Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মারাত্মক মন্দার কবলে ভারতের অর্থনীতি

অন্তর্বাস থেকে গাড়ি বিক্রিতে ভাটা-১

দ্য নিউইয়র্ক টাইমস | প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

অ্যালান গ্রীনস্প্যান একটি কনসাল্টিং ফার্ম চালাতেন। তিনি জানতে চেয়েছিলেন যে অর্থনীতি কোনদিকে অগ্রসর হচ্ছে। গাইড হিসেবে তিনি প্রায়ই পুরুষদের অন্তর্বাস বিক্রির দিকে লক্ষ্য করতেন। পরে ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান পদে উন্নীত গ্রীনস্প্যান মনে করতেন যে যখন খারাপ সময় আসে তখন পুরুষদের তাদের অন্যান্য জিনিস কেনা বন্ধের আগে নতুন অন্তর্বাস কেনা বন্ধ করা উচিত। কারণ, এটা কারো চোখে পড়ে না।

ভারত একটি মারাত্মক মন্দার মধ্যে রয়েছে। তিরুপুরের ট্যানটেক্স অন্তর্বাস এমপোরিয়ামের জেফরিন মোসেস তাকে রাখা সুতি বস্ত্র ও ট্যাংক টপ ভর্তি বক্সগুলো দেখিয়ে বলেন, বিক্রি ৫০ শতাংশ কমে গেছে। দক্ষিণ ভারতের তিরুপুরে দেশের নিটওয়্যারের অধিকাংশ তৈরি হয়। শুধু অন্তর্বাসই নয়, গত আগস্ট মাসে গাড়ি বিক্রির পরিমাণও ৩২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। গত দুই দশকে এটা সর্বনিম্ন। ক্রেতারা মূল্য বৃদ্ধির কারণে সমস্যার শিকার হয়েছেন। দ্বিধাগ্রস্ত ঋণদাতাদের কাছ থেকে তাদের ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। গাড়ি নির্মাতারা ১০ লাখ লোক ছাঁটাই করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। মুম্বাইতে একটি আবাসিক টাওয়ার নির্মাণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে জোটবাঁধা বিরাট রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার মাইক্রোটেক নতুন আবাসন চাহিদা হ্রাস পাওয়ার কারণে সদ্য ৪০০ লোক কর্মচারিকে ছাঁটাই করেছে।

ভারতে সাধারণ মানুষের সকাল বেলায় দুধ ও চায়ের সাথে প্রধান খাবার ৭ সেন্ট দামের পার্লে বিস্কুট কেনাও পরিবারগুলো কমিয়ে দিয়েছে। পার্লে নির্বাহী মায়াঙ্ক শাহ বলেন, তারা এখন এর পরিবর্তে আরো সস্তা স্থানীয় খাদ্য বিক্রেতাদের তৈরি স্ন্যাকস খাচ্ছে। তিনি বলেন, পার্লে বিস্কুট বিক্রি ৮ শতাংশ কমে গেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে কোম্পানি ১০ হাজারের মত কর্মীকে চাকরিচ্যুত করতে পারে।

বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দায় ভারতের জন্য আরেকটি অন্ধকার দিক হচ্ছে তেলের সাম্প্রতিক মূল্য বৃদ্ধি এবং ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব যার মধ্যে ভারতও রয়েছে। ভারত সরকার কয়েক মাস ধরে কোনো মন্দার সাক্ষ্যপ্রমাণের কথা অস্বীকার করলেও গত শুক্রবার সকল কোম্পানির জন্য আয়কর এবং নির্মাতাদের জন্য অতিরিক্ত প্রণোদনা আকস্মিক কর্তনের ঘোষণা করে শেষ পর্যন্ত সমস্যার গভীরতার কথা স্বীকার করেছে।

এ সপ্তাহান্তে ট্রাম্পের সাথে সাক্ষাতের জন্য মোদি হাউস্টন যাবেন এবং তার সাথে কথা বলে কিছু বাণিজ্য-বিরোধ নিরসনের চেষ্টা করবেন। ভারতের অর্থনীতি মনিটরিং সেন্টারের মতে, গত বছর পর্যন্ত ১৩০ কোটি লোকের দেশ ভারত ছিল বিশে^র দ্রæত বর্ধমান বৃহৎ অর্থনীতি। তার নিয়মিত প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ শতাংশ বা তার বেশি। এখন সরকার বলছে দেশের প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ। বেকারত্বের হার ৮.৪ শতাংশের পাশাপাশি চাকরিচ্যুতির নোটিশ স্তুপীকৃত হচ্ছে।
ভারতের অর্থনীতির এ বিপরীত অবস্থার আংশিক কারণ অবহেলিত কৃষকদের মত অভ্যন্তরীণ সমস্যা যা এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের জন্য এক অশুভ বিষয়। এটা বিশ্ব অর্থনীতিকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে। এর সাথে আছে ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব।

সুইডিশ ব্যাংক এসইবি’র প্রধান উদীয়মান বাজার কৌশলবিদ পার হ্যামারলান্ড বলেন, ভারত হচ্ছে সম্ভাব্য ভেড়ার দলের গলায় ঘণ্টা বাঁধা সরদার ভেড়া। এখন বিশ^ব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবণতার চিহ্ন হচ্ছে এ বছর প্রবৃদ্ধি গত বছরের চেয়েও আরো কম হয়েছে।

