মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
গত শনিবার সকালে বিশ্বের বৃহত্তম তেল প্রক্রিয়াকরণ কারখানায় হামলার ঘটনা হচ্ছে ইরান ও সউদী আরবের মধ্যে সংঘাতের নাটকীয় বিস্তার। এমনকি ইরান যদি ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা না চালিয়ে থাকে, তবুও।
কয়েকটি প্রজেক্টাইল আবিকায়েক তেল শোধনাগারে আঘাত হানার পর কয়েক দফা আগুন লাগে। এতে সউদী তেল উৎপাদনের প্রায় অর্ধেক পুড়ে যায়। পুড়ে যাওয়া তেল বিশ্বের দৈনিক উৎপাদনের ৫ শতাংশ। এ ঘটনা বিশ্বে তেল সরবরাহের নিরাপত্তার ব্যাপারে উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। সউদী রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি আরামকো পরিচালিত আবিকায়েক তেল শোধনাগার আবার কবে সম্পূর্ণ সচল হবে, তা স্পষ্ট নয়।
ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা এ হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে। তারা জানায়, ১০টি ড্রোন আবিকায়েক ও খুরাইস তেল ক্ষেত্রে আঘাত হানে। কিন্তু এই হামলার মাত্রা ও সঠিকভাবে আঘাত হানা হুথি সক্ষমতার নাটকীয় ও উল্লেখযোগ্য রকম বৃদ্ধির কথা প্রকাশ করে যা সউদী আরব ও আমেরিকা কেউই বিশ্বাস করে না।
যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত হুথি দাবি বাতিল করেছে। গত শনিবার দিনের শেষ দিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পিও টুইটে লেখেন- ইরান বিশে^র তেল সরবরাহে এক নজিরবিহীন হামলা চালিয়েছে। এ হামলা যে ইয়েমেন থেকে চালানো হয়েছে তার কোনো প্রমাণ নেই।
এর জবাবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ প্রতারণার জন্য পম্পেওকে অভিযুক্ত করেন। তিনি টুইটারে লেখেন, চরম চাপের মুখে ব্যর্থ হয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী চরম মিথ্যাচার করেছেন। তিনি বলেন, ইরানকে দোষারোপ করে বিপর্যয় বন্ধ হবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, কোথা থেকে এ হামলা চালানো হয়েছে? এর পিছনে কে বা কারা?
হুথিরা গত দুই বছরে সউদী আরবের বিরুদ্ধে কয়েক ডজন ড্রোন ও স্বল্প পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। সউদী বিমান প্রতিরক্ষা সেগুলোর বহু ধ্বংস করেছে। অন্যগুলো কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। খুব কম সংখ্যকই কিছুটা সীমিত ক্ষতি ও প্রাণহানি ঘটিয়েছে।
হুথি ড্রোনগুলো ইরানি মডেলের যেগুলো উত্তর কোরিয়াতে তৈরি। এগুলো স্বল্প পাল্লার (৩০০ কি. মি. বা ১৮৬ মাইল।) যাহোক, জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের এক প্যানেল গত জানুয়ারিতে বলেন, হুথিরা দীর্ঘ পাল্লার ড্রোন মোতায়েন করেছে। ফলে তারা সউদী ও আমিরাতের গভীর অভ্যন্তরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারবে।
প্যানেলের এক রিপোর্টে বলা হয়, তাদের কাছে রিয়াদের ১৮ মাইলের মধ্যে ড্রোন হামলার খবর আছে। এ সব ড্রোন যাকে ইউএভি-এক্স বলা হয়, এর পাল্লা ৭৪০ থেকে ৯৩০ মাইলের মধ্যে। ইয়েমেনে হুথি নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে আবিকায়েকের দূরত্ব ৮০০ মাইল।
এ ঘটনা সম্পর্কে অবহিত এক ব্যক্তি সিএনএনের জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক পিটার বারজেনকে গত শনিবার দিনের শেষে বলেন যে প্রাথমিক ধারণা থেকে মনে হয় ড্রোন/ক্ষেপণাস্ত্র ইয়েমেন থেকে আসেনি। এসেছে ইরাক থেকে। উপসাগর অঞ্চলের দ্বিতীয় সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ নেই। তবে আভাস পাওয়া যাচ্ছে যে এ হামলা হয়েছে দক্ষিণ ইরাক থেকে।
