মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
সউদী আরবের তেল শিল্পের কেন্দ্রস্থলে দুটি বড় শোধনাগারের ড্রোন হামলার কারণে দেশটির তেল উৎপাদন অর্ধেকেরও বেশি কমে গেছে। শনিবার ভোররাতে তারা ওই দুটি শোধনাগারের হামলা চালিয়েছে বলে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা জানিয়েছে। এ ঘটনায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় আইপিও অর্জনে আরামকো’র পরিকল্পনা ধাক্কা খেয়েছে। পাশাপাশি বিশ্ব বাজারে তেলের মূল্য বেড়ে যাওয়ার এবং মধ্যপ্রাচ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা আরও তীব্র হয়ে উঠার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। খবর রয়টার্স।
সউদী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মনসুর আল-তুর্কী নিশ্চিত করেছেন যে কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি, তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণটি অস্পষ্ট। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এবং বøুুমবার্গ জানিয়েছে, এই হামলার পরে সউদী আরব তার তেল উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনছে, যাকে বিদ্রোহীরা দেশটির অভ্যন্তরে তাদের অন্যতম বৃহত্তম আক্রমণ বলে আখ্যায়িত করেছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি সউদী আরামকোর বিবৃতি অনুযায়ী, এই হামলায় দেশটির দৈনিক তেল উৎপাদন ৫৭ লাখ ব্যারেল হ্রাস পাবে। এটি বিশ্বের মোট তেল সরবরাহের পাঁচ শতাংশেরও বেশি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। এ হামলার আগেও বেশ কয়েকবার সউদী তেল শিল্পক্ষেত্রে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছিল হুতিরা, কিন্তু এবারেরটিই সবচেয়ে বেপরোয়া হামলা; এতে দেশটির তেল উৎপাদন ক্ষমতার অর্ধেকেরও বেশি সাময়িকভাবে পঙ্গু হয়ে থাকবে। সউদী আরব বিশ্বের বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারী দেশ। প্রতিদিন দেশটি ৭০ লাখ ব্যারেলেরও বেশি তেল রপ্তানি করে থাকে।
সম্প্রতি রাষ্ট্র পরিচালিত আরামকো ২০২০ বা ২০২১ সালের মধ্যে তার ৫% শেয়ার বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা করেছিল। এর মাধ্যমে তারা প্রায় ১০ হাজার কোটি ডলার সংগ্রহ করতে পারত যা ইতিহাসের বৃহত্তম আইপিও থেকেও চারগুণ বেশি। এ হামলার ফলে তাদের সেই পরিকল্পনা বড় একটি ধাক্কা খেল।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে যে দু’টি শোধনাগারেরই আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। বিবিসি জানিয়েছে, আরামকোর বৃহত্তম তেল প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র আবাকাককে প্রথমে হামলা করা হয়েছিল এবং দ্বিতীয় ড্রোন হামলা নিকটবর্তী খুরাইস তেলক্ষেত্রে চালানো হয়। দেশটি প্রতিদিন ৯৮ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল উৎপাদন করে। খুরাইস তেলক্ষেত্রে বিশ্বের প্রায় ১% এবং আবাকাকে ৭% তেল উৎপাদদিত হয়। হুতি গোষ্ঠীর এক মুখপাত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, তারা ১০ টি ড্রোন দিয়ে এই হামলা পরিচালনা করেছে।
এদিকে, হুতিরা হামলার দায় স্বীকার করলেও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এ হামলায় দায় পুরোপুরি ইরানের ওপর চাপিয়েছে। ‘হামলাটি ইয়েমেন থেকে হয়েছে এমন কোনো প্রমাণ নেই’ বলে এক টুইটে দাবি করেছেন তিনি। ‘উত্তেজনা হ্রাসের সব আহ্বান সত্বেও ইরান এখন বিশ্বের জ্বালানি সরবরাহের ওপর নজিরবিহীন হামলা চালালো,’ বলেছেন পম্পেও। বার্তা সংস্থা এসপিএ-র ভাষ্য অনুযায়ী, ‘এই সন্ত্রাসী আক্রমণের মোকাবিলা ও এর সঙ্গে লড়াই করার’ সামর্থ্য রিয়াদের আছে বলে সউদীর ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিল সালমান টেলিফোনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র হামলার নিন্দা করেছে এবং সউদী আরবের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ওয়াশিংটন রিয়াদের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত বলে ট্রাম্প ক্রাউন প্রিন্সকে জানিয়েছেন বলে ভাষ্য হোয়াইট হাউসের। দরকার হলে তাদের কৌশলগত পেট্রলিয়াম মজুত থেকে তেল খালাসে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি মন্ত্রণালয়। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিকভাবে পদক্ষেপ নেয়া দরকার হয়ে পড়লে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার সঙ্গে তার মন্ত্রণালয় কাজ করবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন জ্বালানিমন্ত্রী রিক পেরি।
উল্লেখ্য, ইরান সমর্থিত ইয়েমেনের শিয়া হুতি বিদ্রোহীরা রাজধানী সানাসহ দেশটির অধিকাংশ এলাকা দখল করে নেওয়ার পর ২০১৫ সালে দেশটির গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে সউদী নেতৃত্বাধীন সুন্নি জোট বাহিনী। তারপর থেকে সউদী জোট ইয়েমেনে ব্যাপক বিমান হামলা শুরু করলে হুতিরা মাঝে মাঝে সউদী ভূখন্ডে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে তার জবাব দিচ্ছিল। কিন্তু স¤প্রতি সউদীতে হামলা চালাতে তারা ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি ড্রোন ব্যবহার শুরু করে। গত কয়েক মাস ধরে হুতিরা সউদী আরবের বিভিন্ন শহর ও স্থাপনায় একের পর এক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এসব হামলার জন্য সউদী আরব আঞ্চলিক প্রতিদ্ব›দ্বী ইরানকে দায়ী করেছে, তেহরান অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ইরান হুতিদের অস্ত্র সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ রিয়াদের, তবে হুতিরা ও তেহরান উভয়েই এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।