Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৬৩ কোটি ব্যারেল তেল মজুদ যুক্তরাষ্ট্রের

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

সউদী আরবের দুটি তেল স্থাপনার ওপর ড্রোন হামলার পরই তেলের দাম বেড়ে গেছে। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, তেল সরবরাহে সংকট দেখা দিলে প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল ‘জরুরি মজুতে’ থাকা তেল কাজে লাগানো হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় বলেছেন, বাজারে তেলের সরবরাহ অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য সেই ‘কৌশলগত মজুত’ তেল ব্যবহার করতে পারেন তারা। টেক্সাস এবং লুসিয়ানা অঙ্গরাজ্যে মাটির নিচে লবণের স্তরের ভেতর তৈরি গুহায় বিশাল এলাকা নিয়ে তেল মজুত রয়েছে। এখানে যুক্তরাষ্ট্রের জরুরি মুহ‚র্তে তেলের যোগান দিতে ৬৩ কোটি ব্যারেল তেল মজুত রাখা হয়েছে। ১৯৭০-এর দশকে আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময়কার তেল সংকটের পটভ‚মিকে কেন্দ্র করেই এই তেলের মজুত গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক জ্বালানি এজেন্সির সব সদস্য দেশকেই অন্তত ৯০ দিন ব্যবহারের মত পেট্রোলিয়ামের আমদানি ধরে রাখতে হয়। তবে জরুরি প্রয়োজন মোকাবিলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যে ভাÐার গড়ে তুলেছে- তার মতো বড় মজুত পৃথিবীর আর কোথাও নেই। যুক্তরাষ্ট্রে মোট চারটি জায়গায় এই জরুরি তেলের মজুত রয়েছে। টেক্সাসের ফ্রিপোর্ট এবং উইনির কাছে, লুসিয়ানায় লেক চার্লস আর ব্যাটন রুজে। মাটির তিন হাজার তিনশ ফুট নিচে মানবসৃষ্ট অনেকগুলো গুহার মধ্যে এই তেল জমা করে রাখা আছে। ভ‚গর্ভস্থ লবণের স্তরের একটা অংশের লবণ গলিয়ে ফেলে তৈরি করা হয় এই গুহ- যাতে প্রাকৃতিক গ্যাস বা তেল মজুত রাখা যায়। মাটির ওপরে ট্যাংকে তেল জমা রাখার চাইতে এই পদ্ধতি অনেক সস্তা এবং নিরাপদ। ভ‚গর্ভস্থ লবণের রাসায়নিক গঠন এবং ভ‚তাত্বিক চাপ- দুই কারণেই এখান থেকে তেল বেরিয়ে যেতে পারে না। ফ্রিপোর্টের কাছে ব্রায়ান মাউন্ডে যে গুহাটি আছে তাতে ২৫৪ মিলিয়ন বা ২৫ কোটি ৪০ লাখ ব্যারেল তেল জমা রাখা যায়। ১৯৭০ সালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর তেল নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে সারা পৃথিবীতেই তেলের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে গিয়েছিল। ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের পক্ষ নেয়ায় ওপেকের সদস্য ইরাক, কুয়েত, কাতার ও সউদী আরব যুক্তরাষ্ট্রে তেল রফতানি বন্ধ করে দেয়। আরব-ইসরাইল যুদ্ধ মাত্র তিন সপ্তাহেই থেমে যায় কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা ১৯৭৪ সালের মার্চ পর্যন্ত জারি ছিল। ফলে তেলের দাম বেড়ে গিয়েছিল প্রায় চারগুণ, ব্যারেল প্রতি ৩ ডলার থেকে ১২ ডলারের কাছাকাছি। পেট্রোল পাম্পগুলোয় পড়েছিল গাড়ির দীর্ঘ লাইন। এরপরই ভবিষ্যতে সংকট মোকাবিলার চিন্তা থেকে মার্কিন কংগ্রেসে একটি আইন পাস করে কৌশলগত পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ গড়ে তোলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের এই মজুতের যে তথ্য ওয়েবসাইটে আছে তাতে বলা হয়েছে, ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তেল মজুত রয়েছে ৬৪ কোটি ৪৮ লাখ ব্যারেল। মার্কিন জ্বালানি প্রশাসনের এক হিসাব অনুযায়ী, মার্কিনিরা ২০১৮ সালে গড়ে প্রতিদিন ২ কোটি ৫ লাখ ব্যারেল তেল ব্যবহার করেছে। সে হিসাবে এই জরুরি মজুতে যুক্তরাষ্ট্রে ৩১ দিন চলবে। ১৯৭৫ সালের এক আইন অনুযায়ী এই জরুরি মজুতের তেল ব্যবহারের নির্দেশ শুধুমাত্র প্রেসিডেন্টই দিতে পারেন। অবশ্য এখান থেকে তেল বের করা সহজ নয়। প্রেসিডেন্টের আদেশ পেলেও এখান থেকে তেল বের করে তা বাজার পর্যন্ত পৌঁছে দিতে প্রায় দু’সপ্তাহ সময় লাগবে। তা ছাড়া এখানে তেল জমা রাখা হয়েছে অপরিশোধিত আকারে। গাড়ি, জাহাজ বা বিমানে ব্যবহার করতে হলে এই তেলকে আগে শোধনাগারে পাঠিয়ে প্রক্রিয়াজাত করতে হবে। সর্বশেষ এই জরুরি মজুতের তেল ব্যবহার করা হয় ২০১১ সালে যখন আরব বসন্তের কারণে জ্বালানি সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ সিনিয়র জরুরি মজুতের তেল ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলেন। রয়টার্স, সিএনএন।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাষ্ট্র


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