পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আওয়ামী লীগের ‘লীগ’ শব্দটির নাম ভাঙিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যারা অপকর্ম করে দলের ইমেজ ক্ষুন্ন করেছে তারা এখন রীতিমত দৌড়ের ওপর। ছাত্রলীগের শোভন-রাব্বানীকে দল থেকে অপসারণ, যুবলীগের খালেদকে বহিষ্কারের মাধ্যমে শুদ্ধি অভিযান শুরু হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগসহ যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষকলীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগের সকল বিতর্কিত, অপকর্মকারী, দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দিয়ে দলকে শুদ্ধ করা হবে। তৃণমূলের সম্মেলনের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে দলের দুর্নীতিবাজদের মূল উৎপাটন করা হবে বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দলে সর্বোচ্চ ৫ ভাগ নেতা অপরাধে জড়িত। এই সামান্য কয়েকজনের জন্য তো দলের বদনাম হতে পারে না। এরা দলে না থাকলেও দলের সামান্যতম ক্ষতি হবে না। প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি করেন না, দেশের জনগণের জন্য দিন-রাত খেটে যাচ্ছেন অথচ বিতর্কিত, দুর্নীতিবাজ, অপকর্মকারী, ধর্ষকদের কারণে সব সময়ই নেগেটিভভাবে আলোচনায় থাকে আওয়ামী লীগ। তাই প্রধানমন্ত্রী জনগণের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে কঠোর হয়ে নিজ দলের অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। দলের এসব অপকর্মকারী দুর্নীতিবাজদের রাজনীতি থেকে উৎখাত করে জনগণের ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠা করবেন প্রধানমন্ত্রী।
এ অবস্থায় বিতর্কিত অপকর্মকারী নেতারা ভয়ে গা ঢাকা দিয়েছে। অনেকেই বিদেশ পাড়ি দিয়েছেন, আবার অনেকে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের ক্যাসিনো চালানো নিয়ে বিতর্কে আসা ক্লাবের সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাউসার বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। ক্যাসিনো বিতর্কে জড়িত আরেক নেতা ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরছেন না। এছাড়া ক্লাব ক্যাসিনোতে জড়িত বেশিরভাগ নেতা দেশের বাইরে চলে গেছে। সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় তিনশ’ নেতা দেশের বাইরে চলে গেছেন। যারা দেশে আছেন তাদেরও মোবাইল ফোন বন্ধ। নতুন নাম্বার দিয়ে গুটি কয়েক পরিচিতদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। এদিকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কার্যালয়েও নেই নেতাকর্মী। অনেক কার্যালয়ের তালাও খোলা হচ্ছে না।
তবে দলের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, এই পদক্ষেপ দলের বিরুদ্ধে নয়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে। জিরো টলারেন্স নীতিতে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার অংশ হিসেবে দলের নাম ভাঙিয়ে অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এই পদক্ষেপ কয়েকদিন পর থেমে যাবে এমন নয়, এটি চলতে থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর এমন পদক্ষেপকে স্বাগত জানাচ্ছেন তৃণমূলের ত্যাগী নেতারা। অভিযানের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদ ফেসবুকে লিখেছেন, এটি কোনো সাধারণ অভিযান নয় যে কয়দিন পর থেমে যাবে। এটি দলের নেতাদের বিরুদ্ধেও অভিযান নয়। প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতি বিরোধী জিরো টলারেন্স নীতির অংশ হিসেবে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার পদক্ষেপ এটি। এই অভিযান চলতে থাকবে।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ বা অঙ্গসংগঠনের কোনো পাতি নেতাকে সচিবালয় বা এর আশপাশেও দেখা মিলছে না। তদবির নিয়ে যারা সর্বদাই ঘুর ঘুর করতো তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না টাকা দেয়া ভুক্তভোগিরা। বিতর্কিত অপকর্মকারী এসব নেতাদের তাদের পূর্ব-পরিচিত জায়গাতেও দেখা মিলছে না। বাসাতেও থাকছেন না তারা। যেসব ক্লাব বা তাদের নির্দিষ্ট স্থানগুলোতে নিয়মিত আড্ডা চলতো, মদ, জুয়া আর মাদকের মজমা বসতো তা এখন পুরোপুরি ফাঁকা। বাসস্ট্যান্ড, টেম্পু বা রিকশার চাঁদা তোলার মানুষ নেই এই কয়েকদিন ধরে। ফুটপাথের দোকানের চাঁদাবাজির টাকাও কেউ নিচ্ছে না, দোকানদারের কাছেই জমছে বকেয়া। মাদকের ক্রেতা থাকলেও বিক্রেতা সঙ্কট। অঙ্গসংগঠনের এসব বিতর্কিত নেতাদের মোবাইল নাম্বার বন্ধ। কয়দিনের জন্য গা ঢাকা দিয়েছেন। হয়তো সুযোগ পেলে আবার প্রশাসনের সহায়তায় আগের মত অপকর্ম শুরু করবে।
এমতাবস্থায় দলের কিছু বিতর্কিত নেতারা বলতে চাচ্ছেন, বিরাজনীতি করার ষড়যন্ত্রের মধ্যে তারা আপতিত এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কেউ ভুল বুঝিয়ে নিজ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে একটি পক্ষ লাভবান হবার চেষ্টা করছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ওবায়দুল কাদের ও অন্যান্য নেতারা বলেছেন, শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবেই দলের এসব সুনাম ক্ষুন্নকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা। ঢাকা থেকে পুরো দেশেই অভিযান চালানো হবে এবং বিতর্কিত, অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থাগ্রহণের নির্দেশা দেয়া হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে সম্মেলনের মাধ্যমে সকল বিতর্কিত, অনুপ্রবেশকারীদের ছেঁটে ফেলা হবে।
রাজধানীর বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করে দেখা যায়, সায়দাবাদ, মহাখালী, গাবতলী বাস টার্মিনালে হাতে রশিদ নিয়ে যারা বাস থেকে চাঁদা তুলতো তারা এখন নেই। গুলিস্তানের ফুটপাথের দোকানগুলো থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও শ্রমিক লীগের নামে যারা চাঁদা তুলতো তারা কয়েকদিন ধরে চাঁদা নিতে আসছে না। মুক্তাঙ্গনের গাড়ি পার্কিং থেকে শ্রমিক লীগের নামে চাঁদা নেয়া হলেও এখন চাঁদা নেয়ার মানুষ নেই। রাজধানীর তেজগাঁও, ফার্মগেট, খিলগাঁও, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর টেম্পুস্ট্যান্ডের চাঁদা নেয়ার কোনো লাইনম্যান নেই।
এদিকে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর সংগঠনের নেতাদের নিজস্ব ট্রাইব্যুনালে বিচারের ঘোষণা আপাতত স্থগিত কারণ নেতাদের অবস্থান তারা জানতে পারছেন না। যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ শনিবার রাতে বলেন, এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান পর্যবেক্ষণ করছেন তারা। ফৌজদারি অপরাধে কেউ গ্রেপ্তার হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবেন। সাংগঠনিক ট্রাইব্যুনাল কেন কার্যকর করা হচ্ছে না এ বিষয়ে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান অভিযানের কারণে কে কোথায় আছেন, তা এখন বলা মুশকিল।
