পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘ক্যাসিনো’ এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। ক্যাসিনো বন্ধে অভিযান শুরু করার পর ‘কেঁচো খুঁড়তে সাপ’ বেরিয়ে আসার ঘটনার মতোই আওয়ামী লীগের অনেক রথি-মহারথির নাম বেরিয়ে আসছে। দলটির অনেকেই ‘ক্যাসিনো খেলা’ বিরোধী বক্তব্য দিলেও তাদের নাম ওই বিদেশী জুয়া খেলায় জড়িয়ে গেছে। তারা নিয়মিত ক্যাসিনো খেলে থাকেন। ক্যাসিনো-বিরোধী অভিযানের পর গোয়েন্দারা সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা যে ভিডিও প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দিয়েছেন, তাতে অনেক নেতাকে ক্যাসিনো খেলার দৃশ্যে দেখা যাচ্ছে। মূল দল ছাড়াও কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগের নেতাদের ক্যাসিনোতে নিয়মিত যাতায়াতের ধারণকৃত তথ্য ওই ভিডিওতে রয়েছে। ক্যাসিনোর পাশাপাশি কেউ কেউ মাদক ব্যবসা এমনকি দেহ ব্যবসার মতো ঘৃণিত কর্মে জড়িত থাকার প্রমাণাদিও প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেয়া হয়েছে। চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে আওয়ামী লীগের বিতর্কিত ও দুর্নীতিবাজ নেতাদের নানা অপকর্ম বেরিয়ে আসছে। টানা গত ১০ বছর দল ক্ষমতায় থাকায় কেন্দ্র থেকে তৃণমূল দুর্নীতিবাজদের অপকর্ম যেন পাহাড় সমান হয়ে গেছে। ক্যাসিনো খেলায় জড়িতদের ভিডিওতে দেখা যায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দুইজন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান ক্যাসিনোতে যেতেন। রাজধানীর পৃথক দু’টি ক্যাসিনোতে তাদের নিয়মিত যাতায়াত ছিল এবং অভিযান শুরুর কয়েক দিন আগেও তারা ক্যাসিনো খেলেছেন। যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এসব ভিডিও প্রমাণ জমা দেয়া হয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
গোয়েন্দা সংস্থা সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমন্ডলী ও কার্যনির্বাহী কমিটির সাতজন সদস্য, যুবলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরের শীর্ষ অনেক নেতা; ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, ছাত্রলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির অনেক নেতা ক্যাসিনো খেলতেন বলেও প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাউসারসহ কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন নেতা, মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশিষ বিশ্বাস, মহানগর উত্তরের সভাপতি মোবাশ্বের চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ফরিদুর রহমান ইরান, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগের নেত্রী, থানা আওয়ামী লীগের নেতাদের নানা অপকর্মের তথ্য বিস্তারিত প্রমাণসহ প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেয়া হয়েছে। ক্যাসিনোর পাশাপাশি কারা কারা দেহ ব্যবসা, মাদকের সঙ্গে জড়িত সেই তথ্যও প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেয়া হয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র আরো জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানানো হয়েছে, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান নিয়মিত ক্যাসিনোতে যেতেন। আরেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক নিজে ক্যাসিনোতে যেতেন, পাশাপাশি এ ব্যবসায় ইন্ধনও দিতেন। নানকের আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ঢাকা উত্তর যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তারেকুজ্জামান রাজীব ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরে একাধিক ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কাছে। এর মধ্যেই সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এবং ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট এবং তাদের স্ত্রীদের ব্যাংক হিসেবে জব্দ করা হয়েছে। তাদের বিদেশে যাওয়াও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন রতনের বিরুদ্ধে কাকরাইল, বিজয়নগর, পল্টন এ অঞ্চলের ক্যাসিনো তার নিয়ন্ত্রণে চলতো। তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আরো অভিযোগ দেয়া হয় তার নাম ভাঙিয়ে বিদ্যুৎ ভবনে বড় বড় কাজ ভাগিয়ে নেয়া। এছাড়াও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের কাছের লোক হিসেবে পরিচয় এই রতন সিটি করপোরেশনের কাজও নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। সব কাজের বড় একটা কমিশন তিনি নেন। আর ‘ক্যাসিনো সাঈদ’ হিসেবে পরিচিত ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদের বিরুদ্ধে সিটি মেয়র সাঈদ খোকন নিজে মন্ত্রণালয়ে ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগ করেছেন বলে গত সোমবার জানিয়েছেন। কিন্তু মন্ত্রণালয় কাউন্সিলর সাঈদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি। ক্যাসিনো সাঈদ অবশ্য অভিযান শুরুর খবর পেয়েই বিদেশে পালিয়ে গেছেন।
এদিকে যুবলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা, সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী সরোয়ার হোসেন বাবু, সহ-সভাপতি আনোয়ারুল ইকবাল সান্টু, আরমানসহ এক ডজন নেতাকে খুঁজছে পুলিশ।
