পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
[পূর্ব প্রকাশের পর]
১৯৯০ সালের এক পরিসংখানে দেখা যায় ডাকসু, বাকসু, ইউকসু, বামেকসু, ঢামেকসু সহ বাংলাদেশের ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদে ছাত্রদল পূর্ন প্যানেলে জয়ী হয়। ৩১৮টি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এবং কলেজে পূর্ন প্যানেলে জয়ী হয় ছাত্রদল। বেগম খালেদা জিয়ার প্রত্যক্ষ তত্ত¡াবধানে, জিয়াউর রহমানের দেখা স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে ছাত্রদল আজ অনেকটা পথ পাড়ি দিয়েছে। এর মধ্যে কিছু ছাত্র নেতা রাজনীতি থেকে হারিয়ে গিয়েছেন। কিছু নেতাকে আমরা হারিয়েছি চিরতরে। কিছু নেতা দল ছেড়ে অন্য দলে যোগ দিয়েছে। কিছু নেতা প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। আবার অনেকে বহুদূর এগিয়েছেন। মোট কথা শহর কিংবা প্রত্যন্ত গ্রামে যে যেভাবেই ছাত্রদল শুরু করেছেন এবং রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন তার ওপর ভিত্তি করে প্রায় প্রত্যেকে ধারাবাহিকভাবে রাজনীতিতে প্রোমশন পেয়েছেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিসহ দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী ফোরাম স্ট্যান্ডিং কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন চট্টগ্রামের সাবেক ছাত্রনেতা, সাবেক এমপি প্রতিমন্ত্রী সালাউদ্দিন আহমেদ। ১৯৮৫-৮৬ সালের কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন শামসুজ্জামান দুদু। ডাকসু নির্বাচন, সাবেক এমপি, কৃষক দলের সাধারণ স¤পাদক, বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইসচেয়ারম্যানের মত বিভিন্ন পদ অলংকৃত করেছেন । ১৯৮৭-৯০ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন ডঃ আসাদুজ্জামান রিপন। তিনি যেমন তুখোড় বক্তা তেমনি ক্ষুরধার তার লেখনী। সচিত্র দেশকাল, প্রেসক্রিপশনের মত জনপ্রিয় পত্রিকা প্রকাশের পর ইংরেজী পত্রিকা ‘দ্য ডিপ্লোম্যাট অ্যান্ড গেøাবালÑএর স¤পাদক। বেশ কিছুদিন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিলেন তিনি। বর্তমানে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির বিশেষ স¤পাদক এবং বিএনপি ডিপ্লোম্যাট কোরের অন্যতম সদস্য। ১৯৯০ থেক ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় আহŸায়ক ছিলেন আমান উল্লাহ আমান। ৮৭-৯০ পর্যন্ত সাধারণ স¤পাদক। ৯০ সালে ডাকসুর ভিপি, অষ্টম জাতীয় সংসদ সদস্য, সাবেক স্বাস্থ্য ও শ্রম প্রতিমন্ত্রীর পর বর্তমানে তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা। ’৯২ সালের শেষের দিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ স¤পাদক হন এম ইলিয়াস আলী। সাবেক এমপি ইলিয়াস আলী বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক স¤পাদক থাকাকালীন ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল গুম হন। আজো তার সন্ধান মেলেনি। ছাত্রদল প্রতিষ্ঠিত হবার পর ১৯৯২ সালের ১৬ মে প্রথমবার সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তবে ছাত্রদলের আভ্যন্তরীন অবাঞ্ছিত গ্রæপিংয়ের শিকার হয়ে মাত্র ৪মাস ১৬ দিন ছিলেন এই পদে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাবেক ভিপি, অনলবর্ষী