দীর্ঘদিন ধরে দলের বিতর্কিতরা নানা অপরাধ করে আসলেও বর্তমানে ত্যাগী নেতারা সে বিষয়ে মুখ খুলছেন, করছেন প্রতিবাদ। নেতাদের অপকর্মের নানা তথ্য প্রকাশ করছেন তারা। যুবলীগের দফতর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেছেন যুবলীগেরই কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সরদার মোহাম্মদ আলী মিন্টু। কম্পিউটার অপারেটর থেকে দফতর সম্পাদক হওয়া এবং কমিটি নিয়ে বাণিজ্য করার অভিযোগ তুলে বলেন, আনিস মাফিয়া ও আন্ডারওয়ার্ল্ডের মহাগুরু।
নানা অপকর্মের তথ্য উঠে আসে ২০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন। তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দাখিল করা অভিযোগে বলা হয়, যুবলীগের প্রভাব খাটিয়ে শাহাবুদ্দিন এখন শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তার নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া ও বঙ্গবাজারের ৫টি মার্কেট। গুলিস্তানের ব্যবসায়ীদের কাছে যুুবলীগ নেতা শাহাবুদ্দিন এখন এক আতঙ্কের নাম। বিভিন্ন মার্কেটের অবৈধ জায়গায় দোকান স্থাপন করে তিন-চারজনের কাছে বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়াচক্রের আলী আহম্মেদের ডান হাত হওয়ায় ওই ক্লাবের ক্যাসিনো কারবারের টাকার ভাগও যেত তার পকেটে। প্রতিদিন শাহাবুদ্দিন ২০ হাজার টাকা পেতেন মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়াচক্রের ক্যাসিনোর বোর্ড থেকে। এছাড়া সিটি করপোরেশনের মার্কেটের দোকান বরাদ্দ নিয়েও নানা কারসাজির অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশনের ট্রান্সফরমারও বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধেও নেতাকর্মীদের নানা অভিযোগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি থানার পদপ্রত্যাশী নেতা বলেন, মহানগরের প্রত্যেকটি থানায় কমিটি দেয়ার নামে কোটি টাকার উপরে টাকা নিয়েছেন মেহেদী। কিন্তু দীর্ঘদিনেও কমিটি দেয়ার কোনো নাম নেই।
এদিকে ছাত্রলীগের অনেক নেতা বিয়ে করে সংসার করছেন। কিন্তু তারপরও স্বপদে বহাল রয়েছেন। দক্ষিণ খান থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের হোসেন সৌরভ সংগঠনের নেতাদের সবাইকে দাওয়া দিয়ে বিয়ে করেছেন। তুরাগ থানার সভাপতি শফিকুর রহমানও বিবাহিত। এছাড়া তুরাগ থানার সাধারণ সম্পাদক আরিফ হাসানের নামে মহানগরে অভিযোগের পাহাড়। সাউদার্ন গার্মেন্ট, আইএফএল গার্মেন্টস, সাইফ টেকসহ স্থানীয় ১৫টি গার্মেন্টস থেকে চাঁদা তোলা, প্রায় তিন হাজার অবৈধ ব্যাটারি চালিত রিকশা পরিচালনা করে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা চাঁদা উত্তোলন, ১৩ নং সেক্টরে রাজউকের জায়গায় অবৈধভাবে মার্কেট নির্মাণ করে ভাড়া দেয়াসহ মাদক ব্যবসার ছত্রছায়া দান করার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় আওয়ামী লীগের একজন নেতা জানান, আরিফ হাসানের কারণে দলের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে, কিন্তু প্রভাবশালীদের আশ্রয়ে তার অপকর্মের মাত্র দিন দিন বেড়েই চলছে।
এ বিষয়ে আরিফ বলেন, তিনি এ ধরণের কাজের সঙ্গে জড়িত নন। ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, আরিফ হাসানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পেয়েছি। যদি আমরা পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণ পাই তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার পদক্ষেপে খুশি তৃণমূল আওয়ামী লীগ ও জনসাধারণ। এ বিষয়ে ছাত্রলীগের উপ-সম্পাদক খাদিমুল বাশার জয় ইনকিলাবকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপে রাজনীতির দুর্নীতি দূর হচ্ছে। আগামী দিনের চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ ও দুর্নীতিমুক্ত সুন্দর ও সুস্থ রাজনীতি দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।