মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
অধিকৃত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিয়ে গত ৫ আগষ্ট থেকে উপত্যকাটি অবরুদ্ধ করে রেখেছে ভারত। সেখানকার স্বাধীনতাকামী জনগণ যাতে প্রতিবাদ করতে না পারে সেজন্য চালানো হচ্ছে অকথ্য নির্যাতন। পুরো এলাকাটি দখল করে রেখেছে ভারতের সেনাবাহিনী। স্থানীয়দের মধ্যে যাকে সন্দেহ হচ্ছে তাকেই ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যাচ্ছে তারা। ভয়ে মুখ খুলছেন না সাধারণ মানুষ। পুরো উপত্যকায় বিরাজ করছে ভয় ও আতঙ্কের পরিবেশ। আর্ন্তজাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি’র প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন ভয়াবহ চিত্র।
অধিকৃত কাশ্মীরের একটি গ্রামেই প্রায় চব্বিশজন তরুণ সেনাবহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন শোপিয়ান জেলার হিরপোরা গ্রামের ২৬ বছর বয়সী আবিদ খান। এএফপি’কে সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় তার হাত দুইটি প্রচন্ড কাঁপছিল। তিনি জানান, ১৪ আগস্ট মাঝরাতের পরে এসেছিল সেনারা। তাকে তার ভাইসহ চোখ বেঁধে টেনেহিচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তার ভাইয়ের কিছু মানসিক সমস্যা রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘বাইরে রাস্তার উপরেই আমার ভাইকে বিদ্যুতের শক দেয় তারা। চরম যন্ত্রণায় কাতরাতে শুনেছি আমি তাকে।’ এএফপি’র সংবাদদাতাকে নিজের বাহুতে, পায়ে এবং নিতম্বে বিদ্যুৎ শক দেয়ার চিহ্ন দেখিয়েছেন আবিদ খান। এ বিষয়ে তিনি জানান, চাওগাম সেনা ক্যাম্পে নেয়ার পর সেনারা তাকে উলঙ্গ করে হাতের কবজি ও পা বেঁধে রড দিয়ে পিটিয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পের মেজর বলেছে যে, আমি নাকি হিজবুল মুজাহিদিনের রিয়াজ নাইকুকে আমন্ত্রণ করেছিলাম। আমি বারবার বলেছি যে, এটা সত্য নয়। এরপর তারা আবার আমার পুরুষাঙ্গ ও ক্ষতস্থানগুলোতে বিদ্যুতের শক দেয়। তাদের একজন বলে, আমাকে পুরুষত্বহীন করে দেয়া হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘ভোরে ছেড়ে দেয়ার পর দাঁড়ানোর মতো শক্তিও আমার ছিল না এবং এরপর ১০ দিন ধরে আমি বমি করেছি। ২০ দিন পরে কোনরকমে চলাফেরা করতে পেরেছি আমি। এখনও ঠিকমতো খেতে পারি না। আমার স্ত্রী যে কক্ষে ঘুমায়, সেখানে আমি যাই না...এ ধরনের নির্যাতনের চেয়ে গুলি খেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো।’
স্থানীয় অধিবাসীরা অভিযোগ করেছেন যে, কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করার পর সেখানকার জনগণের মধ্যে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করার জন্যই এই নির্যাতন চালানো হচ্ছে। গত মাস থেকে কাশ্মীরে যে অবরুদ্ধ অবস্থা বিরাজ করছে, মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদের উত্থান ঠেকাতেই এটা করা হয়েছে বলে দাবি করছে নয়াদিল্লি। কাশ্মীরে সামরিক বাহিনীর কোন ধরনের বর্বরতা চালানোর কথা ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অস্বীকার করেছেন। একইভাবে অস্বীকার করেছেন কাশ্মীরে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল রাজেশ কালিয়াও। এএফপি’কে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস-বিরোধী যে সব অভিযান চালানো হচ্ছে, এগুলো পেশাদার পন্থায় ও জন-বান্ধব প্রক্রিয়ায় চালানো হচ্ছে। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ করা হচ্ছে, সেগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’
কিন্তু হিরপোরা এলাকার বাসিন্দারা বলেছেন যে, তারা রাতে প্রায়ই সেনাবাহিনীর ক্যাম্প থেকে আর্তচিৎকার শুনতে পান। আরো তিনজন গ্রামবাসী এএফপিকে বলেছেন যে, তাদের উপরও নির্যাতন করা হয়েছে। শোপিয়ানের গ্রামগুলোর প্রায় দুই ডজন তরুণ একই নির্যাতনের কথা জানিয়েছে।
গুগলুরা গ্রামের ২১ বছর বয়সী ওবাইদ খান জানান, ২৬ আগস্ট আইডি ও ফোন ফেরত পেতে তাকে ওই একই ক্যাম্পে যেতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আট সেনা আমাকে রড দিয়ে দীর্ঘসময় ধরে পেটায়। আমাকে ছেড়ে দেয়ার আগে তারা আমাকে বলে আমার গ্রামে যারা পাথর ছুঁড়েছে, তাদের নাম নিয়ে যেন পরের বার ফেরত আসি।’
পিঞ্জুরা গ্রামের স্থানীয় এক কর্মকর্তা সাজ্জাদ হায়দার খান এএফপিকে বলেন, তিনি ১৮০০ মানুষের একটি তালিকা দেখেছেন, যাদেরকে শুধু শোপিয়ান থেকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। দক্ষিণ কাশ্মীরের চারটি জেলার একটি এই শোপিয়ান। শোপিয়ান শহরে তার বাড়ি থেকে কিছু দূরেই পাঁচজন সেনাসদস্য কালো পোষাকে ফিরে এসেছে। তাদের বাহুতে লেখা ‘কমান্ডো’ এবং তারা অ্যাসল্ট রাইফেল বহন করছে। প্রত্যেক বাড়িতে গিয়ে তারা অধিবাসীদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছে। পিঞ্জুরা কর্মকর্তা খান বলেন, ‘আমি যতটুকু বলতে পারি কেউ যাতে বিক্ষোভ করতে না পারে, সে জন্য এই চাপ দেয়া হচ্ছে। এবং এতে কাজ হয়েছে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।