দক্ষিণ ইরাক ইরানপন্থী চল। মিলিশিয়াদের শক্তঘাঁটি। ইরানের বিপ্লবী রক্ষী বাহিনীর বৈদেশিক অপারেশন পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত ইউনিট আল কুদস বাহিনীর সেখানে উপস্থিতি রয়েছে। চলতি বছরের প্রথম দিকে সউদী আরবের এক তেল পাম্পিং স্টেশন আফিফে যে ড্রোন হামলা হয়েছিল তা ইরাক থেকেই চালানো হয় বলে অনুমান করা হয়েছিল। কিন্ত এর সপক্ষে কোনো শক্ত প্রমাণ মেলেনি।
ইরাক সরকার গত রোববার এক বিবৃতিতে সউদী তেল শোধনাগারে হামলায় ইরাকের মাটি ব্যবহৃত হওয়ার কথা প্রত্যাখ্যান করেছে। হুথিরা কোনো প্রমাণ উপিস্থিত না করে বলেছে যে এই হামলার জন্য তারা সউদী আরবের ভেতর থেকেই সাহায্য পেয়েছে। হুথি মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি বলেন, সঠিক গোয়েন্দা অভিযান, আগাম মনিটরিং ও সউদী আরবের ভেতরে থাকা সম্মানিত ব্যক্তিদের সহযোগিতায় এ হামলা চালানো হয়েছে।
বিশ্লেষকগণ হুথিদের কথিত সহযোগী হিসেবে সউদী আরবের পূর্বাঞ্চলে বসবাসরত শিয়াদের কথা বুঝিয়েছেন। আবিকায়েক শিয়া এলাকা কাতিফ ও আহসার মধ্যে অবস্থিত। তবে তারা সতর্ক করেন যে হুথিরা নিজ স্বার্থে সউদী আরবের অভ্যন্তরে উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে। স্থানীয় শিয়ারা এ ধরনের হামলায় সাহায্য করতে পারে, এটা দূর চিন্তা।
এ হামলায় সাউদী আরবের তেল উৎপাদনের অর্ধেক পুড়ে গেছে। এর ফলে দৈনিক ৫৭ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। সউদী আরবের তেল শিল্পের প্রাণকেন্দ্রের দুর্বলতা প্রকাশিত হয়েছে। যেখান থেকেই এ হামলা হোক, যেই তা চালাক, এটা এক পরিস্থিতি পাল্টে দেয়া ঘটনা। এ অঞ্চলে এক মারাত্মক সঙ্ঘাত চলছে। উপসাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা হচ্ছে। ইয়েমেন যুদ্ধে পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। অন্যদিকে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইরাকে শিয়া শিবিরগুলোতে বিমান হামলা হয়েছে।
সউদী আরব বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় বিপুল বিনিয়োগ করেছে। ইউরেশিয়া গ্রুপের আয়হাম কামাল বলেন, সউদী আরবের গুরুতর সমস্যা হচ্ছে তার কাঠামোগত। তাদের বিমান প্রতিরক্ষার অধিকাংশই প্রচলিত হুমকি মোকাবেলার জন্য। ড্রোনের মত অসামঞ্জস্যপূর্ণ বিমান হামলার জন্য তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল।
এ হামলা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সচেতন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে যে সে প্রয়োজন হলে কৌশলগত পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ গড়ে তুলতে প্রস্তুত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সউদী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে কথা বলেছেন। ক্ষতির রিপোর্টের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। সউদী আরবের তেলের পূর্ণ উৎপাদন শুরু করতে কি করতে হবে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অন্যদিকে সউদী আরব কিভাবে এ হামলার জবাব দেবে, যেমন ইয়েমেনে হুথিদের বিরুদ্ধে সামরিক হামলা দ্বিগুণ করবে কিনা, তাই এখন দেখার বিষয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।