতে না পারায় নানাবিধ সংকটে ভুগছে। সাংবাদিকের কাজের ঝুঁকি, চাকরীর নিরাপত্তা এবং বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা ছাড়া সংবাদপত্র শিল্পের ওয়েজবোর্ড একটি কাগুজে ব্যাপার মাত্র। সম্প্রতি হাইকোর্ট বলেছে, সাংবাদিক ছাড়া সংবাদপত্রশিল্প অস্তিত্বহীন। সংবাদপত্র শিল্পের সামগ্রিক স্বার্থ ও নিরাপত্তার প্রতি লক্ষ্য রেখেই সকল পক্ষের স্বার্থ ও মতামতের ভিত্তিতে নবম ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদের প্রয়োজনীয় সংশোধন ও বাস্তবায়ন জরুরী। এ ক্ষেত্রে কালক্ষেপণ না করে সব পক্ষ এগিয়ে আসবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নবম ওয়েজবোর্ড


আরও
আরও পড়ুন