ডলারের নিরাপত্তার জন্য যখন উদ্বিগ্ন বিশ্ব বিনিয়োগকারীরা একত্রে জড়ো হয়েছেন। তখন ভারত ও অন্যান্য উদীয়মান বাজারের মুদ্রার মূল্যমান কমছে। এটা গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি, ইলেকট্রনিক্স ও কারখানা সরঞ্জামের আমদানি আরো ব্যয়বহুল করেছে। গত সপ্তাহান্তে সউদী আরবের দু’টি তেল স্থাপনায় হামলা, যা বিশে^ তেলের দাম বৃদ্ধি করেছে। তুলে ধরেছে যে ভারত ও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশ তাদের নিয়ন্ত্রণ বহিভর্‚ত ঘটনার কাছে কতটা দুর্বল।
চীন ও ইন্দোনেশিয়ার মত ভারতও বহু বছরের অত্যধিক ঋণের চাপে আক্রান্ত। ভারতের ক্ষেত্রে ব্যাংকের কুঋণের বোঝা, সে সাথে সাস্প্রতিক নন-ব্যাংক অর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিচ্যুতি গ্রাহক ও ব্যবসায়ীদের ঋণপ্রদান সঙ্কুচিত করেছে। অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের মতে, ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও রাজ্য সরকারগুলোর নীতি সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনৈতিক মন্দার আরো অবনতি ঘটিয়েছে।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, অটো নির্মাতারা এক ত্রিমুখী সঙ্কটের শিকার। নতুন সুরক্ষা ও নির্গমন মান যানের মূল্য বাড়িয়েছে। নয়টি রাজ্য গাড়ি বিক্রির উপর কর বৃদ্ধি করেছে। যেসব ব্যাংক ও আর্থিক কোম্পানি ডিলারদের অর্থায়ন এবং ৮০ শতাংশ ক্রেতাদের গাড়ি ক্রয়ে ঋণদান করত ঋণ সঙ্কটের কারণে তারা এখন পঙ্গু হয়ে পড়েছে।

ভারতের বৃহত্তম গাড়ি নির্মাতা মারুতি সুজুকির চেয়ারম্যান আর. সি. ভার্গভা বলেন, এর সবই ঘটেছে এক বছরে। সাধারণ চক্রিয় মন্দার ফলে অটো সেক্টরে মারাত্মক মন্দা সৃষ্টি হয়েছে। (অসমাপ্ত)



 

Show all comments
  • Sazzad Hossain ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:১২ এএম says : 0
    এগুলো ছাড়া থাকে নাকি ভারতের ধনী মহিলা গুলো
    Total Reply(0) Reply
  • Mukul Hosen ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:১৩ এএম says : 0
    দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের যে অবস্থা, সেটা লিখতে ভয় পায়, চলছে ভারতে...
    Total Reply(0) Reply
  • Nurur Rahman ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩৪ এএম says : 0
    "ভারতের বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দা নজিরবিহীন"------- তাহলে পাকিস্থানের হুমকির মোকাবেলা কিভাবে করবেন? এক কাজ করেন গ্রীন ল্যান্ডের পরিবর্তে ট্র্যাম্প কাশ্মীর কিনবে কিনা জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন, তাহলে নগদ কিছু আমদানি হতে পারবে। তবে শুনেছি, ওদের ও টাকা পয়সার অবস্থা তেমন সুবিধের নয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Abdullah-Uganda ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩৫ এএম says : 0
    বাংলাদেশ ও ভারত সরকার বন্ধু তাই দুই বন্ধুর একই অবস্থা হইছে। খালি দূর্নীতি আর সন্ত্রাস!
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩৫ এএম says : 0
    নিঃসন্দেহে দেশটি দক্ষিণ এশিয়ার চরম হতদরিদ্র দেশ। কিন্তু শাসক শ্রেণী নিজেদের সুবিধার্তে সবসময় একে অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে প্রচার করে জনগনের দৃষ্টিকে সবসময় সরিয়ে রেখেছে। ফলে স্বাধীনতার ৭০ বছর পার হলেও এটি এখনো দারিদ্রের দুষ্টচক্রেই আছে।
    Total Reply(0) Reply
  • বিবেক ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩৬ এএম says : 0
    চুরি বাটপারিতে এখন অধিকাংশ ভারতীয় লিপ্ত হবে অর্থনৈতিক খারাপ অবস্থার জন্য।
    Total Reply(0) Reply
  • Deepak Eojbalia ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩৬ এএম says : 0
    But India is still persecuting Muslims. Cow is more important than humanbeings.
    Total Reply(0) Reply
  • মনিরুল ইসলাম ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩৭ এএম says : 0
    ভারতের অর্থনীতি ভালো হলে বাংলাদেশের কাছ থেকে সবকিছু ফ্রী চাইতো না, সারা দুনিয়াতে একটু ভাল মজুরির আসায় কয়েক কোটি ভারতীয় এত কষ্ট করতো না।
    Total Reply(0) Reply
  • বিবেক ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩৭ এএম says : 0
    ১৫০ কোটি ভারতীয়র জন্য চরম দুঃসংবাদ বটে।উপনিবেশ আমলে ভারতীয়দের অবস্থা এর চেয়ে ভালো ছিল।
    Total Reply(0) Reply
  • ash ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৫:১৪ এএম says : 0
    OI DIN DURE NOY, VAROT TUKRO TUKRO HOE JABE !! SHURU HOBE ASHAM R BANGLA DIE ! BANGLA R WICHTH THEIR OWN LAND OWN COUNTRY FOR BANGLAI PEOPLE, NA HOLE BANGLAR BANGALIKE AKDIN BADDO KORA HOBE ONLY HINDITE KOTHA BOLTE
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