জানা গেছে, মহিউদ্দিন মহি ব্রাদার্স ক্লাবের সভাপতি। এক সময় সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। এর আগে একটি ক্লাবের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া জমিতে ভবন নির্মাণের জন্য একটি ভবন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের কাছে জায়গা দিয়ে ৭০ কোটি টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নেয়। এখানে ১৭ কোটি টাকার ভাগ নিয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা। এছাড়াও ব্রাদার্স ক্লাবে মহিউদ্দিন মহির নেতৃত্বে জুয়া ও ক্যাসিনো খেলা হয়ে থাকে। মহির বিরুদ্ধে গণপূর্ত, বিদ্যুৎ ভবন, শিক্ষা ভবন, খাদ্য ভবনসহ বিভিন্ন এলাকায় টেন্ডার নিয়ন্ত্রণের চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আত্মীয় হওয়ায় এভাবে প্রভাব বিস্তার করেন। এছাড়াও রেজা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর থেকে ‘জিরো থেকে হিরো’ হয়েছেন। এক সময়ে স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপনের মতো টাকা-পয়সা না থাকলেও এখন ঢাকায় একাধিক বাড়ি, ফ্ল্যাট রয়েছে তার। এখন সঙ্গে তার রয়েছে ঢাকা-বরিশাল রুটে আলিশান লঞ্চ। তার লঞ্চের নাম রয়েল ক্লুজ-২। অভিযোগ রয়েছে, অবৈধভাবে কয়েকশ’ কোটি টাকা বানিয়ে নামে বেনামে আরো একাধিক লঞ্চের মালিক। সদরঘাটে রেজার নিয়ন্ত্রণে চলে নীরব চাঁদাবাজি। ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চায় না।
এছাড়া যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী সরোয়ার বাবুর বিরুদ্ধেও অভিযোগের পাহাড়। সদরঘাটের গেটওয়াল মার্কেটের সভাপতি বাবু এই মার্কেটের দখল নিয়ে বিএনপির আমলে সংঘর্ষে একজন মারা যান। ব্যবসায়ীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ৪০টি দোকান দখল করে নিয়েছেন। যেখানে কোনো দোকান ছিল না। ওই দোকানগুলো দখল নিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছেন। এছাড়াও সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, রাজউকসহ বিভিন্ন ভবনের ঠিকাদারি তার নিয়ন্ত্রণে।
জানা গেছে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহ-সভাপতি আনোয়ার ইকবাল সান্টুকেও খুঁজছে পুলিশ। বিভিন্ন সংস্থার লোকজন তার বিত্তবৈভবের অনুসন্ধান শুরু করেছে। তার বিরুদ্ধে রয়েছে সিটি করপোরেশন, গণপূর্ত, ওয়াসা, রাজউক, শিক্ষা ও বিদ্যুৎ ভবনের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ। জি কে শামীম ও তার একটা সিন্ডিকেট রয়েছে। এসব ভবনে ঠিকাদারি করে কয়েক বছরেই কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তার মূল শক্তি যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহজাহান ভূঁইয়া বলে জানা গেছে।
ক্যাসিনো কারবারের মাধ্যমে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহসভাপতি এনামুল হক আরমানের উত্থান ভারতের মুম্বাই সিনেমার গল্পের মতোই। ক্যাসিনোর কামানো টাকা ঢাকাই চলচ্চিত্রে লগ্নি করে বনে গেছেন চলচ্চিত্র প্রযোজক। ঢাকা মহানগর যুবলীগের প্রভাবশালী এক নেতার বন্ধু পরিচয়ে গত এক দশকে কয়েকশ’ কোটি টাকা কামিয়েছেন তিনি। জানা গেছে, ক্লাবপাড়ার পুরনোরা আরমানকে ক্যাসিনো বাণিজ্যের গুরু বলে জানেন। মূলত তার বুদ্ধিতেই ফুটবল ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনো কারবার শুরু হয়। শুধু তাই নয়, ক্যাসিনো-সামগ্রী নিজের টাকায় কিনে এনে যুবলীগের শীর্ষনেতাদের ছত্রছায়ায় যুবলীগের প্রথম ক্যাসিনো কারবার শুরু হয়।
ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এস এম রবিউল ইসলাম সোহেল ক্যাসিনো ব্যবসার মাধ্যমে রাতারাতি শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। মতিঝিল ক্লাবপাড়ায় ক্যাসিনো থেকে দৈনিক চাঁদাবাজি করে একাধিক ফ্ল্যাট ও ১৪টি গাড়ির মালিক হয়েছেন তিনি। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রয়েছে কোটি কোটি টাকা। নিজের গ্রামের বাড়িতে ৫ কোটি টাকায় নির্মাণ করেছেন আলিশান ডুপ্লেক্স বাড়ি। ২ কোটি টাকার ২টি হ্যারিয়ার গাড়িসহ ১৪টি গাড়ির মালিক। এর মধ্যে ১০টি গাড়ি নামিয়েছেন পরিবহন সার্ভিসে ব্যবসায়। এছাড়া ক্যাসিনোর চাঁদাবাজির টাকায় তিনি একটি হাউজিং কোম্পানি খুলে সেখানে বিনিয়োগ করেছেন প্রায় ১০ কোটি টাকা। একে একে বিয়ে করেছেন চারটি। কিন্তু প্রথম বিয়ে টিকেছে শুধু ৫-৬ বছর। পরের তিনটি বিয়ে গড়ে ৩-৪ মাস করে টিকেছে। কয়েক বছর আগে নিজ বাসায় আপন ভাগিনা খুন হন। প্রাথমিকভাবে খুনের তীর ছিল তার দিকে। বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা মহানগর কমিটির আগামী সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী তিনি।
এদিকে গতকাল ক্যাসিনো চক্রের দুই ভাই গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক এনু ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রুপন ভূঁইয়াকে এক কোটি পাঁচ লাখ টাকা ও ৭৩০ ভরি সোনাসহ গ্রেফতার করে র্যাব।
চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযান প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ইনকিলাবকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে পদক্ষেপ নিচ্ছেন তাকে আমরা স্বাগত জানাই। প্রধানমন্ত্রী যা করছেন তা দেশ ও জাতির স্বার্থে। সংগঠনের মধ্যে যারাই অপকর্মে জড়িত তাদের সকলের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর দাবি জানিয়ে জয় বলেন, যাদের অপরাধ প্রমাণ হবে আমরা তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।