বক্তা, এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে পঙ্গুত্ব বরণকারী দু:সাহসী,পরীক্ষিত ত্যাগী নেতা রিজভী আহমেদ ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। বর্তমানে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ন মাহাসচিব এবং দলের দফতরের দায়িত্ব পালন করছেন। বিএনপির এই দুঃসময়ে রিজভীর ভ‚মিকা অনন্য, অভাবনীয়। ১৯৯৩ থেক ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপিতর পদে ছিলেন ফজলুল হক মিলন। সাবেক এমপি এবং বর্তমানে বিএনপি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক স¤পাদক। ১৯৯৬-এর শষের দিকে ছাত্রদলের সভাপতির পদে আসেন শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত সভাপতির পদে ছিলেন তিনি। ৩ বারের সাবেক এমপি, বতমানে বিএনপির প্রচার স¤পাদক। একই কমিটিতে সাধারণ স¤পাদক ছিলেন হাবীব-উন-নবী সাহেল। ২০০০ সালে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি। বর্তমানে বিএনপির যুগ্ন মহাসচিব এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিনের সভাপতি। হাবীব-উন-নবী সোহেল রংপুর থেকে বিএনপি এমপি প্রাথী ছিলেন। মরহুম নাসিরুদ্দিন পিন্টু ১৯৯৮-২০০০ পর্যন্ত ছিলেন সাধারণ স¤পাদক এবং ২০০০ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ছিলেন কেন্দ্রীয় সভাপতি। সাবেক এমপি নাসিরুদ্দিন পিন্টু বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক এবং ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক থাকা অবস্থায় ৩ মে ২০১৬ রাজশাহী কারাগারে মারা যান। ২০০৩-২০০৪ ছাত্রদলের সাধারণ স¤পাদক এবং পরবর্তিতে সভাপতি ছিলেন আজিজুল বারি হেলাল। ২০০৫-২০০৯ পর্যন্ত শফিউল বারী বাবু ছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ স¤পাদক। বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি। ২০০৯-২০১২ পর্যন্ত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। বর্তমানে যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ স¤পাদক। এ কমিটির সাধারণ স¤পাদক ছিলেন আমীরুল ইসলাম খান আলিম। গত সংসদ নির্বাচনে আলিম সিরাজগঞ্জে বিএনপি থেকে নমিনেশন পেয়েছিলেন। ২০১২ থেকে ২০১৫ এর শুরু পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল কাদের ভুইয়া জুয়েল বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ স¤পাদক। এই কমিটির সাধারণ স¤পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিব এবং পরবর্তিতে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাজীব আহসান এবং সাধারণ স¤পাদক আকরামুল হাসান এখন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা। ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সভাপতি-সেক্রেটারী পদে ছিলেন এমন কয়েক জনের কেউ রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়, কয়েক জন মারা গিয়েছেন, কেউ দল ছেড়েছেন, কেউবা দেশ ছেড়েছেন। শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় ছাত্র নেতাই নন, মহানগর, জেলা-উপজেলা, থানা পর্যায়ে ছাত্রদল করে মন্ত্রি-এমপি হয়েছেন অনেকে। ওয়ার্ড কমিশনার, উপজেলা, ইউনিয়ন, জেলা চেয়ারম্যান হয়েছেন। ২০১৮ সংসদ নির্বাচনের বিএনপি প্রাথী তালিকা বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রত্যক্ষ ছাত্রদল করা ৯২ জন নমিনেশন পেয়েছিলেন। বর্তমানে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির বিশাল একটি অংশজুড়ে রয়েছেন সাবেক ছাত্রদল নেতারা। যুবদল, সেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, জাসাস, শ্রমিক দল, কৃষক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ। তবে এ কথা সত্যি, বিগত কিছুদিন হয় ছাত্রদল তার আগের গৌরব, সংগ্রামী মর্যাদা অনেকটা হারিয়েছে। এর জন্য প্রশাসন, আওয়ামীলীগ যতটা না দায়ী তার চেয়ে বেশী দায়ী ছাত্রদলের অনৈক্য। অভ্যান্তরীন গ্রæপিং। পকেট কমিটি। আর বার বার এ অভিযোগের আঙ্গুল উঠেছে বিএনপি ছাত্র বিষয়ক স¤পাদকের দিকে। যোগ্যদেরকে বঞ্চিত করে কোটারী সার্থে অযোগ্যদেরকে সামনে আনা হয়েছে। যে কোন ছাত্র সংগঠন তার মূলদলের নেতা তৈরির রিক্রুটিং সেন্টার হিসাবে কাজ করে। ছাত্রদল তার ব্যাতিক্রম নয়। আর এ কথা মাথায় রেখে নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্রদলের ৬ষ্ঠ কাউন্সিল হওয়ার কথা রয়েছে। যদিও ভোটাভুটির দুই দিন আগে অকস্মাৎ আদালতের মাধ্যমে কাউন্সিল অনুষ্ঠানে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, তবে নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন বন্ধ করা যাবে না। আদালতকে ব্যবহার করে একটি দলের সাংগঠনিক কর্মকাÐ নিয়ন্ত্রন করার এই ঘটনা নজিরবিহীন। বিএনপির শীর্ষ নেতা যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচনের যে অবাধ পরিবেশ তৈরী করে দিয়েছেন। তা রুখে দেয়া যাবে না। অছাত্র, বিবাহিত, ৩৫ উর্ধ ছাত্র নেতাদেরকে দলের অন্যান্য শাখায় দায়িত্ব দিয়ে সকলের গ্রহণযোগ্য প্রকৃত ছাত্র প্রতিনিধিদের হাতে তিনি ছাত্রদলের নেতৃত্ব দিতে চান। এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা করেছিল দলের একটি ক্ষুদ্র অংশ, কিন্তু শীর্ষ নেতার দৃঢ়তার সামনে শেষ পর্যন্ত তারা রণেভঙ্গ দিতে বাধ্য হয়। শীর্ষ নেতার বিশেষ দূরদর্শীতা আর বিচক্ষণ রাজনৈতিক ক্যারিশমায় ছাত্রদলে ফিরে আসছে টগবগে তারুণ্যের জোয়ার। অতীতে পদের জন্য কথিত ‘বড় ভাই’ এবং কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতাদের পিছনে পিছনে বা বাসা-বাড়ীতে নিয়মিত হাজিরা দিতে হতো ছাত্রনেতাদের। টাকা পয়সা নজরানা দিতে হতো। আর এখন তৃণমূলে ছুটছে পদ প্রত্যাশী সবাই। মাঠের অভাজন নেতা-কর্মীদের দ্বারে দ্বারে ধর্না দিচ্ছে। এটা ছাত্রদলের রাজনীতিতে এক নতুন অভিযোজন। তৃণমূলের সাথে নিবিড় সংযোগ ছাড়া ছাত্রদলের নেতাদের রাজনীতি করা কঠিন করে দিলেন দলের শীর্ষ নেতা। সকল গ্রæপ ও কথিত বড় ভাইদের অচলায়তন ভেঙ্গে আগামী দিনের কঠিন লড়াইয়ে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিতে পারবে, আশা করি এমন নেতাকে বেছে নিবেন ছাত্রদলের কাউন্সিলারগণ। যিনি কোন অঞ্চলের নয় গোটা বাংলাদেশের ছাত্রদলের প্রকৃত নেতা হতে পারবেন। যিনি পুনরুদ্ধার করতে পারবেন ছাত্রদলের হৃত গৌরব। আসন্ন কাউন্সিলের মাধ্যমে যে নেতৃত্ব দায়িত্ব পাবেন, আশা করা যাচ্ছে তাদের হাত ধরেই ছাত্রদল তার সংগ্রামী সোনালী অতীত দ্রæত ফিরে পাবে ইনশাআল্লাহ। (সমাপ্ত)
লেখক : সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক সহকারী প্রেস সচিব, সাবেক ছাত্রদল কর্মী
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।